Skip to main content

নিরুপম আর ব্রেকিং নিউজ



বাসের জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বসেছিলেন নিরুপম৷ দুপুরে জব্বর বৃষ্টি হয়েছিল, তাই সন্ধ্যের হাওয়ায় একটা দিব্যি ফুরফুরে ছিল। সে হাওয়া উপভোগ করতে করতে ভুলভাল লিরিক্স আর গোলমেলে সুরে ডাকটেলসের হিন্দী টাইটেল সং গুনগুন করছিলেন তিনি৷ 
"জিন্দেগী তুফানি হ্যায়, যঁহা হ্যায়, ডাকটেলস"৷ 

দুনিয়াটা সত্যিই রঙিন৷ 

এমন সময় কাঁধে টোকা৷

- শুনুন৷

- আমায় বলছেন?

- আপনার গায়ে টোকা মেরে অন্যকে কিছু বলতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?

- টিকিট কেটেছি৷ এই যে৷

- আমার কাঁধে ব্যাগ ঝুলছে? আঙুলের ফাঁকে খুচরো আছে? কথায় হাইস্পীড আছে?

- না। 

- কাজেই আমি কন্ডাক্টর নই। দরকারটা অন্য। এবং জরুরী। 

- কী ব্যাপার বলুন তো..আর আপনি কে?

- আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী।  এ'বার যা বলছি শুনুন মন দিয়ে। এই যে গান গাইছেন..।

- সরি...খুব লাউডলি গেয়ে ফেলেছি কি? কিছু মনে করবেন না ভাই..। জানি, আমার সুরতাল বোধ কিঞ্চিৎ গোলমেলে, গলা ছেড়ে গাইলে একটা সোশ্যাল আনরেস্ট তৈরি হওয়াটা আশ্চর্য নয়..। আসলে আজ হাওয়াটা এমন স্যুইট..বুঝলেন..যে একটা আমেজ..।

- না। লাউডনেস নিয়ে অসুবিধে নেই।

- ও মা। তবে?

- ও গান আপনি গাইবেন না।

- আজ্ঞে?

- গাইবেন না৷ ট্রেনেবাসে তো নয়ই৷ বাথরুমেও নয়৷ নিজের মনে মনেও নয়।

- কিন্তু কেন?

- বিদেশি কার্টুন সিরিজের গান ধরেছেন৷ তা'তে আমাদের সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

- ইয়ে, ইয়ার্কি করছেন? হা হা হা...আচ্ছা গায়ে পড়া উজবুক তো মশাই আপনি..। হে হে হে..।

- এ'টা কী দেখেছেন?

- রিভলভার! আপনি আচ্ছা উন্মাদ তো..। আর সবাই দেখুন কাণ্ড..।

- বাসের কেউই আপনার এ অসভ্যতা বরদাস্ত করবে না৷ সবাই চায় আপনাকে টাইট দিতে। 

- আরে এ'টা একটা কার্টুন সিরিজের গান..কী মুশকিল..ছেলেবেলায় শোনা..।

- দেশ তখন গোল্লায় যাচ্ছিল৷ এখন আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি৷

- আরে গানটা হিন্দীতেই..।

- কার্টুনটা ম্লেচ্ছ৷ কই, বিক্রম বেতালের টাইটেল সং তো গাইলেন না? 

- লে হালুয়া৷

**

- নিরুপম সাঁতরার বাড়ি?

- হ্যাঁ। আমি ওর বাবা৷ অমল সাঁতরা৷ কী ব্যাপার? পু..পুলিশ কেন?

- আপনার বাড়ির তল্লাশি হবে। এই যে ওয়ারেন্ট!

- সে কী! কিন্তু..খোকা বাড়ি ফেরেনি এখনও..কী ব্যাপার আগে বলুন..।

- ফিরবেনও না। উনি আপাতত আমাদের হেফাজতে৷ সরে যান।

- খোকা গ্রেপ্তার হয়েছে? সে কী! 

- দেশবিরোধী গান গেয়ে বেড়াচ্ছে আপনার খোকা। সেসেশনিস্ট কন্সপিরেসি কপচে লোক খেপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ গভর্নমেন্ট ফেলবার তাল করছে৷ 

- সে কী! 

- সরে যান৷ আমাদের কাজ করতে দিন৷

(আধঘণ্টা পর)

- অমলবাবু, আপনাকে আর আপনার স্ত্রীকেও আমাদের সঙ্গে যেতে হবে৷ ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।

- ব্যাপারটা কী আমি তো কিছুই..।

- আপনার বাড়িতে দু'টো ডোনাল্ড ডাকের পোস্টার আর একটা মিকি মাউসের ছবিওলা বেডশিট পাওয়া গেছে৷ আসুন আমাদের সঙ্গে..।

**

ব্রেকিং নিউজ। ব্রেকিং নিউজ৷ ব্রেকিং নিউজ৷ 

আজ সন্ধ্যেবেলা, 

শেয়ালদার কাছে এক মিনিবাস থেকে এক বিদেশী মদতপুষ্ট জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ জঙ্গিটির নিজের পরিচয় নিরুপম সাঁতরা জানালেও পুলিশের বড়কর্তা জানিয়েছেন যে সে পরিচয়টা নির্ঘাৎ ভুঁয়ো।

রাতের দিকে, পুলিশ সেই জঙ্গির আস্তানায় হানা দিয়ে বেশ কিছু অবৈধ এবং বিপজ্জনক নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে। পুলিশ এ বিষয়ে সমস্ত খোলসা না করলেও এক বিশেষ সূত্রের মারফৎ আমরা জানতে পেরেছি যে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র আর বিস্ফোরকও নাকি উদ্ধার করে হয়েছে জঙ্গিদের ডেরা থেকে৷ গ্রেপ্তার করা হয় জঙ্গিটির আরও দুই শাগরেদকে৷ 

সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে গ্রেপ্তার হওয়া তিন ব্যক্তিই কোনও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আর শহরে কোনও বড়সড় গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছিল তারা৷ 

বিস্তারিত জানতে হলে সঙ্গে থাকুন৷ ফিরে আসছি একটা ছোট কমার্শিয়াল ব্রেকের পরেই..। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু