Skip to main content

কারণ

দাড়ি না থাকলেও রবীন্দ্রনাথ কবিগুরু হতেন। তবে গুরুদেব না থাকলে কি সফেদ ঝুলন্ত দাড়ি বাঙালি মানসে অমন দাপটে জায়গা পেত ? পেত না। কজ্‌ অ্যান্ড এফেক্ট; সঠিক ফ্রেমে না ফেললেই মুস্কিল।

এগজ্যাম্পেলটা বেশি সাদামাঠা হয়ে গেল। জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এই ফ্রেমটাই ঠিকঠাক সাজিয়ে ওঠা মুস্কিল। এই যেমন সিঙ্গারা; তার টান কি নিমকি সুলভ চামড়ায় না মখমলে আলুর পুর থেকে ?
কম্বিনেশনে ? ছোটমামা বলেন  এগুলোর কোনটাতেই নয়, সিঙ্গারার টেস্ট রয়েছে তার তন্বী খাপছাড়া-পিরামিডিও আকারে। সিঙ্গারা বর্তুলাকার হলে একটা আদত বেয়াদব খানা হত বলে মেজ-পিসেমশায়ের বিশ্বাস।

অথবা যেমন পল্টুদার চায়ের দোকানে কাঁচের বয়াম থেকে বেরা করা লেড়ো বিস্কুট। স্বাদ কি আদতে বিস্কুটে ? ধুর। আদৌ নয়। ওই বিস্কুট বাড়িতে এনে সোফায় বসে আয়েস করে খেয়ে দেখলাম; বেশ ম্যাড়মেড়ে স্বাদ। সেই লেড়োই পল্টুদার দোকানের বেঞ্চিতে বসে কামড়ে মনে হয় অমৃত। স্বাদ কি ওই পল্টুদার দোকানের চা-বেঞ্চি- কাঁচের গেলাস মাখা গন্ধে ?  

প্রেমে পড়লে বুক চিনচিন না বুক চিনচিন জাগে বলেই প্রেমিকা খুঁজে নিয়ে অঙ্কের খাতার শেষ পাতা ছিঁড়ে আমি-তুমি-আকাশ গোছের গাম্‌বুট কবিতা ?

এই সব ভাবতে ভাবতে  বেশ চমৎকার আধ ঘণ্টা কেটে গেল অনিকেতের। আজও ইন্টার্ভিউটা ঠিক হিসেব মত গেল না। অতএব বাস স্ট্যান্ডে বসে নির্বিকারে একের পর এক যাদবপুর যাওয়ার বাস দেখতে পেয়েও পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন দেখছিল না সে। অবশ্য বাড়ি ফেরার তেমন তাড়াও নেই। বাড়িতে কেউই তো আর অপেক্ষা করে বসে নেই। ভাগ্যিস মা গত মাসেই চলে গেলেন। নয়তো বেকার ছেলের খপ্পরে পরে আরও ভুগতে হত।

সবে এক মাস হল তো, মা’র কথা মনে এলে চোখ ছলছল করবেই। এমনটাই স্বাভাবিক – এটা জানে অনিকেত। চাকরি নেই বলে কতটা চোখ ছলছল আর মা নেই বলে কতটা কান্না ? অনিকেত বুঝলে এখানেও ফ্রেমটা সাজানো গোলমেলে। হয়ত এক খাবলা চমৎকার নিষ্পাপ কান্না তার বুক থেকে টেনে আনতেই মা চলে গেলেন আর আজকের চাকরিটা গচ্চা গেল; দুজনে মিলে যুক্তি করে। হয়ত। হয়ত। হয়ত।     

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু