Skip to main content

নজরুল ও এয়ারকন্ডিশনিং



- ভাগ্যিস এয়ার কন্ডিশনিং মেশিনটা খারাপ ছিল! দেড় মাস মিটার কম উঠলো। কড়কড়ে কতগুলো টাকা বেঁচে গেল বলো তো!

- অসহ্য!

- গরমটা! তাই না?

- তুমি! তুমি অসহ্য!

- সঞ্জীব বলে গেছেন কষ্ট না করলে উঁচু মানুষ হওয়া যায় না।

- বেশ। তাহলে উঠোনে গিয়ে আধঘণ্টা ওঠবস করো। বেশ কষ্ট হবে। হাইট দু ইঞ্চি বেড়েও যেতে পারে।

- গরমকালে তোমার মেজাজটা চিরকালই একটু ইয়ে..।

- ইয়ে?

- চিড়বিড়ের দিকে থাকে। বৃষ্টি ছাড়া তোমার চলবে না। ঝমঝমে পাওয়ারপ্লে নয়। ঝিরেঝিরে পোস্ট লাঞ্চ সেশন।

- এত কথা বলো কেন?

- অবিশ্যি ওয়েদার আমার হাতে নেই।  তবে নজরুল আছে। শুনবে?

- বাবা গো!

- অরুণ রাঙা গোলাপ কলি,  কে নিবি সহেলী আয়..। সুরের চলকে ওঠাটা নোটিস করেছ? বাতাসে আতরের সুবাস ছড়িয়ে পড়ে যেন।

- কাল অফিস ফেরতা আমি বাপের বাড়ি যাবো।।

- ওই বুর্জোয়াতন্ত্রের আখড়ায়? যে'খানে পাশাপাশি দু'খানা এয়ার কন্ডিশনারের শনশন?

- ধুত্তোরিছাই! এসি চুলোয় যাক। কিন্তু সব সমস্যায় নজরুল ছুঁড়ে মারলে কাহাতক সহ্য হয়? বাথরুমের কলে জল আসছে না, বাবু গাইছেন নয়নভরা জল। মাসকাবারির লিস্ট বানাচ্ছি আর তুমি গ্লুকনডি গোলা গেলাস হাতে গাইছ "শুনি সাকি তোমার কাছে ব্যথা ভোলার দারু আছে"। আর নয়।

- আমায় ছেড়ে ইকনমিক টাইমসে মলাট দেওয়া পঞ্জিকা রাখা বাড়িতে যাবে?

- ভগবান, আমার যে মরণ কেন হয় না।

- জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কোন ব্যাটা কবে। মরণ ইস  অমোঘ অ্যান্ড অবিচল। ভগবানের কাছে কিছু চাইতেই হলে নজরুলে ভেসে যাওয়ার সুযোগ চাও!

- উফ মা গো!

- ভেসে যাওয়ার সুযোগ চাও।

- গাইব। কিন্তু খবরদার যদি তুমি টেবিল ঠুকে তাল দিয়েছ। ওই বেতাল ঘামের প্যাচপ্যাচের চেয়েও খারাপ।

- তোমায় ঠিক পারসুয়েড করেই ফেলি। দেখো, এমনভাবেই একদিন ঠিক এসির মেকানিক ডেকে ফেলব, ঝপাৎ করে! আজ বরং আমার গহীন জলের নদীটা ধরো। সে সুরে গায়ে দিব্যি বাতাস লাগে।

Comments

Unknown said…
অপূর্ব লিখেছেন
Unknown said…
আপনাকে অনেকদিন ধরেই পড়ছি। ধন্যবাদ আপনাকে

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু