Skip to main content

অশোকবাবুর ডেডবডি


অশোকবাবুর আঙুলের ডগার  তিরতিরে কাঁপুনিটা অনুভব করতে পারছিলেন। পিঠের নিচে কাঠের খরখরে ভাবটাও দিব্যি টের পাচ্ছিলেন। কিন্তু চোখ খোলার সাহস হচ্ছিল না। চারিদকে হাউমাউ চলছে উত্তাল সুরে। এ সময় দুম করে চোখ মেললে ঢিঢি পড়ে যেতে পারে।

ইলেক্ট্রিক চুল্লিতে ঢোকার আগে এমন বদখত ভাবে বাঁশের ওপর শোয়ায় কেন? অসোয়াস্তি। অবিশ্যি মড়ার তো অসোয়াস্তি বোধ থাকতে নেই। মুশকিল হল অশোকবাবু দিব্যি টের পাচ্ছিলেন যে তাঁর জ্ঞান ফিরছে। অর্থাৎ তিনি মারা যাননি।

তবুও। স্যাট করে চোখ মেলতে সাহস হচ্ছিল না।


- বাবা!
- উঁউঁউঁ!
- ও বাবা!
- ধ্যাত্তেরি। সকাল থেকে একটানা বাবা বাবা বাবা। দেখছিস না আমি কাঁদছি? বাপ মারা যাওয়ায় দু'দণ্ড প্রাণ খুলে কাঁদব তারও উপায় নেই। তখন থেকে ব্যাবা ব্যাবা ব্যাবা। কী ব্যাপার?
- দা...দাদুর আঙুল নড়ল এই মাত্র। বাঁ হাতের!
- কী?
- দাদুর আঙুল নড়ে উঠল।
- চুপ কর স্টুপিড। যত্তসব বাজে কথা।
- ওই দ্যাখো, আবার নড়লো।
- কই!
- ওই যে। আবার!
- ও সামান্য হয়, মড়া মাঝেমাঝে নড়াচড়া করে। বাজে কথা না বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদ দেখি। কাজের বেলার লবডঙ্কা,  এ'দিকে যত আজেবাজে কথা।
- বাবা! দাদুর চোখের পাতা নড়ছে। হুই দ্যাখো।
- চোপ হারামজাদা ছেলে! উইল জাল করার হ্যাপা জানিস?
- উইল?
- ফের বাজে প্রশ্ন? এক চড়ে চোয়াল উড়িয়ে দেব। কাঁদ, দাদু মরেছে তোর! কাঁদ!


- এই যে! এ'দিকে শুনুন।
- বলুন।
- আমাদের মড়া চুল্লিতে কখন ঢুকবে?
- একটা পোড়ানো প্রায় শেষ হয়ে এলো বলে। আপনার বাবার বডির আগে আরও দু'টো মড়া আছে। আপনার বাবারটা তারপরে।
- ভাইটি। এরপরেই আমার বাবার বডিটা চুল্লিতে দিতে হবে যে।
- লাইনে আসতে হবে স্যার। নিয়ম!
- পাঁচশো দেব।
- শ্মশানে ঘুষফুষ চলেনা।
- ঘুষ না। উপঢৌকন।  পাঁচ হাজার।
- টাকা?
- ডলার দিলে ভাঙাবে কোথায়?
- বডি রেডি করুন।


- বাবা! দেখেছ?
- আবার কী!
- দাদুর ঠোঁটে বাঁকা হাসি।
- হাসি?
- হাসি! চুল্লির মুখে। তোমায় অপদার্থ বলার সময় যে হাসি দাদু হাসত, অবিকল সে'রকম।
- আজ তোকেই কোতল করব রাস্কেল!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু