Tuesday, August 8, 2017

সারাহাহ্

"ঘুম আসছে না"?

কী কাণ্ড! ভালোই আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছে; রাত তিনটে অথচ ঘুমটি-নট। কী অসোয়াস্তি। নতুন বেডশিটের জন্য কী?


"জোর করে শুয়ে থেকে কী হবে? ছাত থেকে ঘুরে আসুন বরং"।
ঢিলের পর ঢিল। বেকারের হদ্দ। তবে ছাতে না গেলেও, ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা জল দু'ঢোক খেলে ভালো লাগবে। আর ফ্রীজে খান দুই ক্ষীরকদম এখনও আছে বোধ হয়।


"নো স্যার, ক্ষীরকদমের বাক্স গতকাল রাতেই ফাঁক করে দিয়েছেন"।
হারামজাদা! ব্যাপারটা বাড়াবাড়ির পর্যায় চলে গেছে। তবে ফ্রীজে রাখা হলুদ বাক্সটা খালি দেখে একটু ঘাবড়ে যেতেই হল।


"ছাতে চলুন। ভালো লাগবে। এত রাত্রে খবরের কাগজ উল্টেপাল্টে দেখাটা অস্বাস্থ্যকর"।
ধুত্তোর। আনন্দবাজারটা দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেললাম। ব্যাপারটা আর সহজ ভাবে নেওয়া যাচ্ছে না।


"ছাতে। নিশ্চিন্ত বোধ করবেন। আর বেশ ফুরফুরে হাওয়া বইছে। রেডিওটা বন্ধ করুন।"।
ঘামতে শুরু করেছিলাম। নিশ্চিত ভাবেই কেউ গলা টিপে ধরতে চাইছে। মোবাইলের এফএম বন্ধ করে ছাতের সিঁড়ির দিকে গেলাম।


"পশ্চিম কোণে গিয়ে নীচের রাস্তায় চোখ রেখে দেখুন না"।
ব্যাপারটা কিছুতেই আর আমার হাতে ছিল না। অবসন্ন মনে এগিয়ে গেলাম ছাতের পশ্চিমের পাঁচিলের দিকে।


"এ'বার বিশ্বাস হল? যে আমি অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার বান্দা নই"?
গা গুলিয়ে আসছিল। নীচের রাস্তায় ফুলদার বন্ধ পান দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসা নীল ফতুয়া আর পাজামা পরা চেহারাটা আমার রীতিমত চেনা।


সদর দরজার সামনে এসে টের পেয়েছিলাম চাবি হারিয়েছি। ডুপ্লিকেট চাবি বাড়ির ভিতরেই রয়েছে। ফুলদার পানের দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসে একটা সিগারেট ধরিয়েছিলাম। ভোরের আগে তালা ভাঙার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সময় কাটতে চাইছিল না। তারপর হঠাৎ মনে পড়লো নিজের সারাহাহ্ একাউন্টটার কথা। এত লোকের এত গোপন মেসেজ আসে, আমার কপালে কাঁচকলা। নিজেই মোবাইলে নিজের একাউন্ট খুলে মেসেজ টাইপ করতে বসলাম।


ছাতের পশ্চিম কোণের পাঁচিলের ওপার থেকে ঝুঁকে পড়া মুখটা দেখে দিব্যি আনন্দ হচ্ছিল। আমার ভীষণ চেনা নীল ফতুয়া। আহা।


"ডুপ্লিকেট চাবিটা নীচে ফেলবেন প্লীজ? শোওয়ার ঘরের দেরাজে রাখা আছে"?
কী সাহস!  দুদ্দাড় করে ছাত থেকে নেমে এসে শুয়ে পড়লাম।


কী মুশকিল। আমায় এই অবস্থায় দেখেও নীল ফতুয়া হাওয়া!


"চাবিটা দিন না ভাই"।

হাজার দেড়েক বার একই মেসেজ পেয়ে বাধ্য হয় দেরাজ খুলে চাবি বের করে সদর দরজামুখো হলাম।

১০
অদ্ভুত! তালা খোলার শব্দ হলো। দরজা খুলে গেল। অথচ বাইয়ে সেই নীল ফতুয়া নেই।  বরং একটা দমকা হাওয়া এসে আমায় দিব্যি উড়িয়ে নিয়ে গেল।
ওড়ার আগে শেষ মেসেজ নজরে পড়ল
"ঘুঘু দেখেছ, কিন্তু ফাঁদ আনসীন? টাটা"।

উপসংহার

ঘুম আসছিল না। এ'দিকে ফ্রীজে ক্ষীরকদমও নেই। বিরক্তিতে হাতের কাছের আনন্দবাজার উলটে পালটে দেখছিলাম।
আচমকা ওই উৎকট বিজ্ঞাপনটা নজরে এলো।
"ঘুঘু তান্ত্রিক, সারাহাহ্ বিদ্যায় কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার প্রক্রিয়ায় সহজে ভূত বিদায়"।

তখনই মোবাইলে দেখলাম চার নম্বর মেসেজ:

"ছাতে চলুন। ভালো লাগবে। এত রাত্রে খবরের কাগজ উল্টেপাল্টে দেখাটা অস্বাস্থ্যকর"।

1 comment:

Souvick said...

Darun.....khub valo laglo