Skip to main content

সারাহাহ্

"ঘুম আসছে না"?

কী কাণ্ড! ভালোই আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছে; রাত তিনটে অথচ ঘুমটি-নট। কী অসোয়াস্তি। নতুন বেডশিটের জন্য কী?


"জোর করে শুয়ে থেকে কী হবে? ছাত থেকে ঘুরে আসুন বরং"।
ঢিলের পর ঢিল। বেকারের হদ্দ। তবে ছাতে না গেলেও, ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা জল দু'ঢোক খেলে ভালো লাগবে। আর ফ্রীজে খান দুই ক্ষীরকদম এখনও আছে বোধ হয়।


"নো স্যার, ক্ষীরকদমের বাক্স গতকাল রাতেই ফাঁক করে দিয়েছেন"।
হারামজাদা! ব্যাপারটা বাড়াবাড়ির পর্যায় চলে গেছে। তবে ফ্রীজে রাখা হলুদ বাক্সটা খালি দেখে একটু ঘাবড়ে যেতেই হল।


"ছাতে চলুন। ভালো লাগবে। এত রাত্রে খবরের কাগজ উল্টেপাল্টে দেখাটা অস্বাস্থ্যকর"।
ধুত্তোর। আনন্দবাজারটা দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেললাম। ব্যাপারটা আর সহজ ভাবে নেওয়া যাচ্ছে না।


"ছাতে। নিশ্চিন্ত বোধ করবেন। আর বেশ ফুরফুরে হাওয়া বইছে। রেডিওটা বন্ধ করুন।"।
ঘামতে শুরু করেছিলাম। নিশ্চিত ভাবেই কেউ গলা টিপে ধরতে চাইছে। মোবাইলের এফএম বন্ধ করে ছাতের সিঁড়ির দিকে গেলাম।


"পশ্চিম কোণে গিয়ে নীচের রাস্তায় চোখ রেখে দেখুন না"।
ব্যাপারটা কিছুতেই আর আমার হাতে ছিল না। অবসন্ন মনে এগিয়ে গেলাম ছাতের পশ্চিমের পাঁচিলের দিকে।


"এ'বার বিশ্বাস হল? যে আমি অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার বান্দা নই"?
গা গুলিয়ে আসছিল। নীচের রাস্তায় ফুলদার বন্ধ পান দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসা নীল ফতুয়া আর পাজামা পরা চেহারাটা আমার রীতিমত চেনা।


সদর দরজার সামনে এসে টের পেয়েছিলাম চাবি হারিয়েছি। ডুপ্লিকেট চাবি বাড়ির ভিতরেই রয়েছে। ফুলদার পানের দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসে একটা সিগারেট ধরিয়েছিলাম। ভোরের আগে তালা ভাঙার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সময় কাটতে চাইছিল না। তারপর হঠাৎ মনে পড়লো নিজের সারাহাহ্ একাউন্টটার কথা। এত লোকের এত গোপন মেসেজ আসে, আমার কপালে কাঁচকলা। নিজেই মোবাইলে নিজের একাউন্ট খুলে মেসেজ টাইপ করতে বসলাম।


ছাতের পশ্চিম কোণের পাঁচিলের ওপার থেকে ঝুঁকে পড়া মুখটা দেখে দিব্যি আনন্দ হচ্ছিল। আমার ভীষণ চেনা নীল ফতুয়া। আহা।


"ডুপ্লিকেট চাবিটা নীচে ফেলবেন প্লীজ? শোওয়ার ঘরের দেরাজে রাখা আছে"?
কী সাহস!  দুদ্দাড় করে ছাত থেকে নেমে এসে শুয়ে পড়লাম।


কী মুশকিল। আমায় এই অবস্থায় দেখেও নীল ফতুয়া হাওয়া!


"চাবিটা দিন না ভাই"।

হাজার দেড়েক বার একই মেসেজ পেয়ে বাধ্য হয় দেরাজ খুলে চাবি বের করে সদর দরজামুখো হলাম।

১০
অদ্ভুত! তালা খোলার শব্দ হলো। দরজা খুলে গেল। অথচ বাইয়ে সেই নীল ফতুয়া নেই।  বরং একটা দমকা হাওয়া এসে আমায় দিব্যি উড়িয়ে নিয়ে গেল।
ওড়ার আগে শেষ মেসেজ নজরে পড়ল
"ঘুঘু দেখেছ, কিন্তু ফাঁদ আনসীন? টাটা"।

উপসংহার

ঘুম আসছিল না। এ'দিকে ফ্রীজে ক্ষীরকদমও নেই। বিরক্তিতে হাতের কাছের আনন্দবাজার উলটে পালটে দেখছিলাম।
আচমকা ওই উৎকট বিজ্ঞাপনটা নজরে এলো।
"ঘুঘু তান্ত্রিক, সারাহাহ্ বিদ্যায় কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার প্রক্রিয়ায় সহজে ভূত বিদায়"।

তখনই মোবাইলে দেখলাম চার নম্বর মেসেজ:

"ছাতে চলুন। ভালো লাগবে। এত রাত্রে খবরের কাগজ উল্টেপাল্টে দেখাটা অস্বাস্থ্যকর"।

Comments

Souvick said…
Darun.....khub valo laglo

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু