Skip to main content

আহ্! মিউজিক!



কী বিদঘুটে স্বপ্ন রে বাপ! শীতের রাতের জবরদস্ত ঘুম গেল বিশ্রীভাবে চটকে৷ তবে ঘুম ভাঙলই যখন, তখন লিখেই রাখি। কী দেখলাম স্বপ্নে?

একটা সুপরিচিত পেল্লায় হলঘর৷ অবিকল যেন কফিহাউসের মত, এমন কি রবীন্দ্রনাথের ঢাউস ছবিটাও দিব্যি দেওয়াল আলো করে রয়েছে৷ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সে'ছবিতে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে নেই, পায়চারি করছেন। ফ্রেম থেকে মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে যাচ্ছেন আবার ফেরত আসছেন৷ যাচ্ছেন, আসছেন, যাচ্ছেন, আসছেন৷ আর মাঝেমধ্যেই ফ্রেমের বাইরে কার দিকে যেন তাকিয়ে স্মিত হাসছেন। 

চেয়ারগুলো টেবিলগুলো সবই ফাঁকা, খিটখিটে ওয়েটারদাদাদেরও দেখা নেই৷ শুধু বিদঘুটে জোব্বা গায়ে চাপিয়ে এক দাড়িয়াল সাহেবসুবো মানুষ রবীন্দ্রনাথের ফ্রেমের সামনে দাঁড়িয়ে, টেনিস ম্যাচ দেখার মত রবীন্দ্রনাথের পায়চারি দেখে চলছেন তিনি। ভদ্রলোকের মুখে একটা মিঠে আনন্দের ছাপ, আর চোখে একটা মজাদার ঝিলিক৷ রবীন্দ্রনাথও মাঝেমধ্যে পায়চারি থামিয়ে তাঁর দিকে চেয়েই হাসছেন।

বেশ খানিকক্ষণ পায়চারির পর ফ্রেমের মধ্যেই একটা চেয়ার টেনে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ বসলেন৷ ফ্রেমের বাইরে হলঘরে দাঁড়ানো সেই সাহেব দাড়িয়ালও এ'বার একটা কফিহাউসিও চেয়ার টেনে বসে মুখে লেবুলজেন্সের মত কিছু একটা দিলেন৷ 

রবীন্দ্রনাথই কথা বলে উঠলেন।

- গরীব বাঙালির কথা বাসি করে মনে ধরালে ভাই ডাম্বলডোর?

- গুরুদেব, আপনার কথা আমি পাত্তা দেব না? আমার ঘাড়ে অতগুলো মাথা নেই, পায়ে অতগুলো মোজাও নেই৷ তবে আমাদের কিনা আঠারো মাসে বছ্র, তাই সিলেবাস পাল্টাতে কিছুটা দেরী হয়ে গেল৷ যাক গে, এখন ব্যবস্থা পাকা৷ আর তাই খবরটা আপনাকে দিতে আসা৷ 

- তুমি নিশ্চিত তো?

- হ্যাঁ। হগওয়ার্টসের ছেলেমেয়েরা এ জাদু না শিখলে সমস্তই মাটি৷ 

- যাক৷ তোমার স্কুলের সিলেবাসে এদ্দিনে তা'হলে সঙ্গীত ঠাঁই পেল৷ স্টাডি অফ মিউজিক..বাহ্ বাহ্। 

- গুরুদেব৷ নামটা একটু নিজেদের মত সাজিয়ে নিয়েছি৷ স্টাডি অফ মিউজিক নয়৷ স্টাডি অফ ব্রাইট আর্টস৷ 

- কিন্তু, সে কি আর পারবে সে তোমার স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়াতে? দেরী করে ফেললে ভাই আলবাস৷ 

- কাথবার্ট দিব্যি পেরেছে মরার পরেও ক্লাস নিতে। আর ম্যাজিকের হিসেবে লতা তো অনেক এগিয়ে৷ ও নিয়ে ভাববেন না৷ মাগলরা তাকে যতই ভালোবাসুক, তার আসল কদর কিন্তু হগওয়ার্টসেই হবে।

- বেশ৷ মঙ্গল হোক৷ তুমি নিশ্চিত হলেই হল। 

- গুরুদেব,হগওয়ার্টস আজ একধাপ এগিয়ে গেল৷ 

- এগোবেই তো৷ কতবছর আগে, হগওয়ার্টসে বসে সুরে ঘায়েল হয়ে তুমিই তো  বলেছিলে ভাই, "Ah Music, A Magic Beyond All We Do Here"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু