Skip to main content

নামকরণ

লালু রেগে কাই । রাগবে নাই বা কেন ? পল্টু ব্যাটা একেবারে ইস্টুপিড। টিফিনের পরের প্রথম ক্লাসে বাংলার স্যার অমন দরাজ গলায় “ কন্যাকুমারীর রকমারি মনিহারী” কবিতাটি পাঠ করছিলেন; ক্লাসময় স্যারের আওয়াজ গমগম করে খেলা করছিল, গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল লালুর। অমনি পল্টে ব্যাটা এমন একটা বিরাশি সিক্কার হাঁচি ঝাড়লে যে সব মাটি। ছন্দপতন ঘটায় স্যার ফের ফিরে গেলেন সমাসে। রাগে মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিল লালুর। এই বাংলার স্যার নতুন এসেছেন, মাঝে মাঝেই স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। ক্লাসের বাকি ছেলেরা ফচকেমি করে যে এই নতুন স্যারকে দাঁড়িলেস-রবীন্দ্রনাথ বলে ডাকে, তাতে লালু ভারি মর্মাহত হয়। ইয়ে, এই মর্মাহত শব্দটা লালু নিয়মিত ব্যাবহার করছে আজকাল, সেনটেন্সে বেশ জোর আসে তাতে।

লালু্র ভারি অপূর্ব লাগে নতুন বাংলা স্যারের কবিতা। স্যারের দেশ  বেড়ানোর নেশা আছে, আজ হিমালয় তো কাল কেরল। আর ঘুরে এসেই রোমাঞ্চকর সব কবিতা লেখেন। সে সব লেখায় যেমনি আবেগ, তেমনি তার ভাষা, তেমনি ছন্দ- ভারি হাইক্লাস। কবিতাগুলো লালুর মনের মধ্যে বায়স্কোপ চালিয়ে দেয়; এমন রিয়েল লেখা সেই সব।


লালুর ছোটকা বাড়ি থেকে অল্প বয়েসে পালিয়ে যান, লালুর অবশ্য বয়েস তখন অনেক ছোট। তাঁর তোরঙ্গ ঘেঁটে একটা চমৎকার কবিতার ডায়েরি পাওয়া যায় বহু বছর পরে। অতএব সাহিত্য’র প্রতি ন্যাক লালুর ব্লাডেই আছে। বাপ-মা যতই তাকে ইঞ্জিনিয়ার করতে চান না কেন, লালু বেশ জানে সে সব তার দ্বারা হওয়ার নয়। ক্লাস নাইনের জ্যামিতির চোটে এ বয়েসেই মাথায় কেমন টাক টাক ভাব আসছে। আর দাঁড়িলেস-রবীন্দ্রনাথ-স্যারের ইনফ্লুয়েন্স গাড় হওয়ার পর থেকে লালু ঠিক করেই নিয়েছে,হয় লিটারেচারে যাবে নয়তো মেজপিসের মত বড়বাজারে আচারের ব্যবসা ধরবে।

পল্টুর উৎপাতে বাংলা স্যার কবিতা থামিয়ে ফের পড়ানোতে মন দিয়েছিলেন। লালু ঠিক করলে আজ ক্লাসের শেষে স্যারের কাছে হত্যে দিতেই হবে। আসলে এই নতুন কবি-স্যারকে এতই ভক্তি করে লালু যে আজ পর্যন্ত ঠিক কাছে ঘেঁষবার সাহস হয় নি। কিন্তু স্যার যে তাকে অনবরত ইন্সপ্যায়ার করে চলেছেন, সেটা বেশ টের পায় লালু। স্যারের মত পকেটে ছোট ডায়েরি রাখতে আরম্ভ করেছে সে। অবিশ্যি সেই ডায়েরিতে যে কি লেখা যায়, তা নিয়ে লালুর ধারনা এখনই স্পষ্ট নয়।

ক্লাস শেষ হতেই লালু ছুটলে স্যারের পিছন পিছন। বারান্দার শেষ প্রান্তে এসে হাঁক দিলে
-      “ স্যার, এক মিনিট”
-      “ আরে লালমোহন যে, কিছু বলবে ?”
-      “ স্যার, ইয়ে মানে। আমি মানে...আমার আপনার কবিতা খুব ভালো লাগে স্যার”
-      “ হেঃ, ঠ্যাং পুল করছ না তো ?”
-      “ না...নো...মানে নেভার টি নট স্যার। কি বলছেন স্যার। আপনার ওই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে নিয়ে লেখাটা, চোখে জল এসে গেস্‌ল স্যার। ওই যে স্টার্টটা। ‘অয়ি কাঞ্চনজঙ্ঘে’ বলে যে স্টার্টটা ছিল স্যার। ভারি মুভিং। আজকের যে চাঁদনী রাত নিয়ে কবিতা বলছিলেন স্যার, শুনে গায়ে কাঁটা দিয়েছে স্যার। নেহাত পল্টুটা এমন বেরসিক ভাবে হেঁচে দিলে...”
-      “ তোমার এতটাই ভালো লেগেছে লালমোহন ? এথিনিয়াম ইন্সটিটিউশনে এই প্রথম কেউ আমার কবিতাকে অ্যাক্‌নোলেজ করলে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার কাব্যরস যেন সীতা, যুগের রাবণ তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছ ? আর এই একা তুমি আছ লালমোহন, যে জটায়ুর মত আমার কবিতার সীতা মাইয়াকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেছ। আই অ্যাম গ্রেটফুল টু ইউ”
-      “ স্যার আশীর্বাদ করুন যেন গোটা জীবন জটায়ু হয়ে থাকতে পারি”

লালমোহন গাঙ্গুলি কে বুকে টেনে নিলেন শ্রী শ্রী বৈকুণ্ঠ মল্লিক।  

Comments

এটা ঘ্যাম হয়েছে!
Unknown said…
shanghatik prequel. gaye kaaNta dichhe moshai.
Joy Forever said…
সাংঘাতিক লেখেন আপনি। আপনাকে তো কাল্টিভেট করতে হচ্ছে মশাই!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু