হাওড়া ব্রিজের একটা ডাকনাম দিলেন দিবাকর।
একটা চটের থলিতে ছয় কিলো গেঞ্জি-কাপড় বয়ে দৈনিক
বড়বাজার টু হাওড়া হেঁটে আসেন তিনি। একটা বাস ধরতেই পারেন কিন্তু অফিস টাইমের দম
বন্ধ করা ভিড়কে ভীষণ ভয় পান দিবাকর। তবে তার চেয়েও বড় কারণ হচ্ছে হাওড়া
ব্রিজের মায়া। সেই সতের বছর বয়স থেকে বড়বাজার থেকে গেঞ্জি কাপড় কিনে রিষড়া’র একটা আধ-কানা কারখানায়
সাপ্লাই করে চলেছেন দিবাকর। বয়স এখন চুয়াল্লিশ। দিবাকর ভেবে দেখেছেন যে সময়মত
বিয়ে হলে তাঁর ছেলে নান্টু এখন ক্লাস এইটে পড়তো আর মেয়ে নিপা ক্লাস ফাইভে। এটাও
ভাবা আছে যে তাঁর একটা এলো-আই-সি আর দুটো ফিক্সড্ ডিপোজিট হতে পারত এ বয়েসে।
বুদ্ধি করে চললে সান্যালদের এক কাঠা জমি কিনে একটা ছোট পুঁচকে বাড়ি হাঁকানো কি
মহা-অসম্ভব কিছু কিস্সা হত ?
মুস্কিল হল, বিয়ে-থা আর করা হয়ে ওঠেনি দিবাকরের। গেঞ্জির
কাপড় সাপ্লাই দিয়ে যে দু পয়সা আসে তাতে তাঁর আর পিসিমার সংসার প্রায় চলে না
বললেই হয়। তাও ভাগ্যি পিসেমশাই আধ-ভাঙ্গা বাড়িটা রেখে গত হয়েছেন। নয়ত পিসিমা’র সাথে ষ্টেশনের বস্তিতে
গিয়ে থাকতে হত। এলো-আই-সি’র গুড়ে বালি, দিবাকরের নিজের কোনও ব্যাঙ্ক
একাউন্টই নেই।
পিসিমা’র প্রেশারের ওষুধ কিনতে
গিয়েই হিমশিম খেতে হয়। দিবাকর শেষ পাঁঠার মাংস খেয়েছিলেন চার মাস আগে, পাড়ার বাদলদা’র মেয়ের বিয়েতে।
Comments