Skip to main content

কোলকাতা ও কোলকাতাইয়া


গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন কমলেশ। ওর গ্রাম বিহারের সুপল জেলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গ্রামের নামটি ভারি সুন্দর; নির্মলি। বছর পাঁচেক আগে এক ভয়ানক বন্যায় কোশী নদী ভাসিয়ে নিয়ে যায় তার ভিটে মাটি ও একটি বাছুর কে। স্ত্রী ও দুই শিশু কে নিয়ে তারপর সোজা কলকাতায় চলে আসেন কম্‌লেশ। বন্যার আগে কমলেশ শহর বলতে দেখেছে দ্বারভাঙ্গা ,মুজঃফরপুর ও পাটনা। তবে ভিটেমাটি হারিয়ে কমলেশয়ের মনে প্রথমেই আসে কলকাতার কথা। সে শুনেছিল যে সেখানে গতর খাটিয়ে দু পয়সা কামানোর সুযোগ প্রচুর।
  

কলকাতায় এসে বেশ বিপর্যস্ত হয়ে কিছুদিন কাটাতে হয়েছিল কমলেশ ও তার পরিবারকে। হাওড়ার বাজারে কুলি-গিরি করে প্রথম কিছুদিন গুজরান হয় তার; শহরে তার প্রথম গৃহস্থালি ফুটপাথে। তারপর হাওড়া অঞ্চলেই এক বস্তিতে একটা ঘর আর একটা কারখানায় ঠিকে কাজ পায় কমলেশ। সেই বস্তিতে তার আলাপ হয় বিহারের মধুবনি জেলা থেকে আশা রাজীবের সাথে। রাজীব ট্যাক্সি চালান। সেই রাজীবের কাছে ট্যাক্সি চালানো সেখে কমলেশ। কমলেশকে এক ট্যাক্সি ধরিয়েও দেন রাজীব। ড্রাইভিং লাইসেন্সয়ের ব্যবস্থাও হয়।  গত দু বছর ধরে ট্যাক্সি চালাচ্ছে কমলেশ।  

আমি কমলেশের ট্যাক্সিতে উঠি গতকাল। ঢাকুরিয়া থেকে রাজারহাট যাওয়ার জন্যে। সন্ধ্যের বাইপাসে ভীষণ ভিড়। সেই ফাঁকেই আলাপ জমেছিল কমলেশের সাথে। কমলেশের কাছে জানতে চাইলাম তার কোলকাতা কেমন লাগে। কমলেশ বললে;

শ্বাস বন্ধ্‌ হয়ে যেত সাহাব শুরু শুরু মে। এয়সা লাগতো কি কলকত্তা আমাকে খেয়ে যাবে। কিন্তু তারপর ধীরেধীরে দো পয়সা আসা শুরু হল। দেখলাম থোরা কষ্ট্‌ করলে, কলকত্তা রোটি দিতে কসুর করবে না। আস্তে আস্তে বাংলা ভি শিখলাম। এস্মার্ট হলাম। আমার গাঁওতে আমার জমিন ছিল কিন্তু উধর ভি গরিবি বহুত থা সাহাব। ওখানেও দু বেলা বিবি-বাচ্চা কে ঠিকঠাক খানা খিলাতে পারতাম না  তবে সচ্‌ বলবে তো কলকত্তা আমার পরিবারকে একদিন ভি ভুখা রাখেনি। এখানে কাজ করলে খানা আছে সাহাব। হামি এখন কলকত্তার আদমি আছি সাহাব। ইয়ে সোচ কে আচ্ছা লগতা হ্যায়। লেকিন মুঝে পতা হ্যায় কি আসলিয়ত মে আমি কভি কলকাত্তা কা আদমি হব না। ই ভেবে আমার কভি কভি খুব দুখ ভি হয়

কেন কমলেশ ? তোমার এমন মনে হয় কেন ?”

আমি বুঝি সাহাব, সব বুঝি। বাঙ্গালিদের কাছে আমরা বিহারিরা গঁওয়ার আদমি আছি। আমরা ভদ্দরলোকের মাফিক গান শুনি না। সিগারেট না পিয়ে খৈনী খাই। আমরা কালচার বুঝে না। আমরা শুধু খাটতে পারি সাহাব। কালচার নাহি থাকলে,  খামোখা খাটনি করে কলকাত্তাইয়া কৈসে বনবে সাহাব ?”  

Comments

animikh patra said…
কলক্ততাইয়া কৈসে বনবে সাহাব?" - আমিও এই প্রশ্নটি করলাম।
animikh patra said…
'কলকত্তাইয়া কৈসে বনবে সাহাব?' - এই প্রশ্ন আমিও রাখলাম।
animikh patra said…
'কলকত্তাইয়া কৈসে বনবে সাহাব?' - আমিও এই প্রশ্নটি রাখলাম।
Subhro said…
দারুণ। কলকত্তাইয়া কৈসে?
Subhro said…
দারুণ! কলকত্তাইয়া কৈসে?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু