Skip to main content

গানের খাতা

- ডাক্তার।
- আরে দত্তবাবু যে,কী ব্যাপার? এই শেষ বেলায় কী মনে করে?
- চিন্তায় ছিলাম এত রাত্রে তোমার চেম্বার খোলা পাব কী না।
- বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তা কী ব্যাপার? হাঁটুটা বেশি ট্রাবল দিচ্ছে?
- হাঁটু যেমন তেমন আছে হে ডাক্তার, সমস্যা অন্য।
- কী সমস্যা?
- জ্বর জ্বর ভাবটা কমছে না। টেম্পারেচার তেমন নেই, কিন্তু ভিতর ভিতর একটা যে ইয়ে রয়েই গেছে।
- দেখি, পালস দেখি দত্তবাবু।
- মড়ার আবার পালস কী হে?
- তাও তো বটে। আমারই মাথাটা গেছে।
- জিভ দেখি।
- মুখ দু'দিন ধরে এত তিতকুটে হয়েছিল...জিভটা খুলে রেখেছি। ভেবেছিলাম আজ বেরোনোর আগে পরে বেরোব কিন্তু মনে ছিল না। আসলে স্ট্রেস কমাতে কয়েক জিবি মেমোরি ব্রেন থেকে সরিয়ে আলমারিতে রেখে দিয়েছি কিনা, তা'তেই সমস্যা। সঠিক সময়ে সঠিক কথা কিছুতেই মনে পড়ছে না।
- পালস নেই, জিভ নেই। খানিকটা মেমোরিও মিসিং। মুশকিল হল তো।
- তোমার এদ্দিনের এক্সপিরিয়েন্স, দিয়ে দাও না দু'দাগ যা হয় কিছু।
- জ্বর জ্বর ভাব?
- প্রচণ্ড রকমের ম্যাজম্যাজ। গায়ে অল্প ব্যথা। একটা ভূত-বেল্যেডোনা গোছের কোনও বড়ি যদি...।
- নাহ্, এ যা দেখছি ওঝাও-হোমিওপ্যাথিতে কাজ হবে না...।
- সামান্য ফিভারের জন্য ছুরি কাঁচা ধরবে ডাক্তার?
- সিম্পটম তো তাই বলছে। ভিটামিন এম'য়ের অভাব, তা'তেই গায়ের টেম্পারেচার বাড়ছে।
- ভিটামিন এম?
- মড়াদের থাকে।
- এম ফর মড়া?
- না, এম ফর মিউজিক-মেমরি। আপনাকে গান টানছে। তাই এই জ্বর।
- উপায়?
- গানের কোনো স্মৃতিতে না ফিরতে পারলে মড়াদেহ ঝরঝরে হবে না মোটেও।
- গানের স্মৃতি? আছে, উপায় আছে। মায়ের গানের খাতাটা যদি...।

***

- খোকা! কাঁদছিস কেন?
- তোমার গানের খাতা মা! তোমার গন্ধ।
- খুঁজে পেলি তাহলে?
- সবাই বড় অযত্নে রেখেছিল মা তোমায়, আর এই এত দামী খাতাটাও..।
- তোর মায়ের গানের খাতা,  অন্যের কাছে দামী হবে কেন? তাও ভালো ওঝার কথায় ফেরত এলি..। দু'দণ্ড দেখতে পেলাম।
- ওঝা? হেহ্, আমাদের ও'দিকে ও ব্যাটাই আবার ডাক্তার। সেই বললে, আমার নাকি ভিটামিন-এম'য়ের অভাব। গানের সুবাস দরকার, নয়ত জ্বর কাটবে না। ভোর হল বলে, যেতে হবে। গাইবে? ওই যে 'তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মন রে আমার। তাই জনম গেল, শান্তি পেলি না রে মন, মন রে আমার'।

***

- মা, তোমার জ্ঞান ফিরেছে তা'লে। সুস্থ বোধ করছ?
- কে..কে?
- আমি গো, সুজন ওঝা। খোকাকে দেখে কেমন লাগল মা? তাকে গান শুনিয়ে মন শান্ত হল?
- খোকার...খোকার জ্বর...।
- সে এখন দিব্যি ফুরফুর করছে। ভাগ্যিস তুমি গানের খাতাটা এনেছিলে মা, নয়তো তাঁকে নামানো সহজ হত না গো..।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু