Skip to main content

একটা সোমবার ও সাহাবাবু

***
সোমবার, সকাল পৌনে ন'টা।
***
- একটু শুনুন! প্লীজ।
- আমায় বলছেন?
- আজ্ঞে। এই কলমটা আপনার? আপনার সীটের পাশে পড়েছিল। দেখুন, রেনল্ডসের ডট।
- না।
- ও। আচ্ছা, এই স্টেটসম্যানটা আপনার?
- না। এ'টাও আমার সীটের পাশে পড়েছিল?
- আজ্ঞে। আর এই পাঁচটাকার কয়েনটা? এ'টাও ওই। সীটের পাশে।
- বাসের এ সীটের পাশে চাইলে রবীন্দ্রনাথের দাড়িও পাবেন বোধ হয়। ফাজলামো থামান তো মশাই। রুবি আসতে এখনও আধ ঘণ্টা। ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবেন না। 

***
সোমবার দুপুর একটা পনেরো
***

- স্যার, এ'খানে একটা সিগনেচার করে দিন প্লীজ।
- আমার পেনটা আবার ফাউন্টেন। লীক করছে। আপনার কাছে ডট আছে সাহাবাবু?
- সরি স্যার।
- ধ্যুত। কিছু চাইলেই সরি স্যার। আপনাদের মত ওল্ডটাইমারদের এই এক সমস্যা। নড়তেচড়তে আঠারো মাস। এই যদি অফিসের কোনও ইয়ং টার্ক, যেমন দত্তর কাছে ডটপেন চাইতাম সে ফস করে বের করে দিতো। বসকে দিয়ে কাগজ সই করাতে এসেছেন অথচ সঙ্গে পেন নিয়ে আসেননি?

***
সোমবার দুপুর সোয়া তিনটে
***

- সাহাবাবু!
- আজ্ঞে স্যার?
- আজকের স্টেটসম্যানে একটা জরুরী বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে সাতের পাতায়। জোগাড় করুন দেখি।
- স্টে...!
- স্টেটসম্যান!  নাম শোনেননি নাকি?
- না মানে, এত বেলায় স্যার। কাগজের স্টলেও বোধ হয়...।
- সেই এক দোষ! কোনও কিছু চাইলে আপনার কাছে পাওয়া যায় না। যাই দত্তকেই বলি স্টেটসম্যান জোগাড় করতে। আপনার কাছে কিছু চাওয়াটাই ভুল। এ'দিকে সামনের হপ্তায় প্রমোশনের সময় আপনার বদলে লিস্টে দত্তর নাম থাকলে মুখ হাঁড়ি করে বসে থাকবেন।
- প্রমোশন? সামনের হপ্তায়?
- লিস্ট বেরোচ্ছে। যাক গে, দত্তকে বলি স্টেটসম্যান জোগাড় করতে।

***
সোমবার বিকেল সাড়ে চারটে।
***

সাহাবাবু নিশ্চিত ছিলেন। এমন কিছুই একটা হবে।
বিকেলের সিগারেট বিরতি বস ও দত্তর সাথেই নেন তিনি। তিনজনে অফিস থেকে বেরিয়ে নগিন্দর পানওলার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ান। বসই রোজ তিনটে সিগারেট কেনেন সকলের হয়ে।
আজই পাঁচটাকার খুচরো কম পড়েছিল বসের পকেটে।
আজই সাহাবাবুর পকেটে একদম খুচরো ছিল না।
যথারীতি দত্ত হিপপকেট থেকে একটা পাঁচের কয়েন বের করেন নগিন্দরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে; একটা জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি বসের সিগারেটের ডগার দিকে এগিয়ে দিলে।
যথারীতি বসের মুখে "আমি জানতাম" গোছের বাঁকা হাসি।

***
সোমবার সন্ধ্যে পৌনে সাতটা
***

রুবির মোড়ের মুখেই হয়েছিল অ্যাক্সিডেন্টটা। সাহাবাবু অফিস ফেরতা জ্যামে ফেঁসে নাজেহাল। তবে বাস থেকে নেমে অকুস্থলে ঢুঁ মারতে ইচ্ছে হল না তার, অন্য কয়েকজনের অত্যুৎসাহির মত। এমনিতেও দিনটা বড় গোলমেলে গেছে কিনা। সকালের বাসের সেই অদ্ভুত ভদ্রলোককে আর একবার পেলে হয়!

সে অদ্ভুত ভদ্রলোকের দেখা অবিশ্যি সাহাবাবু পেতেই পারতেন, যদি তিনি বাস থেকে নেমে দুর্ঘটনাস্থলের দিকে যেতেন ।  বাসচাপা পড়া লাশের বুকপকেটে থ্যাঁতলানো সস্তা রেনল্ডসের পেন,এক হাতে ধরা রক্তমাখা স্টেটসম্যান। সে লাশে দেখে সাহাবাবু হলফ করে বলতে পারতেন যে লাশের পকেটে কোথাও একটা পাঁচটাকার কয়েন নিশ্চই আছে যা নগিন্দর পানওলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় তাঁর কাছে ছিল না।

সবার সব সয় না। আর সইলেই যে সব পেতে হবে, তেমন মাথার দিব্যি কেউ দিয়েছে কি? 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু