Monday, October 24, 2016

বড়

হাওড়া ব্রীজটাকে লম্বায় বড় জোর একফুট মনে হচ্ছিল অনিন্দ্যর। এই যে হুগলীর জলে পা ডুবিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে তার গোড়ালিটুকুই ভিজেছে বড় জোর। তার পায়ের পাতার সামান্য নড়চাড়াতেই জলোচ্ছ্বাস স্ট্র‍্যান্ড রোড ভাসিয়ে দিচ্ছিল। ইতিমধ্যে অন্তত খানকুড়ি বাস ট্যাক্সি ভেসে গেছে।

তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়েছিল অনিন্দ্য। এত উপর থেকে সমস্ত মানুষকে খুদে খুদে পোকার মত মনে হচ্ছে, এ'দিক ও'দিক বেপরোয়া পা ফেলেলেই শয়ে শয়ে মরবে। দূর থেকে পুলিশের ফায়ারিংগুলো হাঁটুর আশেপাশে চোরকাঁটার মত বিঁধছে।

অর্ধেক কলকাতাটা দিব্যি দেখতে পারছিল অনিন্দ্য। তবে এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার মানে হয় না। কয়েক পা ফেলে সে এগিয়ে গেল লেকটাউনের দিকে।

অতিসাবধানে পা ফেলেও দু'একটা ফ্লাইওভার আর খান দশেক ফ্ল্যাটবাড়ির ধসে যাওয়া আটকাতে পারলে না সে।

মিতালি দাঁড়িয়েছিল বাড়ির ছাদে। খুদে, এই এত্তটুকু। আঙুলের ডগায় পিঁপড়ের মত নিয়ে নেওয়া যায় ওকে।
অত নিচে কিছুই ভালো করে দেখা যায় না, তবে অনিন্দ্য বেশ বুঝতে পারছিলো যে মিতালির চোখে জল। অনিন্দ্যর মাথায় একটা প্লেন গোঁত্তা খেয়ে টলে পড়লো। ভাগ্যিস প্লেনটা মিতালিদের বাড়ির থেকে দূরে গিয়ে ধসে পড়েছিল।

মিতালি বোধ হয় কিছু বলছিল, কিন্তু এত ওপরে ওর কথার আওয়াজ এসে পৌঁছচ্ছিল না। অবশেষে অনিন্দ্য মৃদু স্বরে জানালে;

"সরি মিতা, আসলে তোমার বাবা যেদিন বলেছিলেন যে তোমায় পেতে হলে আমায় আরও বড় হতে হবে, সে'দিনই কেমন মাথায় একটা রোখ চেপে গেছিল। বায়োকেমিস্ট মানুষ, কী করতে কী করে ফেলেছি। প্লীজ ক্ষমা করো"!

নতজানু অনিন্দ্যর হাঁটুর চাপে নিউটাউনের অর্ধেকটা ধুলোয় মিশে একাকার হয়ে গেছিল।

No comments: