Friday, August 18, 2017

দেবু আর ব্লু-হোয়েল কিউরেটর

- দেবু...।

- এক্সকিউজ মি?

- আমি ব্রাউনজিব্রা।

- ওহ্‌, স্যর...।

- বসো বসো...দাঁড়ালে কেন? আমি তোমার ক্লাসটীচার নই। বসো।

- থ্যাঙ্ক ইউ।

- কেমন আছ?

- আছি স্যর।

- টেন্স?

- ওই। না মানে...ঠিক টেন্স না...এক্সাইটেড।

- তুমি ক্লাস নাইনে পড়ো, তাই না?

- ক্লাস নাইন। হ্যাঁ স্যর।

- বাড়িতে বাবা মা আর ছোট বোন। তাই তো?

- আছে তিন জন।

-  হুঁ। কোল্ড কফি অর্ডার করি?

- আচ্ছা।

- ওয়েটার, দু’টো কোল্ড কফি। এ’বার বলো।

- আমি ভেবেছিলাম...।

- কী ভেবেছিলে দেবু?

- আমি ভেবেছিলাম ব্রাউনজিব্রা বাংলা বলতে পারে না।

- হেহ্‌। দেবু, সাবজেক্টে যে ভাষায় স্বপ্ন দেখে আর চিন্তা করে; সে ভাষা ভালো ভাবে জানা না থাকলে কিউরেটর হওয়া যায় না।

- ওহ্‌। হ্যাঁ। তা বটে।

- ইউ লুক টায়ার্ড।

- একটু।

- ঘুমোনোর সুযোগ হচ্ছে?

- রাতে নয়। দিনেদুপুরে কখনও সখনও। এই, ঘণ্টা দুয়েক করে।

- হুম।

- কেমন লাগছে?

- টানছে।

- কী’রকম দেবু?

-  আমি আরও কষ্ট সহ্য করতে পারি। এ’গুলো জাস্ট কিছুই না। বিশ্বাস করুন।

-  জানি।

- আমার সবসময় বড্ড পিপাসা পাচ্ছে। মনে হচ্ছে ছুটে যাই। বুকের ভিতর ধড়ফড়। সব সময়। অথচ কথা বলতে ইচ্ছে করছে না অন্য কারুর সঙ্গে। গত কয়েক মাসে আমার শুধু আপনার সঙ্গেই কথা হয়েছে ব্রাউনজিব্রা।

- স্বাভাবিক। আমি তোমার কিউরেটর। আমায় তো বলতেই হবে দেবু। বলো। নিশ্চিন্তে।

- আমি জানতাম যে কিউরেটরের সঙ্গে কোনওদিন দেখা করা সম্ভব না।

-  সব খেলার নিয়মে রদবদল হয়। সে’টাই স্বাভাবিক। এক সময় ক্রিকেটে মিডল স্টাম্প থাকত না, সে’টা জানো?

- বল গলে গেলে?

- নট আউট। সে এক মহাসমস্যা। কাজেই নিয়ম ধীরে ধীরে পালটে যাবে, সে’টাই স্বাভাবিক।

- আমাদের বাড়ি তিন তলা। ছাতের উত্তর কোণে ঝুঁকলে দেখা যায় ফুটপাথ, টগরগাছ।

- টানে?

- খুব। টগর গাছের পাশে একটা লেটারবক্স। মরচে পড়ে গেছে। ছোটবেলায় লেটারবক্সটাকে ভয় পেতাম, মনে হত ও’টায় ভূত থাকে।

- আর এখন?

- টানে। খুব। সেই ভূতটা টানে।

-  কার ভূত দেবু?

-  আমারই। লেটারবক্সে থাকত। অনেক আগে থেকেই। ওইটুকু একটা লেটারবক্সেও ও বেশ ছড়িয়েছিটিয়ে আছে। আমার ইচ্ছে করে ও’দিকে নেমে যেতে।
ব্রাউনজিব্রা...।

- কোল্ডকফিটা খাও।

- থ্যাঙ্কস। আচ্ছা, ব্রাউনজিব্রা...।

-  কিছু বলবে?

-  আগামীকাল আমার চ্যালেঞ্জের পঞ্চাশ নম্বর দিন। ব্রাউনজিব্রা...।

- হাতের ঘা কেমন আছে দেবু?

- এই যে। হাতে যে কোড লেখার কথা ছিল। দেখুন। ঘা শুকিয়ে গিয়ে আরও স্পষ্ট হয়েছে।

- কেমন আছ দেবু?

- মাঝেমধ্যেই হাত পা কাঁপে স্যর। রাগ হয়।

- কার ওপর? বাবা? মা? স্কুলের বন্ধুরা?

- ওই পোস্টবাক্সটা, কাল ওখানে নামার কথা। আপনি আমায় সময় বলে দেবেন। ঝাঁপ দেওয়ার। আর কোথায় সেল্ফি পাঠাবো। মিস্টার ব্রাউনজিব্রা, প্লীজ।

- ঝাঁপ। হাড়গোড় ভাঙচুর। হেমোরেজ। দু'মিনিট বা দু'ঘণ্টার কষ্ট। ব্যাস? এ'টুকুই?

- আলটিমেট লেভেল অফ ব্লু হোয়েল। সেই মুহূর্তটা, সেই শেষ সেলফির মুহূর্তটাই  হল পার্ফেকশন মিস্টার ব্রাউনজিব্রা। আর কিছুই ইম্পর্ট্যান্ট নয়।

- সিলি।

- সিলি?

- ব্লু হোয়েল অত্যন্ত নরম ব্যাপার দেবু। চ্যালেঞ্জ হিসেবে বেশ এলেবেলে।

- এ'টা আপনি বলছেন? দ্য ফাইনেস্ট ব্লু-হোয়েল কিউরেটর ইন দ্য কান্ট্রি?

- এক্স-ব্লু হোয়েল কিউরেটর।

- আপনি ব্লু হোয়েল ছেড়ে দিয়েছেন? মিস্টার ব্রাউনজিব্রা! তা'হলে আমায় এ'ভাবে টেনে আনার মানে কী?

- ব্লুহোয়েল। সাময়িক যন্ত্রণা। আবছায়া, কিন্তু যথেষ্ট অন্ধকার নয়। ব্লুহোয়েল খেলে কেউ প্রতি নিয়ত অন্যদের গলা কেটে ফেলতে চায় না। একটা দুর্গন্ধময় দমবন্ধ করা পরিবেশে বছরের পর বছর...সে'টার মুখোমুখি দাঁড়ানো...মাচ বিগার চ্যালেঞ্জ।

- তা'তে পার্ফেকশন কই?

- দুর্গন্ধময় দমবন্ধ করা পার্ফেকশন। লেটারবক্সের ভিতরটা হয়ত তেমনই,  সে'রকমই একটা নতুন চ্যালেঞ্জ আমি তৈরি করছি।

- নতুন চ্যালেঞ্জ?

- আর এ চ্যালেঞ্জ সবাই উন্মাদের মত খেলবে দেবু। এ হল সেই চ্যালেঞ্জ যার তুলনায় ব্লুহোয়েল নস্যি। এমন চ্যালেঞ্জ যাতে প্রতিমুহূর্তে মনে হবে তুমি ছাতের পাঁচিলের ওপর দাঁড়িয়ে আছ। প্রতি মুহূর্তে মাথায় দপদপ, প্রতি মুহূর্তে শেষ হয় যাওয়ার ভয়। প্রতি মুহূর্তে মনে হবে এই বুঝি কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল...।

- কে? কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে?

- যে কেউ হতে পারে। বন্ধু বা বাবা বা মা...বা অন্য কেউ...। যে কেউ...। এক এক সময় মনে হবে ধাক্কা খাওয়ার একটানা ভয়ের চেয়ে...।

- মরে যাওয়া ভালো?

- খেলবে দেবু? এই নতুন চ্যালেঞ্জ?

- খেলব! কী চ্যালেঞ্জ এ'টা?

- তুমি পারবে দেবু? এই চ্যালেঞ্জ কিন্তু ব্লুহোয়েলের মত ঠুনকো নয়, আর খেলবেও বহু ছেলেমেয়ে..।

- পারব স্যর। পারব! চ্যালেঞ্জটা আদতে কী?

- ব্রাউনজিব্রা ছাড়াও আমার একটা কেতাবি পরিচয় আছে, একটা প্রফেশন আছে। সে সুযোগ নিয়েই আমি দমবন্ধ করা এই চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছি। হাজারে হাজারে ছেলেমেয়েকে আমি এই চ্যালেঞ্জের চাপে...।

- আপনার চোখ দু'টো আচমকা বড্ড লাল দেখাচ্ছে স্যর।

- সরি, একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তাহলে দেবু, খেলবে এই নতুন চ্যালেঞ্জ?

- খেলব। চ্যালেঞ্জটার নাম কী?

- চ্যালেঞ্জটার নাম? সিলেবাস। সিলেবাস! তোমাদের ক্লাস টেনের নতুন সিলেবাস আমিই তৈরি করছি..ওই..প্রফেশনালিই সুযোগটা পেয়ে গেলাম। হাজারে হাজারে সিলেবাস-কিউরেটর ছড়িয়ে রয়েছে তোমার চারদিকে। প্লে ওয়েল। অল দ্য বেস্ট ফর ইওর আপগ্রেডেড চ্যালেঞ্জ দেবু। হ্যাপি সিলেবাস।

1 comment:

Gaurab Roy said...

😂😂Sotti Dada
Tone blue-whale er seriousness niye aektu probondho ??? Aaasha kora zaay