Skip to main content

সুন্দর নার্সারি




দিল্লীর সুন্দর নার্সারি যেমন সবুজ, তেমনই ছিমছাম৷ জানুয়ারির উইকেন্ড-ভিড়েও দেখেছি যে নিজেদের জন্য নিরুপদ্রব, ঘেসো এবং পরিস্কার এলাকা দিব্যি জুটিয়ে নেওয়া যায়৷ আজ একাই দুপুর-দুপুর ঝোল-ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম৷ প্রথমে ভাবলাম নতুন কোনও জায়গায় যাই, তারপর মনে পড়ল সুন্দর নার্সারির কাছাকাছিই রয়েছে নিজামুদ্দিন মার্কেট যে'খানে দিনকয়েক আগেই এসেছিলাম চমৎকার কাবাব খেতে৷ কাজেই নার্সারি ঘুরে সুন্দর কাবাব খেয়ে বাড়ি ফেরার প্ল্যানটাই যুক্তিযুক্ত মনে হল৷ 


প্রথম দিল্লী এসে যখন সুন্দর নার্সারির কথা শুনেছিলাম তখন ভেবেছিলাম  শৌখিন মানুষের ডালিয়া পিটুনিয়া আর ভালো কোয়ালিটির সার কিনবার জায়গা বোধহয়৷ ইতিহাস আর জেনারেল নলেজে কাঁচা হলে যা হয়৷ কিন্তু ভুল ভাঙার জন্য সশরীরে আসার দরকার নেই, গুগল করলেই হল৷ ষোলো শতকে মুঘলরা বানিয়েছিল পেল্লায় আজিম বাগ, সাহেবসুবোদের হাতে এ'খানে নার্সারি তৈরি হল ১৯১৩ নাগাদ৷ বর্তমানে নাকি শ'তিনেক রকমের গাছপালা রয়েছে এ'খানে৷ আমার মত অসবুজ গাম্বাট মানুষের জন্য অবশ্য গাছপালা মূলত চার রকমের; পেল্লায়, মাঝারি,  ছোটখাটো আর ঘাস-জাতিয়৷ কাজেই 'রেয়ার প্ল্যান্টস' দেখে লাফিয়ে ওঠার জ্ঞানগম্যি আমার নেই, যাদের আছে তাদের জন্য সুন্দর নার্সারি আরও উপভোগ্য৷ 


আমার জন্য সুন্দর নার্সারির মূল টান হল ওই সুবিশাল এলাকা, তাও আবার শহরের ঠিক মধ্যিখানে৷ এ বিষয়ে অবশ্য দিল্লীর জবাব নেই৷ লোধি গার্ডেন, সুন্দর নার্সারি ছাড়াও অজস্র এমন জায়গা রয়েছে যে'খানে হাত-পা ছড়িয়ে দিব্যি একটা বেলা কাটানো যায়; ভালোমন্দ খেয়ে, গা এলিয়ে গল্পের বই পড়ে ফেরা যায়৷ ভিড়ের চোটে এক বাড়ির লুচির পাশে অন্য বাড়ির চচ্চড়ি পড়ে যায়না৷  এই সুন্দর নার্সারিতে আর একটা দারুণ ব্যাপার হল কানে দিব্যি ঘণ্টাখানেক স্রেফ হেঁটেও কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে, গোটা ব্যাপারটাই একটা হাইক্লাস 'ওয়াক ইন দ্য পার্ক' আর কী৷


মাঝামধ্যেই রয়েছে বিভিন্ন মোগলাই স্থাপত্য।  কোনওটাই পেল্লায় নয় তবে সুন্দর, যেমন সুন্দর বুর্জ (সুন্দর নার্সারি এই সুন্দরেই সুন্দর), সুন্দরওলা মহল, লক্কড়ওলা বুর্জ ইত্যাদি৷ সুন্দত বুর্জের সামনে যে সেন্ট্রাল অ্যাক্সিস এবং খানিকটা এগিয়ে যে জলাশয়, সে'সবই অতি চমৎকার৷ আর্কিটেকচার নিয়ে কিছু বলার ক্ষমতা আমার নেই, তবে অন্য একট বিষয়ে নিজের ভালো লাগা জাহির করতেইব হয়৷ সবচেয়ে সুন্দর নার্সারির মধ্যের স্থাপত্যগুলোর মধ্যে একটা দুর্দান্ত মিঠে আর মনোগ্রাহী নাম রয়েছে; ছোটা বাতাসেওয়ালা৷ ওই নামে একটা রেলস্টেশন, একটা হিলস্টেশন আর একটা গ্রাম্য মেলাও থাকা উচিৎ৷ এ'ছাড়া রয়েছে প্রচুর ফুল। আর লক্কড়ওলা বুর্জের সামনের গোলাপ বাগানটা অত্যন্ত চমৎকার।


যা হোক৷ সুন্দর নার্সারিতে আমার মূল টান অবশ্য শীতের দুপুরে ঘাসের ওপর চাদর পেতে গা এলিয়ে বসায় (এবং শোওয়ায়)৷ সঙ্গে সামান্য খানাপিনা না থাকলে আসর জমজমাট হয় না৷ গতমাসে যখন সবাই মিলে এসেছিলেম তখন সঙ্গে ছিল তিনকোণা পরোটা, ডিম কষা, কাশ্মিরি আলুর দম, গাজরের হালুয়া আর সি আর পার্ক থেকে কেনা রসের মিষ্টি৷ বিকেলের জন্য কফিও আনা হয়েছিল ফ্লাস্কে, সঙ্গে নিমকিটিমকি৷ 

আজ হুট করে একাই চলে আসায় সে আড়ম্বর বাদ পড়েছে৷ চাদরের বদলে ঘাসের ওপরেই গা এলিয়ে বসতে হয়েছে। তবে ইয়ারফোনে গান ছিল, আর ছিল বই৷ মুখ চালানোর জন্য এক প্যাকেট বাপি চানাচুর এনেছিলাম অবশ্য। দিল্লীতে এখন সেই কড়া ঠাণ্ডা আর নেই, দিব্যি আরামদায়ক দুপুরের রোদ৷ গান, বই সরিয়ে রেখে খানিকক্ষণ ঝিমটিও দেওয়া গেল৷ তরতর করে দুপুর গড়িয়ে গেল৷ সন্ধ্যে নামার আগে হাঁটাহাঁটি করে খিদেটাকে চাগিয়ে তুলতে হবে, নয়ত নিজামুদ্দিনের কাবাব-সাফারিটাই মাটি৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু