Skip to main content

অনির্বাণের অসুবিধে

দেখুন। লাইফ ইস আনফেয়ার। এই স্টেটমেন্টটা ভীষণ অপ্টিমিস্ট। জীবন তার চেয়েও বহুগুণ মন্দ কিছু একটা। মন্দ বলতে এগরোলে আপেল সেদ্ধ পুরে দেওয়ার মত গণ্ডগোলে। নির্মম।
 
চারিদিকে কোথাও ভালো কিছু নেই। গভর্নমেন্ট ধান্দাবাজ, অপোজিশন ধান্দাবাজি করার চান্স না পেয়ে বিপদজনক ভাবে খুনে। ও'দিকে নর্থ পোল গলে গলে বেহালায় নেমে আসছে। ধর্ম বিশ্বাসে মারছে, ডেমোক্রেসি কোরাপশানে ঝোলাচ্ছে আর কমিউনিজম ছেনি হাতুড়ি দিয়ে ক্যানভাসে ঠোকাঠুকি করে যাচ্ছে। সোশ্যালিজম ক্যাপিটালিজম অমুকিজম তমুকিজম; যে কোনও ইজময়ের কনসেপ্ট মানেই ' কিউপিডের পৈতে ' গোছের ভাঁওতা।
 
এই ছাব্বিশ বছর বয়সে এ'টা নিশ্চিত বুঝেছি। সব নষ্ট। চারদিকের যা কিছু সমস্তই একটা দলা পাকিয়ে আসা মিথ্যে। কাদার স্প্রেড মাখানো স্যান্ডুইচ। 

ওহ। আমি অনির্বাণ। অনির্বাণ মিত্র। আর শুনুন, গেলাস ওই হাফ ফুল হাফ এম্পটি সব বাজে কথা। এ হল এক গেলাস বিষ মেশানো সরবত; মিন্ট ফ্লেভার। মিন্ট অবশ্য আমার অত্যন্ত প্রিয়।
 
তবে মিন্ট ফ্লেভারের আলোচনা এখন থাক। জিন্দেগী যে কী মন খারাপ করা একটা ব্যাপার, সে'টা নিয়ে বলছিলাম।  যেমন ধরুন এই যে এখন। আমি চমৎকার এই কফি শপে বসে। ঝকঝকে, অল্প আলো। আশপাশে সুখী  মানুষজন আর তাদের স্টেরিলাইজ করা গল্পের ফিসফাস। এই ছিমছাম পরিবেশে আমার টেবিলেই যত যন্ত্রণা। চেয়েছিলাম এস্‌প্রেসো, দিয়ে গেল আইরিশ কফি। ক্লাস সেভেনে বাবার কাছে কুকুরছানা চেয়েছিলাম, বাবা ক্যারম কিনে দিয়েছিল। সেই থেকে আমি কোনও কিছু রিফিউজ করি না। আইরিশ কফিই সই। তবে এর চেয়েও খারাপ ব্যাপার হল সুমনার আসার সময় হয়ে গেছে। আর তার চেয়েও বুক ফাটা ব্যাপার হলো এই যে ওকে বলতে হবে "দিস ইজ নট ওয়ার্কিং আউট"।
 
সুমনা। সুমনা চ্যাটার্জি।
একমাত্র এই একজনকে দেখেই মনে হয়েছিল বসন্ত মানেই কলকাতার ঘামাচি নয়। সুমনার চোখে একটা ধার আছে। ব্লেড-গোছের ধার না। মুচমুচে দামী ভিজিটিং কার্ডে দিয়ে চামড়ায় যেমন আঁচর কাটা যায়, কিছুটা তেমন। সুমনা অফিসে জয়েন করেছিল হিউম্যান রিসোর্স টিমে। হিউম্যান রিসোর্সের মানুষদের ঠিক সুমনার মত হওয়া উচিৎ। ও আমায় "চাকরী নট" বললেও মনে হবে আমার মগজের ঘিলু আনন্দ স্নান সেরে হয়ে টপটপ করে সুগন্ধি মোমের মত গলে হৃদয়ের পাত্রে জমা হচ্ছে। সুমনা ছুটি কাটা যাওয়ার মেল দিলেও মনে হবে সে মেলের প্রিন্ট নিয়ে শেষের কবিতার পকেট এডিশনে মলাট দিই।
সুমনা। সাজে, পোশাকে, হাসিতে, গালের টোলে, লিপস্টিকের রঙে, "ওহ রিয়েলি" বলা সাজানো আগ্রহে পরিপূর্ণ। টলমল। ভরাট অথচ বাড়তি নয়। আলাপী কিন্তু ঢলে পড়া নয়।
সুমনাকে দেখলেই মনে হয় চট করে গিটার ক্লাসে ভর্তি হই। মনে হয় নভেম্বর পড়লেই লিপ বাম ব্যবহার করব। বারোটা কিউবিকেলের ও'পাশে সুমনা বসে। তবু সে বসে আছে; এই জানাটুকুতেই গালিবের বাস।
 
সুমনা। ওকে দেখে মনে হয়েছিল সমস্তটাই একটা উন্মাদ প্রজাতির লম্ফঝম্প নয়। সিমেট্রি আছে জীবনে, পুরোটাই বেওয়ারিশ নয়।
 
সে’টুকুই ঠিক ছিল। একটা প্রবল নিশ্চিন্দি। অখাদ্য কাজ করেও, লো আই কিউ টিম মেম্বার্সদের হজম করেও অফিস আসাটা ভালো লাগতে শুরু করেছিল। কোথা থেকে, কী ভাবে, কেমন করে, কী সাঙ্ঘাতিক নিয়তির বাগাডুলি স্ট্রোকে যে এমনটা হয়ে গেল সে’টা বলা দায়।  আমার আর সুমনার প্রেম। আমাদের প্রেমে পড়া একদমই উচিৎ হয়নি। না। মানে। সুমনার আমার প্রেমে পড়া একদমই উচিৎ হয়নি। সুমনা ঋত্বিক ঘটক হয়ে ‘মেজবৌ’ ডাইরেক্ট করতে মাঠে নেমে পড়েছিল। ভুলটা ওর। আমার ভেসে যাওয়াটা যুক্তিযুক্তই ছিল।
 
সুমনা বলে কথা। আর। যেমন হয়। রোমহর্ষক ভাবে যেমনটা হওয়া উচিৎ। তেমনটাই হয়েছিল। সুমনার ফাঁকা ফ্ল্যাটে। ওল্ড মঙ্ক আর কাবাবের পর।
 
মানে। ভাবুন। সুমনা আমায় আদর করতে শুরু করেছিল। সুমনা, আমায়। আদর করতে শুরু করেছিল। সোফা। ভীষণ নরম সোফা। সুমনার এলোমেলো চুল। পারফিউম। ঘরের ম্যাটম্যাটে লালচে আলো। ওই যে চুমুটা। ঠিক যেন আমি অ্যাস্ট্র্যাল প্রজেকশনে নিজের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের দেখছি, দেখছি আমরা চুমু খাচ্ছি। একটা পরমাণু বিস্ফোরণ আর আমি ওপেনহাইমারের কেত নিয়ে ফিসফিস করে বলছি “নাউ আই অ্যাম বিকাম ডেথ, দ্য ডেস্ট্রয়ার অফ ওয়ার্ল্ডস”।
 
সুমনা ইনিয়েবিনিয়ে টপের বোতামগুলো খোলার সময় মনে হচ্ছিল নদী হয়ে যাই। পৃথিবী পরিবেশ অর্থনীতি; এ সমস্ত কিছুর প্রতিই ইতিউতি ভালো লাগা রাখা যায় বলে মনে হচ্ছিল। টপ সরে যেতেই সেই দুর্বার আভাসটা ভেসে এসেছিল। সমস্ত বাঁক খাঁজ ছাপিয়ে উঁকি মারছিল সেই উল্কি। ব্রেসিয়ারে অবশ্য বেশিরভাগটাই ঢাকা থাকায় বোঝা যাচ্ছিল না।  অসংলগ্ন জাপটাজাপটি আর আদরে খসে পড়া ব্রায়ের হুকে আর সুমনার আবরণহীনতায় তোলপাড় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখনই স্পষ্ট হল সুমনার বুকের বাঁদিকের ট্যাটুটা চে গুয়েভারার। ফের অ্যাস্ট্রাল প্রজেকশন, তবে এবার আমি একা নই।
 
-   চে? আপনি চে?
-   তাতে কী?
-   তাতে কী মানে? এ’সব কী!
-   আপনার নাম কী?
-   অনির্বাণ! আর আপনার নাম চে না হয়ে হওয়া উচিৎ ছিল বাঁশ।
-   প্রবলেমটা কী আপনার অনির্বাণ? আর আপনার বডি পড়ে আছে সোফায় ওই মেয়েটার কোলে, এ’দিকে আপনি এসে আমার সাথে গল্প করছেন?
-   শখ করে এসেছি ভেবেছেন?
-   তাহলে এসেছেন কেন?
-   সুমনার বুকে...।
-   আপনার গার্লফ্রেন্ড?
-   হ্যাঁ, তো?
-   গার্লফ্রেন্ডের বুক নিয়ে আমার সাথে আলোচনা করতে চাইছেন কেন?
-   মাইরি। ওর বুকে আপনার ট্যাটু।
-   ওহ। তো?
-   বুকে মানে, কাব্যিক সেন্সে বুকে নয়। হৃদয় টিদয় নয়। বুকে। লেফ্‌ট ব্রেস্টে আপনি।
-   আমি স্টাইল স্টেটমেন্ট। আইকন অফ রিভোলিউশন।
-   তাতে কী? আপনি ফুল নন, মাছ নন, চাঁদ নন, কবিতার লাইন নন; মোদ্দা কথা আপনি ট্যাটু হিসেবে ব্রেস্ট-ফ্রেন্ডলি নন। 
-   এ কী! কেন?
-   দাড়ি। আমার এখন এক মনে সুমনাকে আদর করার কথা। অথচ আমি দেখছি দাড়ি। চোখের সামনে কনস্ট্যান্ট দাড়ি দেখলে আমি আদরে মন দিতে পারব না।
-   বাট দ্যাট ইজ সিলি।
-   সিলি? হে ভগবান! ওহ সরি, আপনি বোধ হয় এথেয়িস্ট।
-   আমি জানি না। আমি আপনার ফিগমেন্ট অফ ইম্যাজিনেশন।
-   রাইট। কিন্তু ওই ট্যাটুটা রিয়ালিটি। ওর বুকে হাত দিলেই আপনার গাল ফুলে উঠছে। ম্যাগোহ্‌।  
-   এহ্‌।
-   আচ্ছা, এমন ব্রা আছে যার বাঁ দিকের কাপ না খুলে ডান দিকেরটা খোলা যায়? মানে, চাইলেও ডান দিকেরটা খোলা যাবে না! পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড গোছের কিছু হবে...।
-   আপনার প্রবলেম কি আমার দাড়ি নিয়ে? আমি ক্লীন শেভেন হলে সমস্যা হত না?
-   না না না। দাড়ি না থাকলে আপনি এত টিশার্টিও হতেন না।
-   আমার ছবি লোকে ট্যাটু করায় দাড়ির জন্য? রিভোলিউশনের জন্য নয়?
-   আরে ধুর মশাই, সুমনা হিউম্যান রিসোর্সে কাজ করে। রিভোলিউশন বলতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বোঝে।
-   যাহ্‌ শালা।
-   সরি টু হার্ট ইওর ফিলিংস গুয়েভারাবাবু। কিন্তু দিজ ইজ বিগার ট্রাবল। আমার বডি ওখানে সুমনাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টা করছে অথচ আমি আমার নিজের মন হয়ে নিজের বডিকে ফেলে সোফা থেকে দশ হাত দূরে এসে আপনার সাথে গল্প করছি।
-   আই নো। আই আন্ডারস্ট্যান্ড।
-   উফফ! দুনিয়াটা এত অখাদ্য কেন বলতে পারেন? সুমনাকে আদর করা বৈপ্লবিক ব্যাপার হওয়া উচিৎ ছিল আমার জীবনে। মাঝখান থেকে...ধুস।
 
সেই থেকে সুমনার সাথে প্রত্যেক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে সেই একই ঘটনা। দাড়িয়াল এসে আমায় সুমনার থেকে দূরে টেনে নিয়ে গল্প করবে। জীবনটাই বোগাস। ননসেন্স। সেক্সকে ভয় পেতে শুরু করেছি। এ যেন প্রত্যেকবার বিরিয়ানির বাক্স খুলেই দেখা এক মুঠো মুলোকুচি ছড়ানো রয়েছে। উফফ!
 
**
 
এক্সেলেন্ট। ফাটাফাটি। সুমনা আসছে না। এবং সে’টা জানলাম চারটে কফির পরে। এসএমএসে।
 
“অনি, সরি। আজ আসছি না। কালকের সিনেমার প্ল্যানও ক্যান্সেল। আসলে আমার বারবার শুধু মনে হচ্ছে তুমি আমার সাথে ইন্টিমেট হতে চাও না। আমার বারবার মনে হয় তোমার মন অন্য কোথাও পড়ে থাকে। আই ক্যান নট লিভ উইথ দ্যাট”।
 
-   কার এসএমএস ভায়া?
-   যে আসছে না তাঁর।
-   উহ, সরি।
-   সরি আবার কী! কিন্তু একটা কথা বলুন চেবাবু, আজকাল আপনি কি সুমনা না থাকলেও উদয় হবেন সামনে?
-   আই থিঙ্ক সো।
-   কফি খাবেন?
-   আমি আপনার কল্পনা। কফি খাই না।
-   আমি কেন এলাম জানেন অনির্বাণ?
-   কেন?
-   পাশের টেবিলের মেয়েটার পার্স পড়ে যাওয়ায় ও সে’টা তুলতে ঝুঁকেছিল। আপনি ও’ভাবে না তাকালেই পারতেন।
-   ডিসগাস্টিং। আপনি।
-   আনফরচুনেটলি। আপনি না চেয়েও চে কে পাবেন, যখনই আপনি...।
-   ডিসগাস্টিং টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি। আমার জীবন...।
-   বরবাদ। আর এক কাপ খাবেন নাকি উঠবেন এখন?

http://www.bongpen.net/2016/12/blog-post.html

Comments

shromana chatterjee said…
unplugged dustumi ;)

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু