Skip to main content

মাল্টিটাস্কিং

মাল্টিটাস্কিং ব্যাপারটা ভারী অদ্ভুত৷ কাজ এগোয় না, শুধু মাল্টিটাস্কিংই চলতে থাকবে৷

সবার কম্পিউটারেই আজকাল বিরাশি সিক্কার র‍্যাম। কেন?
ব্রাউসারে বাহাত্তরখানা ট্যাব খোলা থাকবে,
সতেরোটা এক্সেল, বারোটা ওয়ার্ড ডুকুমেন্টে কাজ চলবে,
পাশাপাশি ইমেল চালাচালি৷
আর সবার ওপরে চলবে জুম মিটিংয়ের 'জী হজৌরি'।

এ'সব দিয়ে কী হবে? হবে মাল্টিটাস্কিং৷ এক কাজ নিয়ে পড়ে থাকা মানে আধুনিক কর্পোরেট জগতের বিরিয়ানিতে কুমরোর টুকরো হয়ে পড়ে থাকা।

বড়বস চাইবেন রিপোর্ট,
মেজোবস খুঁজবেন ইমেল,
সেজবস দেখবেন পাওয়ারপয়েন্ট,
ছোটবস ডাকবেন মিটিংয়ে,
আর আপনি? আপনার ইএমআই-য়ে ম্যারিনেট করা কপালে রয়েছে 'যে আজ্ঞে' আর মাল্টিটাস্কিং৷

দিনের অর্ধেকটা কেটে যায় এক্সেল থেকে জুমের মধ্যে দৃষ্টি চালাচালি করে,  ইমেল থেকে পাওয়ারপয়েন্টে ফোকাস জাগলিং করে, আর ফোনে খেজুর চালাতে চালাতে মেমো পড়ে৷ ওইটুকু পথ চলাতেই আনন্দ। শ্বাস ফেলতে না পারার মধ্যেই উত্তরণ সুপার এফিশিয়েন্ট কর্পোরেট সৈন্যদের। তারা লাঞ্চ সারবে কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ রেখে। তারা মুখ খুললেই বুলেট পয়েন্ট ছিটকে বেরোবে। তাদের টু-ডু লিস্ট সাইজে নভেলদের টেক্কা দেবে। তাদের ডেস্কটপের পাশেই জ্বলজ্বল করে মারকাটারি মোটিভেশনাল বই আর তার পাশেই ছড়িয়ে শতসহস্র স্টিকিনোট; 'ইয়ে করেঙ্গে', 'উয়ো করেঙ্গে' ইত্যাদি৷ 

এতসব করে কী বেরোয়?

অন্তঃসারশূন্য রিপোর্ট,
কেঠো গতে বাঁধা অ্যানালিসিস,
আর বাতেলা পাওয়ারপয়েন্ট।  
ও'দিকে "এক্সেলেন্স' শব্দটা বিভিন্ন অফিস পোস্টারে দোল-দোল-দুলুনি মোডে সেঁটে থাকে৷

কিন্তু কোন ব্যাপারটা সঠিক ভাবে চলতে থাকে?
মাল্টিটাস্কিং৷ 

কারুর "কী খবর ভাইটি" বলতে পারার সময় থাকা মানেই সে 'আন্ডারইউটিলাইজড'। কেউ তলিয়ে ভাবার সময় পাচ্ছে মানেই সে পাশবালিস৷ 

যার কানে ল্যান্ডলাইন রিসিভার, এক হাত কীবোর্ডে, অন্য হাত মোবাইলে, আর চোখ কম্পিউটার স্ক্রিনে; সেই ঘ্যাম৷ বাকি সমস্তটাই ফাঁকি৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু