Skip to main content

দুর্গা পুজো ইজ হিয়ার


দুর্গা পুজো ইজ হিয়ার।
ক্যালকাটা ইজ অন ফায়ার।

পুরনো পুজোবার্ষিকী সমস্ত নামানো হয়ে গেছে। ফ্রম শুকতারা টু আনন্দমেলা টু দেশ।

দেবীপক্ষ শুরু হওয়ার পর থেকেই পেট-ক্লেন্সিং তথা কন্ডিশনিং শুরু। মিনিমাম মটন, নিয়মিত অ্যান্টাসিড। যাতে পুজো এলে ‘জয় মা’ বলে খাসি-মুর্গির বন্যায় নিজের গা ভাসিয়ে দেওয়া যায়।

গড়িয়াহাট থেকে একটা পাঞ্জাবি আর একটা ফতুয়া, নিউ মার্কেট থেকে হাফ শার্ট কেনা হয়ে গেছে। খাদিম থেকে এক জোড়া জব্বর চটি কেনা হয়েছে যা পায়ে দিয়ে খিচুড়ি ভোগ বিতরণও করা যাবে আবার অনায়াসে পার্ক স্ট্রীটে গিয়ে কেতাবি হন্টনও চালানো যাবে।  

সিদ্ধি খেয়ে বেহেড নেচে নিজেকে বেইজ্জত করব না, এ প্রতিজ্ঞা অন্য বছরগুলোর মত এবারেও করেছ। ফিঙ্গারস্‌ ক্রস্‌ড।

অফিসে ক্যাসুয়াল লিভ অ্যাপ্লাই করে বসকে বেদম তোষামোদ শুরু করে দিয়েছি। একাদশী টু লক্ষ্মী পুজো ট্রিপ টু পুরী। জগন্নাথ এক্সপ্রেসের বার্থ অবিশ্যি দেড় মাস আগেই বুক করে রাখা হয়েছে।

আমেরিকা থেকে মাকু আসছে, ব্যাঙ্গালোর থেকে হুলো। অতএব সপ্তমী টু বিজয়া দুপুর-বিকেল আড্ডার টাইম টেবিল ফিক্সড।

প্ল্যান কষতে বেশ মশগুল। এই রবিবারের দুপুরেও ভাত-ঘুমের ফাঁকে নবমীর জলখাবারের মেনুটা গুছিয়ে ভেবে নিচ্ছিলাম। এমন সময় স্বপ্নে দেবীর আবির্ভাব। এক্কেবারে গতবারের বালক সঙ্ঘের প্রতিমার মত আদল। আমি নমস্কার করায় দেবী কিছুটা ভেবেড়ে গেছিলেন বটে; দশ হাতে প্রতি-নমস্কার তো আর চাট্টি-খানি ব্যাপার নয়। আমিও স্মার্টলি বললাম “ প্লিজ ব্যস্ত হবেন না দেবী, বলুন কী করতে পারি আমি ?”

দেখলাম দেবীর মুখে গভীর চিন্তা।

বললেন “ হ্যাঁ রে বাবা, আমি চাট্টি দিনের জন্যে আসি। আর আমার বাহানায় তুই গান বাজনা, আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, থিম পুজো...শুধু এই সব প্ল্যান চালিয়ে যাস ? গতবার দেখলাম তুই বেমালুম লুচি আলুর দম গিলে অঞ্জলি দিলি! এটা কি তুই ঠিক করছিস বাবা ?”

দেবীর চিন্তার দিকটা বুঝলাম। তাঁকে বুঝিয়ে বললাম “ প্লিজ ডোন্ট টেক ইট আদার ওয়াইজ দেবী। আপনি চান আনন্দ ধারা বইয়ে দিতে ভুবনে। আলোর বেণু প্লে করতে। উই আর রাইট ইন সিঙ্ক উইথ দ্যাট স্পিরিট। এত ধর্ম দেশে মা, আর এত ঠাকুর অবতার; ভক্তি-টক্তি না ডিসপ্লে করে উপায় কী? এক মাত্র তুমি আর তোমার পুজোর চারটে দিনই আছে মা; যখন পাবলিক একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এই কটা দিনই কেবল অফিসের বস আমাদের মাথা চিবোয় না বরং আমরা সামান্য পাঁজরা কলিজা চিবিয়ে প্রাণ জুড়োই। এক মাত্র আপনিই আছেন যিনি পাবলিককে ধর্মীয় হুকুম-বাজিতে চাবকান না। আপনার পুজোই হল আদত সেকুলার পুজো দেবী, মনের পুজো, আনন্দের পুজো, একটু জিরিয়ে নেওয়ার পুজো। তাই তো আমরা আপনাকে এত ভালোবাসি। দেবী, আপনি শুধু লুচি-গেলা অঞ্জলিই দেখলেন ? আপনি দেখেননি গত বছর বিজয়ার দিন, আপনার চলে যাওয়ার দুঃখে আমি সিদ্ধি খেয়ে কেমন হাউ হাউ করে কেঁদে আকুল হলাম ?  সুনেত্রার নামটা মুখ ফস্কে স্কিড করে বেরিয়েছিল। মাইনর স্লিপ।  মনে শুধু আপনিই জ্বলজ্বল করছিলেন, দেখেননি দেবী"? 

আমার কথা শেষ হতে না হতেই দেখলাম দেবীর মুখে স্মিত হাসি আর তার দশ খানা হাত আমার মাথার ওপর পাগড়ির মত বসে। তিনি বললেন “ ব্রাভো মাই বয়। গর্বিত আমি তোকে নিয়ে। আসলে তোকে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম তুই কোন নেকু উত্তর দিস কি না। জব্বর উত্তর দিয়েছিস। নে খোকা, বর প্রার্থনা কর”। 

দেবীর পা ছুঁয়ে বললাম “ দেবী, ধন দৌলত, ফ্ল্যাটবাড়ি বা প্রমোশনের মত মর্ট্যাল বরের জন্য মেজপিসি সন্তোষীমার ব্রত করছে। সে'সব বর চেয়ে তোমায় ছোট করব না। নবমীর সন্ধেয় ভারি ইচ্ছে ছিল পিটার ক্যাটে ডিনার সারার। তুমি বর দাও যাতে আমায় পাঁচ মিনিটের বেশি লাইনে না দাঁড়াতে হয়। নয়ত যা ভিড় হয় মা, সে তোমায় আর নতুন করে কী বলব”!

দেবী ভ্যানিশ হওয়ার আগে বলে গেলেন “ তাই হবে” ! 

Comments

chayan pahari said…
দুর্দান্ত লেখা। মন ভরে গেল।
chayan pahari said…
দুর্দান্ত লেখা। মন ভরে গেল।
Anonymous said…
ki ar bolbo..sudur bideshe boseo ek muhurter jnno peter cat er samne diye ghure elam mone holo.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু