Wednesday, December 14, 2016

বালিশবাবুর অফিসে - ৩

- তাহলে আপনি ভগবান। 
- সে কথা আমি নিজের মুখে বললেই বা কী, না বললেই বা কী। 
- সত্যিটা কী?
- এভারেস্ট আড়াই মিটার বাড়িয়ে দিচ্ছি। পরের বছরই। 
- ভগবান?
- পেঙ্গুইনদের কিছু জেনেটিক অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার। যা গরম পড়ছে আজকাল। শ'দেড়েক বছরের মধ্যেই কিছু একটা করে ফেলতে পারি। 
- তাহলে আপনিই। 
- আমিই। আনফরচুনেটলি। 
- আনফরচুনেটলি কেন?
- থ্যাঙ্কলেস জব! তা ছাড়া, ম্যাসিভ ভল্যুম। ম্যাসিভ। কিছুতেই গ্রিপে আনা সম্ভব নয়। 
- ভগবান মানুষের মত দেখতে?
- না। মানুষ ভগবানের মত দেখতে। 
- মানুষ শ্রেষ্ঠ বলে?
- আপনি জানেন আমি কী সাংঘাতিক ধরণের ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগি?
- রিয়েলি?
- মানসিক অবসাদ। সিজোফ্রেনিয়া। অম্বল গলা জ্বালা। কী নেই? ঘেন্না হয় নিজেকে। আমার মেজাজ সর্বক্ষণই খারাপ থাকে। কিন্তু সে'বার যখন সুইসাইডাল হয়ে কয়েক দিন কাটিয়েছিলাম, তখনই মানুষ সৃষ্টি করেছিলাম। নিজের মত করে। সুইসাইডাল। 
- আপনি আত্মহত্যার কথা ভেবেছেন?
- অনবরত। এখনও মাঝে মাঝেই মনে হয়...মনে হয় নিজেকে কোতল করি। কিন্তু। ওই। আনফরচুনেট। আমি ভগবান। ও'টা আমার দ্বারা পসিবল না। এত অসহায় লাগে...। 
- অসহায়? ভগবান হয়ে আপনার অসহায় লাগে?
- ভগবান বলে কি মাথা কিনে নিয়েছি নাকি? আমার নিজেকে কেরোসিনে ছেড়ে দেওয়া মাছ মনে হয় মাঝেমাঝে। 
- কিন্তু আপনার এত ক্ষমতা...। 
- লেবার মানুষের আবার ক্ষমতা। মহাকাশকে স্টেডি রাখো রে, 'খানে প্রাণের সাপ্লাই, ওখানে মহামারি...তবে...।
- তবে?
- লজ্জার কথা আর কী বলব, আমি বড়জোর সতেরো পারসেন্ট কাজ করে উঠতে পারি। বাকিটা র‍্যান্ডম চান্সের খেলে যা হওয়ার হচ্ছে। 
- তিরাশি পারসেন্ট আপনার কন্ট্রোলের বাইরে?
- চাইলে কন্ট্রোল করতে পারি কিন্তু অম্বলটা আজকাল এত ট্রাবল দিচ্ছে। তাছাড়া ওই, থ্যাঙ্কলেস জব। গা জ্বলে যায় প্রতি মুহূর্তে। 
- কর্ম-ফল ম্যানেজ করাটা বোধ হয় খুব টাফ। 
- দেখুন। কনটেক্সটটা বোঝার চেষ্টা করুন। গ্র্যাভিটি সামলাতে হচ্ছে। অণু পরমাণুর অঙ্ক এক চুল এদিক ওদিক হতে দেওয়া যাবে না। জেনেটিক মিউটেশন। ইভোলিউশন। এ সমস্ত কিছু ম্যানেজ দিতে হচ্ছে। এর বাইরেও কাজের অভাব নেই। তা সে'সব জরুরী কাজই ১৭%য়ের বেশি করতে পারছি না। কর্ম-ফলটল আবার কী?
- সে কী, পাপ করলে পাপের শাস্তি পেতে হবে, এই সিম্পল ইকুয়েশন ইজ নট ওয়ার্কিং?
- আপনার বাড়াবাড়ি স্পীডে চালানো মোটোরসাইকেলের চাকার তলায় একটা কুকুরছানা চাপা পড়ে মারা গেল। তক্ষুনি আপনার একটা বুলডোজারের নীচে চাপা পড়া উচিৎ। কিন্তু আপনি পড়বেন না। টেক দ্য হিন্ট।
- অমন সোজা সাপটা হিসেব না হলেও...।
- কুকুরছানা চাপা দিয়ে মেরে ফেলার জন্য কারুর প্র্মোশন মিস করায় আমার কোনও ভূমিকা নেই। সে’টা কর্মফল নয়।
- ওহ্‌। আই সি। নাহ্‌, আমি ভেবেছিলাম প্রসেসটা অনেক বেশি কমপ্লিকেটেড।
- কমপ্লিকেশনের কিস্যু নেই। সমস্তটাই হেল-ব্রেকিং-লুজ গোছের। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে, যে যার মত পারছে কুড়িয়ে নিচ্ছে। ডিপ্রেসিং। অন্ধকার। বদ গন্ধ চারিদিকে। আমি আবার গলায় আঙুল দিয়ে বমি করতে পারি না। ।
- পরিস্থিতি এতটা খারাপ?
- যন্ত্রণা। যন্ত্রণা।
- উপায়?
- গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়িয়ে দিয়ে দেখি। একটু যদি বেটার লাগে।
- সে’টা স্যাডিস্ট হবে তো।
- আত্মহত্যার প্রবণতা আর স্যাডিজম। রুমালি রুটি আর মুর্গির চাপের মত।
- হুঁ। আর কী কী স্যাডিস্ট কাজকর্ম করে থাকেন?
- খোকাখুকিদের বেসুরো বাপ দিয়ে থাকি।
- হুঁ?
- খোকাকে কোলে নিয়ে বাপ খড়খড়িয়ে গেয়ে যায় “আমার হৃদয়, তোমার আপন হাতের দোলে...”। খোকা অন্তর থেকে ক্ষয়ে যায়। বাবা হামলে পড়ে ধরেন “জীবনপুরের পথিক রে ভাই”। খোকা ককিয়ে কেঁদে ওঠে। বাবা বিটকেল মেজাজে ধরেন “ওই যে দেখছি আবছায়াটাই লাগছে ভালো”, কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত খোকা ডিফেন্স মেকানিজম ফলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বাবা ভাবেন “বাহ্‌, কী চমৎকার গাইলাম! গানের মিহি আরামে খোকা ঘুমিয়ে পড়লো”। এ’দিকে খোকা ঘুমিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচালে। গানের গুঁতো বড় গুঁতো।  যার তেমন বাপ আছে, সেই জানে।
- ভগবানবাবু...আপনি...আপনি...।
- কী হল বালিশবাবু? শরীর খারাপ লাগছে?
- ওই ভদ্রলোকের গলা থেকে অমন করাতের সুর আপনিই বের করেন?
- হ্যাঁ মানে...ওই যে বললাম...আমি বড় ক্লান্ত...কী করলে যন্ত্রণা কমবে ভেবে পাই না...।
- তাই বলে আমার এই সাত মাস বয়সে আমায় অমন গান শুনতে হবে? এর চেয়ে মাথার ওপর একটা ধূমকেতু ফেলে দিতে পারতেন!
- যন্ত্রণা। যন্ত্রণা। যন্ত্রণাই এক মাত্র রিয়ালিটি বালিশেন্দ্রকুমার।
- ধ্যাত্তোর। এথেইস্ট হওয়ার অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটা দিন। ট্রিপ্লিকেটে ফিল আপ করতে হবে কি?

1 comment:

Shromana Chatterjee said...

vogoban biswase balish chapa pore galo to... :(