Skip to main content

মোহর


এক পিস্‌ জয়নগরের মোয়া হাতে বারান্দার ইজিচেয়ারটায় বসেছিলেন বিপ্লববাবু।
মরশুমের প্রথম। অফিসের আশুতোষ সমাজপতি অফার করেছিলেন লাঞ্চে। রাত্রে বাতাসে ঠাণ্ডা বাড়বে, তখন মোয়ায় কামড় বেশি আরামদায়ক। তাই লাঞ্চ টেবিলে তৎক্ষণাৎ মুখে না দিয়ে, মোয়াখানা টিফিন বাক্সে ঢুকিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন বিপ্লববাবু।
ডাল, পেঁয়াজকলি ভাজা আর ডিমের অমলেট দিয়ে রাতের খাওয়া সেরে গায়ে শাল জড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। হাতে টিফিন বাক্স থেকে বের করে আনা মোয়া।
মোয়াটার দিকে অনেকক্ষণ একমনে তাকিয়ে ছিলেন বিপ্লববাবু। কেমন একটা ভালোলাগা ভর করছিল যেন তাঁর মনে। যেমন নিটোল চেহারা মোয়াটার, তেমনই সুবাস। আহা। কামড় বসাতে মন বসলো না বিপ্লববাবুর। কামড় বড় জান্তব একটা ব্যাপার। উগ্র। ঝাপটাঝাপটি।
রাতের ফুরফুরে হাওয়ায় পৌষের ধার রয়েছে বেশ। আহা। এই তো সময় মোয়ায় স্বাদে ভেসে যাওয়ার। মরশুমের প্রথম মোয়া। আহা। এ জয়নগরের মোয়াটি বড় নরম। বড় কমনীয়। আদুরে। চুমুর আশ্রয়ে নিলেন আশুতোষ, আগ্রাসন বলতে শুধু আলতো জিভের ডগা। ***
পরের দিন অফিসে কিছুতেই মন বসছিল না বিপ্লববাবুর। মোয়াটা খাওয়া হয়নি গতকাল। আর হয়ত খেতে পারবেনও না। মোয়াটা আর পাঁচটা মোয়ার মত নয়। ও মোয়ায় মায়া আছে। একবাক্স মোয়া আজ কিনে ফিরবেন অবশ্য, খাওয়ার জন্য। কিন্তু মোহরকে তিনি খেতে পারবেন না। গতকালের ওই জয়নগরের মোয়ায় স্পন্দন টের পেয়েছেন বিপ্লববাবু, মোহর নামটাও নিজের অজান্তেই দিয়ে ফেলেছেন। একটা চুমুর জন্য ছটফট করছিলেন তিনি। বিয়েথা সংসার আজ পর্যন্ত করা হয়ে উঠল না, বাড়ি ফেরার আগ্রহও বিশেষ থাকে না। অফিসের পর ক্লাবে রামি খেলে রাত করে বাড়ি ফেরাটাই তার কাছে নিয়ম। কিন্তু আজ মোহরের টানেই বোধ হয়, অফিস থেকে হাফ সিএল নিয়ে লাঞ্চের পরেই বেরিয়ে পড়লেন বিপ্লববাবু।
*** সাত দিন কেটে গেছে। মোহরের চেহারার জৌলুস খুব একটা কমেনি। সকালে একটা চুমু, অফিস থেকে ফিরে একটা চুমু। নিয়ম করে। মোহরটা বড় আদুরে , বড় নরম, বড় তুলতুলে। বড্ড সাবধানে রাখতে হয় ওকে। গত তিনদিন অফিস কামাই করেছেন বিপ্লববাবু। *** মোহরের গায়ে গন্ধ জমতে শুরু করেছে। কিন্তু এত সহজে পচন ধরা তো উচিৎ নয়। একটানা ফ্রীজে রাখা থাকে। বিপ্লববাবুর ঘুমখাওয়া নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। মোহরের কিছু হবে না তো? মোহর যদি না থাকে? মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করে বিপ্লববাবুর। ***
"স্যার, ইন্সপেক্টর হালদার বলছি! বডি নামিয়েছি। সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলেছিল গামছার প্যাঁচে। এই গতকাল ভোর চারটে নাগাদ। আজ্ঞে হ্যাঁ। ছবিটবি তুলে নিয়েছি। ফোরেনসিকও কাজে লেগে গেছে। চিঠি? সুইসাইড নোট? নাহ্‌, তেমন কিস্যু পাওয়া যায়নি স্যার। ক্লু? তেমন প্রামাণ্য কিছু নয়, তবে ইয়ে; ওই মানে- যে ফতুয়া ভদ্রলোকে পরে ছিলেন, তার বুক পকেটে একটা পচা জয়নগরের মোয়া পাওয়া গেছে। থ্যাবড়ানো, গায়ে কালচে ছোপ আর রীতিমত দুর্গন্ধযুক্ত; এতটাই পচা। অমন রামপচা মোয়া বুকে ভদ্রলোক কী করছিলেন, সে'টা একটা মিস্ট্রি।

Comments

Shromana Chatterjee said…
a to sanghatik prem moshai.. :-o
apnar vabnake salute.. :-D
Unknown said…
শরদিন্দুর ভুতের গল্পগুলোর কথা মনে করো। কোনো গল্পে কিছু জোনাকি, কোনো গল্পে চিরুনিতে আটকে থাকা এক গাছা চুল কি একটা ফুল যে প্রকৃতির নিয়মেই ঝরে পরেছে, তাদের নিয়ে কি অপূর্ব অশরীরী ব্যঞ্জনা তৈরী করেছিলেন তিনি। আমি তার কপি করতে বলছি না। কিন্তু ভাবনাটা নিয়ে ওই সাধারণ মোয়াতে বহুরকম অসাধারণত্ব আরোপ করে এক অলৌকিক কাহিনীও সৃষ্টি করা যেতে পারে।কিন্তু তোমার তো তা উদ্দেশ্য নয়। তুমি একাকীত্বর চরম প্রকাশকেই দেখাতে চেয়েছে। তবে আমার মতে এই লেখন শৈলী আসাধারন ।
Unknown said…
শরদিন্দুর ভুতের গল্পগুলোর কথা মনে করো। কোনো গল্পে কিছু জোনাকি, কোনো গল্পে চিরুনিতে আটকে থাকা এক গাছা চুল কি একটা ফুল যে প্রকৃতির নিয়মেই ঝরে পরেছে, তাদের নিয়ে কি অপূর্ব অশরীরী ব্যঞ্জনা তৈরী করেছিলেন তিনি। আমি তার কপি করতে বলছি না। কিন্তু ভাবনাটা নিয়ে ওই সাধারণ মোয়াতে বহুরকম অসাধারণত্ব আরোপ করে এক অলৌকিক কাহিনীও সৃষ্টি করা যেতে পারে।কিন্তু তোমার তো তা উদ্দেশ্য নয়। তুমি একাকীত্বর চরম প্রকাশকেই দেখাতে চেয়েছে। তবে আমার মতে এই লেখন শৈলী আসাধারন ।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু