Skip to main content

দুধে-ভাতে-মেডিক্লেমে

মেডিক্লেমের মত ভালো খরচ আর হয়না৷ প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা হওয়ার চেয়েও জরুরী বোধ হয় মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স৷ নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়ার দেশে অবশ্য সে ব্যাপারটা অনেকের জন্যই সহজলভ্য নয়৷ তবে ঈশ্বরী পাটনীর দুধে-ভাতে থাকার স্বপ্নে একটা বড় অংশ জুড়ে বোধ হয় বিপদেআপদে ফতুর না হয়ে খানিকটা লড়তে পারার ক্ষমতা৷ 

সরকারি হাসপাতালের নিখরচায় চিকিৎসার সুযোগও অবশ্যই আছে৷ কিন্তু মেডিক্লেমের ভরসায় বেসরকারি চিকিৎসার দিকে তাকানোর দুঃসাহসটুকু অন্তত পাওয়া যায়৷ প্রাইভেট মানেই ভালো? না৷ কিন্তু, কোনও দরজাই বন্ধ নেই; এ ভরসার মূল্য ওই দুধভাতের সমান৷ 

আমার এক পরিচিত মানুষ মাঝেমধ্যেই চেনা লোকজনকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স আছে কিনা, থাকলে প্রিমিয়াম নিয়মিত জমা করা হচ্ছে কিনা৷ এমন গায়ে পড়া প্রশ্নে অনেক বিরক্ত হন, আমিও হয়েছি একসময়৷ কিন্তু তা'তে সেই পরিচিত মানুষটার উৎসাহে ভাটা পড়েনা৷ তিনি জোর গলায় বলেন, "ভালো আছিস কিনা জিজ্ঞেস করার চেয়ে মেডিক্লেমের খোঁজ নেওয়া ভালো"। 

তবে সেই পরিচিত মানুষটির গায়ে-পড়া যতই উড়িয়ে দিই, একটু অবাক হই যখন অনেকে একটা নিয়মিত আয় থাকা সত্ত্বেও মেডিকাল ইন্স্যুরেন্স ব্যাপারটা নিয়ে গা করেন না৷ কিছু ভাসা ভাসা কারণ শুনতে পাই। "আরে এই জোয়ান বয়সে আবার মেডিক্লেম কেন"৷ "খামোখা অতগুলো টাকা প্রিমিয়াম দেব, কিন্তু গোটা বছর শেষে কোনও ক্লেমই হবে না। গোটাটাই জলে"৷ "ও'সব আমি বুঝি না ভাই"৷ 

প্রতিটা মানুষের মেডিক্লেমের প্রিমিয়াম যেন বছরের পর বছর জলে যায়; কাউকেই যেন হাসপাতালমুখো না হতে হয়৷ তবে ওই, খেটেখুটে জমানো সঞ্চয় উজাড় হয়ে যাওয়ার দুঃখ যে কী নিদারুণ৷ হাসপাতাল চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে সবেধন নীলমণি ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙার প্ল্যান করতে করতে বুকের মধ্যে যে কী বিশ্রী মচরমচর শব্দ হয়, সে'টা কল্পনা করে নিতে অসুবিধে হয়না৷

মেডিক্লেম মানেই কি সব সমস্যার সমাধান? আদৌ নয়৷ আজকাল সত্যিই মেডিকাল ইন্স্যুরেন্সের দর আকাশ ছোঁয়া৷ দরাজ ইনস্যুরেন্স কভার বাগানো চাট্টিখানি কথা নয়৷ কিন্তু বিপদে-আপদে একটা উজ্জ্বল ভরসা, ব্যাপারটা সত্যিই বড় দামী৷ কত দামী? বছরে একবার পুরী ঘুরতে যাওয়ার চেয়েও, মাসে দু'বার রেস্তোরাঁয় খাওয়ার থেকেও, বইমেলায় ঝাঁপিয়ে পড়ার থেকেও; ঢের বেশি দামী৷ 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু