Skip to main content

খোকার ঘুম

ধরুন দু'শো বত্রিশজন মিলে যদি নিজেদের মধ্যে টিনের ফাঁপা গদা আর অ্যালুমিনিয়ামের তলোয়ার নিয়ে খনখনাৎ করে যুদ্ধ শুরু করে; তার যে হইহইরইরই শব্দ।

সেই হইহইরইরইয়ের শব্দ ত-বাবু শুনতে পান যখন সাড়ে পাঁচ মাসের খোকাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য নিজের বুকে চেপে ধরেন।

ত-বাবু খোকা কোলে গাইলেন 'ঘুম যায় ও চাঁদ",  খোকা হৌহৌহৌ-খ্যেকখ্যেকখ্যেক করে জানান দিলে সে বেশ স্ফুর্তি অনুভব করছে।

ত-বাবু পায়চারির গতি ও ছন্দের ম্যাজিকে খোকার দুলুনি আর খ্যাক হাসিকে ঘায়েল করতে চাইলেন। খোকার চোখে চিকচিক ভেসে উঠলো। ও চোখ জোড়ায় খুঁজলে রাবণের স্যান্ডোগেঞ্জি পাওয়া যেতে পারে কিন্তু ঘুম? লেশমাত্র নেই।

"হরিদাসের বুলবুল ভাজা"র অন্তরায় এসে পায়চারীরত ত-বাবুর তন্দ্রা কাটলো খোকার ট্যাঁয়্যায়্যায়্যায়্যা শব্দে। আধ-ঘুমন্ত মানুষের পায়চারীর ট্র‍্যাজেক্টরিতে নিজের বিপদ আঁচ করেই গাঁকগাঁক করে চিল্লিয়েছিল সে।

ত-বাবু "ইয়ে কালি কালি আঁখে, ইয়ে গোরে গোরে গাল"য়ের কলিতে নিজের ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা শুরু করলেন।

অদ্ভুত। কাজ হল মাখনের মত। আকস্মিক।

"ম্যায় মিলি, তু মিলা"র আলাপ পেরোতেই খোকা নেতিয়ে পড়লে।

সেই চোখের পাতায় মেঘের ভেসে বেড়ানোর শব্দ পাওয়া  যায়। খোকার ঘুমে ল্যাতপেতে হয়ে আসায় শীতলপাটি পাতার যে মিহি হাফসেকেন্ডের শব্দ; তা স্পষ্ট অনুভব করতে পারেন ত-বাবু।

খোকার ঘুমন্ত মুখের ডাকনাম "বে অফ বেঙ্গল" দিয়েছেন ত-বাবু। ত-বাবু আজকাল মনেমনে নিজেকে  শ্রী স্বর্গদ্বার বলে ডেকে থাকেন।

Comments

rags said…
jodi kichu mone na koren, eta ki atmajibanimulok post?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু