Skip to main content

ডাক

- শুনুন।
- আমায় কিছু বলছেন ম্যাডাম?
- গোটা রাস্তায় আপনি তো একাই আছেন।
- কী দরকার?
- এত রাত্রে আপনি বাড়ির বাইরে কেন?
- প্রশ্নটা আমিও করতে পারি!
- করেননি। আমি করেছি।
- তা ঠিক।
- কেন? এত রাত্রে বাড়ির বাইরে কেন?
- আমার অসময়ে হাঁটতে ভালো লাগে।
- ভালো লাগে। ভালো লাগে। ভালো লাগে...।
- ও কী। অমন স্তোত্রপাঠ শুরু করলেন কেন। ভালো লাগতে নেই?
- আমার আলতা ভালো লাগে জানেন।  আর আলপনা। আর মিছিরি ভেজানো জল। আর বিকেল।
- ম্যাডাম, আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন?
- আপনার এই মাঝরাত্রে হাঁটতে ভালো লাগে কেন মশাই?
- মহামুশকিল। জেরা শুরু করলেন দেখছি।
- মাফ করবেন, আমার না মাথার ঠিক নেই।
- সে'টা দিব্যি বুঝতে পারছি। ইয়ে, কিছু মনে করবেন না আপনি যে ভূত নন, সে'টা টের পেয়ে আশ্বস্ত বোধ করছি। দিব্যি আপনার ছায়া পড়ছে ফুটপাথে।
- ভূত নই। তা ঠিক। তবে...তবে একটা সমস্যা হয়েছে!
- সমস্যা? কী রকম? বাড়ি খুঁজে পাচ্ছেন না?
- ব্যাপারটা একটু গোলমেলে...।
- দেখুন ম্যাডাম, এত রাত্রে এমন অন্ধকার রাস্তায় আপনি এই যে এসে গপ্প জুড়ে দিলেন, কোনও বদ মতলব নেই তো? 
- আমায় একটু সাহায্য করবেন প্লীজ?
- কী কেস? পুলিশ টুলিশ ইনভলভড আছে কি?
- আমি গোলমেলে নই, বিশ্বাস করুন।
- টাকা চেয়ে লাভ নেই, রাত্রে হাঁটতে বেরোনোর সময় আমার পকেটে মানিব্যাগ থাকে না।
- ব্যাপারটা তা নয়।
- তবে?
- আপনি..।
- আমি?
- আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায় আমি বড় মুশকিলে পড়েছি।
- সে কী! আপনি কি এখানে বোমাটোমা ফাটাবেন ভেবেছিলেন? আপনি কি উগ্রপন্থী?  তা হলে এমন বিউটিপুল তাঁতের শাড়ি পরা উগ্রপন্থী আমি এই প্রথম দেখলাম।
- আপনি ভুল বুঝছেন। ব্যাপারটা তেমন কিছু নয়।
- তবে? তবে ডাকলেন কেন?
- আপনাকেই তো ডাকার কথা ছিল।
- তাহলে অসুবিধেটা কোথায়? ডেকেছেন, বেশ করেছেন। ল্যাঠা চুকে গেল।
- সে'খানেই গড়বড়।
- কী'রকম?
- আমার আপনাকে ঘুমের মধ্যে ডাকার কথা ছিল। সে জন্যেই আপনার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পথেই আপনাকে দেখে কেমন গুলিয়ে গেল। এত রাত্রে না ঘুমিয়ে কেউ হাঁটতে বেরোয় মশাই?
- ঘুমের মধ্যে ডাকার কথা ছিল...কেন? আপনি...আপনি কে?
- আমি...।
- তুই..তুই...?
- চিনতে পেরেছিস বাবু? এত সময় লাগলো চিনতে? এতটা? তোর কী হয়েছে? স্কুল বাড়ির মাঠ, গঙ্গার ঘাট, তোদের ছাদের সন্ধ্যে; সব গুলিয়েছিস? এমন পাগলের মত রাস্তায় রাস্তায় টহল দিস কেন রাত্রে? মন খারাপ? আমায় বলিস না কেন? আমি দূরে চলে গেছি বলে আমায় বলতে নেই?
- এ সব পাগলামি!  ধুস! সবটাই স্বপ্ন। অথবা আমার মাথাটা সত্যিই গেছে।
- তুই ভুল দেখছিস না বাবু! ওই দ্যাখ, ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আমার ছায়া।
- তুই অন্য শহরের। অন্য কারুর। অন্য কোনও জগতের। তোর এখানে থাকার কথা নয়। আমি ভুল দেখছি। দূর হ।
- তুই ভালো নেই। তোর জন্য এসেছি। বিশ্বাস কর আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, সেই অন্য শহরে আমার আস্তানায়। কিন্তু নিজের স্বপ্নে অন্যের রিয়েলিটি ফুঁড়ে চলে আসা যায়, যেমন আমি আসতে পেরেছি।  আমি তোকে ঘুমের মধ্যে ডেকে নিতে এসেছিলাম। জানতামই না তোর এই মাঝরাত্রে রাস্তায় হেঁটে বেড়ানোর অভ্যাস হয়েছে। আমার এই আসা মিথ্যে নয়।  আয় বাবু, আয়।

**
অনিন্দ্যবাবু ব্রীজের রেলিং পেরিয়ে যখন পরম নিশ্চিন্তে ঝুপ করে নেমে গেলেন, তখনও নিশির "আয় বাবু আয়" ডাক তাঁর কানে ঝুমঝুমির মত বেজে যাচ্ছিল।

Comments

CHAYAN KUNDY said…
খুব ভালো
Unknown said…
অসাধারণ

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু