- মড়া হিসেবে এই কবরখানায় থাকার একটা মস্ত সুবিধে আছে জানেন দত্তবাবু!
- সে'টা কী?
- আপনার মত গোটা গায়ে ওডোমস মেখে হদ্দ হতে হচ্ছে না।
- ফানি! যাক গে। ইন্টারভ্যিউ শুরু করতে পারি ডাক্তার? আমাদের হাতে সময় বেশ কম। অলরেডি আপনি আবছা হতে শুরু করেছেন।
- ওহ হ্যাঁ। আজ বড্ড হাওয়া। বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।
- এ'বার বলুন।
- কী?
- কবে ঘটনাটা ঘটল?
- কোন ঘটনা?
- মরে যাওয়াটা।
- ওহ। এই, বছর তিনেক।
- নর্মাল?
- সুইসাইড। তাই আমায় এত সহজে ট্র্যাক করতে পেরেছেন। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব দত্তবাবু?
- ক্যুইক।
- গোরস্থান ঘুরে বেড়িয়ে এমন ইন্টারভ্যিউ নিয়ে বেড়ানোর মানে কি?
- বই লিখছি। একশো ভূতের সাক্ষাতকার। গত বারো বছর ধরে এই টেকনিক ধরে দেশের অন্তত দেড়শো কবরখানা হানা দিয়েছি। এখনও পর্যন্ত বাহান্নটা ইন্টারভ্যিউ নিতে পেরেছি। আপনি ফিফটি থার্ড।
- আই সী!
- সুইসাইড করলেন কেন?
- বহুদিনের অপরাধ বোধ।
- আফসোস হয়?
- নাহ্।
- অপরাধ বোধটা কীসের, জানা যায়?
- আই কিল্ড আ চাইল্ড।
- কিল্ড? মার্ডার?
- চিকিৎসায় গাফিলতি। সোজাসুজি দায়টা আমারই ছিল। তবে খুব সুচারু ভাবে ব্যাপারটা চেপে দেওয়া হয়েছিল। আমার হোল্ড কম ছিল না। ইন ফ্যাক্ট, ঘটনাগা এমন ভাবেই ঢেকে দেওয়া হয়েছিল যে বাচ্চাটার বাপ মাও সন্দেহ করেনি, ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছিল।
- ও। কিন্তু আপনি অপরাধবোধটা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। আই সী।
- কত বছর রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারিনি। সামান্য চোখ লাগলেই মনে হত সেই খোকার মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বারবার। বড় হাসিখুশি ছিল। কতই বা বয়স, পাঁচ কি ছয়। মিস্টার দত্ত, আই কিলড হিম। স্রেফ গাফিলতি দিয়ে। তার চেয়ে ছেলেটাকে বিষ দিলে বোধ হয় আমার অপরাধ কম হত।
- ডাক্তার। ছেলেটার মুখ মনে পড়ে?
- স্পষ্ট, জানেন? স্পষ্ট। কটা চোখ। হাসলে দু'গালে টোল পড়ত। আর ডান গালে একটা কাটা দাগ।
- ঠিক এ'রকম ডাক্তার?
- মাই গড! অবিকল। আর আপনার চোখও তো...। ওহ।
- হেহ্। ডক্টর জোসেফ!
- টোল, দু'গালে...।
- আমার বাবা রিপোর্টার ছিলেন, সে'টা মনে আছে ডাক্তার? ওই ছোটবেলাতেও আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে আমায় রিপোর্টার হতে হবে। বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল আমায় নিয়ে অনেক, ওঁরা চাইত আমি খুব বড় হব। কিন্তু আপনি সমস্ত হিসেব গুলিয়ে দিলেন। তবে মরে দেখলাম আমার বড় হওয়াটা থামল না, এমনি রিপোর্টার হওয়াটাও বিশেষ ঝামেলার কিছু নয়। শুধু জ্যান্ত কারুর ইন্টারভ্যিউ নিতে পারি না। এ'টাই যা।
- কিন্তু..কিন্তু...ওই মশা মারার ক্রীম গায়ে রগড়াচ্ছিলেন যে বড়?
- নাহ্, ও জিনিষ মশা তাড়ানোর জন্য নয় ডাক্তার! ও'টা ব্রেনোলিয়া আর ছায়া প্রকাশনী মেশানো জাদুক্রীম, যা গায়ে রগড়ে ভূতও জীবনে বড় হয়ে উঠতে পারে, সাফল্য অর্জন করতে পারে।
- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না। - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো। - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত। - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র। - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...। - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা
Comments