Skip to main content

চিন্তার ব্যাপার


লাঞ্চ হয়ে গেছে দেড়টার মধ্যেই। এই সময়টা দেবুবাবু একটু জিরিয়ে নেন। অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা জর্দা-পান, একটু আনন্দবাজার, অ্যাকাউন্টস’য়ের সামন্তের সঙ্গে চাট্টি কথা, একটা গোল্ডফ্লেক। অতঃপর ফের টেবিলে ফিরে এসে  ফাইল মন্থন।

বারান্দাটা চওড়া। কিন্তু ভারি স্যাঁতস্যাঁতে। ব্রিটিশ আমলের বাড়ি কি না। সতের  বছর আগে জয়েন করেছেন দেবুবাবু; কিন্তু এর মাঝে অফিসে একবারও চুনকাম হয়েছে বলে মনে পড়ে না। পাঁচতলার এই বারান্দা থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর ব্যস্ততা দেখতে দেখতে দিব্যি সময় কেটে যায়। আনন্দবাজারের খেলার পাতায় পৌঁছে , পান চিবোনো শেষ করে এবং গোল্ড ফ্লেক ধরিয়ে; দেবুবাবু টের পেলেন যে সামন্ত ছোকরা এখনও আসেনি। আজ সামন্ত কামাই করেনি, কারণ গুপ্তা অ্যান্ড কোম্পানির ফাইলটা নিজের হাতে পৌঁছে দিয়েছিল সকাল বেলা।

হরিদেব সামন্ত বয়েসে দেবুবাবুর চেয়ে বছর দশেকের ছোট। বছর খানেক আগে জয়েন করে, আলাপ হয় অফিস ক্যান্টিনে। সেই থেকে দুজনের মধ্যে গুরুশিষ্য গোছের সম্পর্ক। অফিস পলিটিক্স থেকে বস ম্যানেজ করার উপায়; সমস্ত ব্যাপারেই সামন্তকে গাইড করে থাকেন দেবুবাবু। তাছাড়া প্রতিদিন দেড়টা থেকে দুটো; অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুজনের আড্ডাটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

পৌনে দুটোতেও যখন সামন্ত এলে না; তখন দেবুবাবুর খটকা লাগলো। সিগারেট বারান্দার কোনায় ছুঁড়ে ফেলে এগোলেন অ্যাকাউন্টসয়ের দিকে। সামন্তর টেবিল নজরে আসতেই দেখলেন যে সামন্ত মুখ গুঁজে ডায়েরিতে কিছু লিখে চলেছে।

চিন্তায় পড়লেন দেবুবাবু। ছোকরা কি অসময়ে কাজ করা আরম্ভ করলে নাকি ? ম্যানেজমেন্ট লাই পেয়ে যাবে যে। পই পই করে দেবুবাবু ছোকরাকে বুঝিয়ে চলেন যে অফিসে আসার পরে আধ ঘণ্টা , লাঞ্চের পর আধ ঘণ্টা আর ছুটির আগের আধ ঘণ্টা; কাজ করতে নেই, কাজ করতে নেই, কাজ করতে নেই – করলে  কেরানী জাতের অমঙ্গল। বেশ কথা শুনে চলা ছেলেই তো মনে হত। সেই ব্যাটা এই অসময়ে মন দিয়ে কলম পিষছে দেখে গা পিত্তি জ্বলে গেল দেবুবাবুর।
দুড়দাড় করে এগিয়ে গেলেন সামন্তের টেবিলের দিকে।

-      কই হে সামন্ত, ভারি কাজ করছ দেখছি। বড়বাবু সুড়সুড়ি দিয়েছেন নাকি ?
-      না দেবুদা, অফিসের কাজ নয়।

-      আহ: , বেশ। নিশ্চিন্ত হলাম। তা এত মন দিয়ে কি লেখাপড়া হচ্ছে ভায়া ? সোশ্যালিস্ট পোয়েট্রি-টোয়েট্রি নাকি?

-      ইয়ে না, তা নয়।

-      তবে? দুপুরের আড্ডা ছেড়ে টেবিলে বসে কলম চালাচ্ছ, জরুরি কিছু তো বটেই। পরকীয়া প্রেম পত্র নাকি ?

-      না দেবুদা। আসলে বউ দু মাস পর বাপের বাড়ি থেকে ফিরছে আগামীকাল। বলে রেখেছে মাসকাবারি বাজার করে না রাখলে আমার কপালে দুঃখ আছে। তা, এর আগে বাজার যতবার করেছি বউই ফর্দ করে দিয়েছে। সে চলে যাওয়ার পর হারধনের মেসেই খাওয়া দাওয়া চালিয়েছি এ দুমাস। সেই সকাল থেকে বসে রয়েছি ডায়রি খুলে দেবুদা। চাল, মুগ ডাল আর বাতাসা ছাড়া কিস্যু মাথায় আসছে না। এদিকে ফি মাসে বউ ইয়া লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দেয়। কি উপায় দেবুদা? যদি মাসকাবারি ম্যানেজ না করতে পারি তাহলে দু মাসের জন্যে এবার আমায় গা ঢাকা দিতে হবে।

-      হুম, মিনিবাসের ভিড় আর মাসকাবারি; এই করেই যৌবনের বাপের নাম খগেন হয়ে যায় হে। তাই তো বলি; আরথ্রাইটিস গেড়ে বসার আগে হিমালয়ে চলে যাও ভায়া। আজকের বাজারে; মাসকাবারির চেয়ে মাধুকরী ইজ আ ঢের বেটার অপশন।  

Comments

হক্‌ কথা।
হক্‌ কথা।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু