Skip to main content

মেজাজ ও স্নান



নিজের ওজন বুঝে নেওয়া উচিৎ সকলের। সরি স্যার। ওজন বলতে ভুঁড়ি বা মানিব্যাগের পরিধি মাপতে বলছি না। মেজাজের গভীরতা দিকে নজর দিচ্ছি।

গুরুজনেরা বলে গেছেন যে মেজাজটাই আসল রাজা। মেজাজ গড়বড়ে হলে, পকেটে টু পাইস্‌ থাকলেও আপনার ইচ্ছে করবে এইবেলা এলুমিনিয়ামের বাটি হাতে খানিক ভিক্ষে করে আসি। কাজেই মেজাজকে খোকার হাতের মোয়া করে রাখার বিশেষ প্রয়োজন।

মুস্কিল হচ্ছে, মেজাজ মাপার যন্ত্র বলতে কিছু নেই। নিজের মেজাজটা যে রাজকীয় না এলেবেলে;সেটা না বুঝলে চলবে কেন। তবে, ইয়ে...উপায় আছে। মেজাজকে আঁক মেপে চিনে নেওয়ার উপায় আছে। কি ভাবে ? তা বলতেই এ পোস্টের পাঁয়তারা।

মেজাজ মাপার একটা জলবৎ-তরলং উপায় হল  অতি সহজ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া –

“ আপনার এখন কি ভাবে স্নান করতে ইচ্ছে করছে ?

কউন বনেগা ক্রোরপতির ঢঙে এখানেও থাকবে অপশন্‌স।

প্রথম অপশন - স্নান করতে ইচ্ছে করছে না ? অসময় মনে হচ্ছে  ? স্নানে অভক্তি ? অর্থাৎ - গেঁজে আছেন। মেজাজ চটকে চ হয়ে রয়েছে। আপনার মনের সাথে তুলনা করে করলাকে রসগোল্লা বলা যেতে পারে।

দ্বিতীয় অপশন - কর্পোরেশনের নল থেকে তির্‌তিরিয়ে বেরিয়ে আসা জলে ভরা এলুমিনিয়ামের বালতি। প্লাস্টিকের মগের বার দুই ঝপঝপ। সাবান-টাবানের বাড়াবাড়ির মানে হয় না। গামছা দিয়ে কড়া ভাবে গা মুছে বেরিয়ে আসা।
অর্থাৎ - আপনার মেজাজ ভারি বাড়াবাড়ি রকমের ব্যস্ত। হয়ত সামান্য বেরসিক।

তৃতীয় অপশন - খোলা শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে গা মেলে দিতে ইচ্ছে করছে বুঝি ? মাথায় শ্যাম্পু, গায়ে লাক্স, কণ্ঠে শ্যামল মিত্র ?
অর্থাৎ -আপনি প্রেমময় মেজাজে ভাসছেন। আহা:। আহা:। আহা:। এ মেজাজের আপনিকে গোটা পৃথিবী চুমু খেতে চাইবে।

চতুর্থ অপশন - পুকুরে ডুব-স্নান।
অর্থাৎ -হয় কবিতা লিখবেন নয়ত এডভেঞ্চারে বেরবেন। সহজ ভাষায় বললে, আপনার মেজাজ চাইছে চমকিলা কিছু করতে। “ থাকবো না আর বদ্ধ ঘরে / ল্যাজ নাড়বো চিত্ত ভরে” গোছের ফুর্তিবাজ ভাব।  

পঞ্চম অপশন - সমুদ্রে লাফঝাঁপ
অর্থাৎ -ফুর্তি ভালো, বেআক্কেলে আহ্লাদ ভালো নয়। মেজাজে লাগাম দিন নয়ত কপালে দুঃখ আছে।

ষষ্ঠ অপশন - সর্ষের তেল গায়ে রগড়ে সামান্য দৈহিক কসরত। তারপর নারকোল তেলে চুপচুপে করে নেওয়া মাথা। এরপর গামছা আর মার্‌গো সাবান হাতে এসে দাঁড়ানো পাতকুয়ো তলায়। ঝপঝপ ঠাণ্ডা কুয়োর জল মাথায়, ফুরফুরে হাওয়া গায়ে, মুখে গুনগুন ভুল ভর্তি রবীন্দ্রনাথ।
অর্থাৎ - হে রাজন, আপনার মেজাজই শ্রেষ্ঠ। আপনার মন এখন আলেকজান্ডার আর সমুদ্রগুপ্তের মিলিত দীপ্তিতে পরিপূর্ণ।   জাগতিক সুখ দুঃখের অনেক উপরে ভাসছে আপনার হৃদয়-সাম্রাজ্য। আপনি শুধু ভোগ করবেন না, উপভোগ করবেন প্রতিটি কানাকড়ি। আপনিই সুন্দর।  

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু