Sunday, September 15, 2013

কারণ

দাড়ি না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ কবিগুরু হতেন। তবে গুরুদেব না থাকলে কি সফেদ ঝুলন্ত দাড়ি বাঙালি মানসে অমন দাপটে জায়গা পেত ? পেত না। কজ্‌ অ্যান্ড এফেক্ট; সঠিক ফ্রেমে না ফেললেই মুস্কিল।

এগজ্যাম্পেলটা বেশি সাদামাঠা হয়ে গেল। জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এই ফ্রেমটাই ঠিকঠাক সাজিয়ে ওঠা মুস্কিল। এই যেমন সিঙ্গারা; তার টান কি নিমকি সুলভ চামড়ায় না মখমলে আলুর পুর থেকে ?
কম্বিনেশনে ? ছোটমামা বলেন  এগুলোর কোনটাতেই নয়, সিঙ্গারার টেস্ট রয়েছে তার তন্বী খাপছাড়া-পিরামিডিও আকারে। সিঙ্গারা বর্তুলাকার হলে একটা আদত বেয়াদব খানা হত বলে মেজ-পিসেমশায়ের বিশ্বাস।

অথবা যেমন পল্টুদার চায়ের দোকানে কাঁচের বয়াম থেকে বেরা করা লেড়ো বিস্কুট। স্বাদ কি আদতে বিস্কুটে ? ধুর। আদৌ নয়। ওই বিস্কুট বাড়িতে এনে সোফায় বসে আয়েস করে খেয়ে দেখলাম; বেশ ম্যাড়মেড়ে স্বাদ। সেই লেড়োই পল্টুদার দোকানের বেঞ্চিতে বসে কামড়ে মনে হয় অমৃত। স্বাদ কি ওই পল্টুদার দোকানের চা-বেঞ্চি- কাঁচের গেলাস মাখা গন্ধে ?  

প্রেমে পড়লে বুক চিনচিন না বুক চিনচিন জাগে বলেই প্রেমিকা খুঁজে নিয়ে অঙ্কের খাতার শেষ পাতা ছিঁড়ে আমি-তুমি-আকাশ গোছের গাম্‌বুট কবিতা ?

এই সব ভাবতে ভাবতে  বেশ চমৎকার আধ ঘণ্টা কেটে গেল অনিকেতের। আজও ইন্টার্ভিউটা ঠিক হিসেব মত গেল না। অতএব বাস স্ট্যান্ডে বসে নির্বিকারে একের পর এক যাদবপুর যাওয়ার বাস দেখতে পেয়েও পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন দেখছিল না সে। অবশ্য বাড়ি ফেরার তেমন তাড়াও নেই। বাড়িতে কেউই তো আর অপেক্ষা করে বসে নেই। ভাগ্যিস মা গত মাসেই চলে গেলেন। নয়তো বেকার ছেলের খপ্পরে পরে আরও ভুগতে হত।

সবে এক মাস হল তো, মা’র কথা মনে এলে চোখ ছলছল করবেই। এমনটাই স্বাভাবিক – এটা জানে অনিকেত। চাকরি নেই বলে কতটা চোখ ছলছল আর মা নেই বলে কতটা কান্না ? অনিকেত বুঝলে এখানেও ফ্রেমটা সাজানো গোলমেলে। হয়ত এক খাবলা চমৎকার নিষ্পাপ কান্না তার বুক থেকে টেনে আনতেই মা চলে গেলেন আর আজকের চাকরিটা গচ্চা গেল; দুজনে মিলে যুক্তি করে। হয়ত। হয়ত। হয়ত।     

No comments: