Skip to main content

বরিশাল

বরিশাল।

স্বাধীনতার খানিক আগেই হবে হয়ত। দাদু তখন স্কুলে, আন্দাজ করতে পারি ক্লাস সেভেন কী এইট। শহরজুড়ে উত্তেজনা।
হিন্দু মুসলিম। মার দাঙ্গা।
তার ওপর শুরু হল ভয়াবহ কলেরার প্রকোপ।

মোদ্দা কথা হল মরে যাওয়াটা খুব একটা তাবড় ব্যাপার নয় সেই সময়। মাঝেমধ্যেই খবর আসে। খুব সুপরিচিত কেউ; গতকাল হয়ত ছিলেন- আজ নেই।

ওই মৃত্যুর পরিবেশে দাদু অঙ্ককে আঁকড়ে ধরতে শিখেছিলেন। পরিচিত কেউ মারা যাওয়ার রাতগুলো দাদু রাতভর অঙ্ক প্র‍্যাক্টিস করে কাটিয়ে দিতেন।

অঙ্ক। রাতভোর হওয়া পর্যন্ত। যতক্ষণ না মগজ নুয়ে পড়ে অবশ হয়ে। ভয়বাহ ব্যাপার হল অনুশীলনী কম পড়তে শুরু করেছিল।

"দাদা, যাস না। যাস না। নতুন ক্লাসের নতুন বই আসুক, তখন না হয় অন্য বাহানা খুঁজে নিস"।
একান্নবর্তী পরিবার, মানুষজন বড় কম ছিল না।

অঙ্ক দাদুকে বিট্রে করেনি কখনও। দাদু অঙ্কের মধ্যে বাড়ির গন্ধ পেত হয়ত।

চন্দননগরের প্রাইভেট নার্সিংহোমে শুয়ে দাদুর শেষ দিনের গল্পের বেশ কিছুটা জুড়ে ছিল ক্রিকেট, বরিশাল, অঙ্ক আর সলিচিউড অফ আলেক্স্যান্ডার সেলকার্ক।

"অঙ্ক বইয়ের অনুশীলনী শেষ হয়ে আসছে, সে যে কী ভয় ভাই। অঙ্কের বাইরে কোথায় যাব? বরিশাল। জ্যাঠাইমা।  জ্যাঠতুতো খুড়তুতো ভাইবোনে মিলে গোটা বাড়ি সরগরম; সমস্ত শান্ত হয়ে আসে। সমস্তটা অন্ধকারে। নীচের একটা ঘরের একটা টেবিলে রাতের পর রাত কেটেছে। অনুশীলনীর পর অনুশীলনী। আমার ফেলে আসা দেশ বলতে ওই টেবিল চেয়ারটুকুই"।

দাদু অঙ্কের প্রতি আনুগত্য আমায় দিয়ে যেতে পারেননি। সেলকার্কের গল্প বলেছিলেন;

I am monarch of all I survey; 
My right there is none to dispute; 
From the centre all round to the sea 
I am lord of the fowl and the brute 
O Solitude! where are the charms        
That sages have seen in thy face? 
Better dwell in the midst of alarms, 
Than reign in this horrible place.

Comments

Anonymous said…
bhari bhalo

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু