Skip to main content

বত্রিশের সিঁড়ি

পাক্কা বত্রিশখানা সিঁড়ি পেরিয়ে ছাদ।

আঠেরো নম্বর থেকে একুশ নম্বর সিঁড়িগুলো বাঁকের, এখানে সন্ধ্যের অন্ধকার অতিরিক্ত গাঢ়। ছাতের দরজার মুখে লাগানো ষাট পাওয়ারের বাল্বের আলো এ'দিকটায় বিশেষ এসে পৌঁছয় না।

এ'খানে সহজে ধাক্কা লাগে। এখানে নূপুরের রিনিক কানে এসে সুড়সুড় করে। এখানে অসাবধানে ফতুয়ার বোতাম ছিঁড়ে যায়। এখানে আঙুল টেনে ধরা সহজ।

- শোনো!
- ছাড়ো!
- ধরে রাখার কিছু আছে কি?
- আমার এই কড়ে আঙুল বড্ড পাপ করেছে কি?
- আমার সাথে কথা বলতে নেই?
- চিঠির উত্তর দিতে নেই?
- আলিস্যি।
- কিন্তু আমার অনেক কাজ। ছাড়লে বাঁচি। নীচে কত কাজ।
- আঙুল ছেড়েছি পাঁচ সেকেন্ড হয়েছে।
- যাক। বাবু সময়ের মূল্য চিনেছেন।
- খুব রোয়াব! তাই না?
- আহ্! মাই রিস্ট! জানোয়ার!

**

দিব্যি দোতলা বাড়ির কবজি মুচড়ে তাকে খতম করে দেওয়া হয়।

প্রমোটার আসে।
বুলডোজার আসে।
দু'টো ফ্ল্যাট আর নগদ টু পাইসের লোভ আসে।
গঙ্গা ঘেঁষা স্যাঁতলা দেওয়ালের বাড়ি মুছে রিভারভিউ অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়।

বত্রিশটা সিঁড়ি ধুয়ে পড়ে থাকে রুফটপ স্যুইমিং পুল। এলিভেটরে অন্ধকার থাকে না। মোচড়ানো কবজির যন্ত্রণা থাকে না।

শুধু বত্রিশ বছর পর টিং করে ভেসে আসে সিঁড়ি ভেজানো অন্ধকার, মোবাইল স্ক্রীন জুড়ে। ইন্টারনেটে আর একটা মেসেজ বই তো নয়।

"সে'দিন বাড়াবাড়ি হয়ে গেছিল। সরি। তবে ওই। আমি কেই বা। কেউ না"।

"তবে"?

"কবজি কদ্দিনে ঠিক হয়েছিল"?

"এখনও ভারি কিছু তুলতে পারি না"।

**

বত্রিশটা সিঁড়ির ওপারে ছাদ। গোল্ডফ্লেক। মোড়া। নয়নতারার চারটে টব। রাগ। গনগনে। তামাটে।
লাইটারের ফসরফস। কানের ইয়ারফোনে জগজিৎবাবু;
"...দেশ মে নিকলা হোগা চাঁদ" অকারণ বয়ে চলা সুর।
সে'খানে 'মরুক গে যাক'।

বত্রিশটা সিঁড়ির অন্যদিকে রান্নাঘর লাগোয়া বারান্দা। সেখানে হুঁশহাঁশ পায়চারী। সে'খানে অভিমান। সে'খানে দুপদাপ। সেখানে কথোপকথনের এক খণ্ডে হাতপাখা।
সে'খানে 'দেখে নেব। যেমন থাকার থাক।'।

অভিমান আর রাগ আঠেরো থেকে একুশ নম্বর সিঁড়ির অন্ধকারে দাঁড়ায়নি আর কখনও।

**

"উ মকান আমার চাই। উকে বুলডোজ না করিয়ে আমার মাল্টিস্টোরি রিভারভ্যিউ কন্সট্রাক্ট হোবে কেয়সে? মালিককে পারসুয়েড কোরেন উ মকান বেচে দিতে। এগ্রী না কোরলে, আর্ম ট্যুইস্ট কোরেন! অ্যাট এনি কস্ট, আই ওয়ান্ট দ্যাট হাউস"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু