Skip to main content

বিজয়ার ছাত



- দীপু!
- উঁ।
- কী রে?
- কী?
- ঘাটে এলি না যে বড়?
- এমনি।
- এমনি? ইয়ার্কি হচ্ছে? নান্টুমামা রেগে ফায়ার! তোর কাছে নাকি তুবড়ির ব্যাগ ছিল!
- উঁ?
- তুবড়ির ব্যাগ! তোকে দেওয়া ছিল। আর তুই এই ছাদে এসে একলা বসে! ও'দিকে ঠাকুর ভাসানোর সময় হাহাকার! নান্টুমামা তোকে পরের পাঁচটা ম্যাচ সাত নম্বরের আগে ব্যাটিং দেবে না বলেছে।
- ওহ্।
- দীপু।
- উহ্।
- কী?
- উহ্।
- সিদ্ধি তোর সয় না।
- মাও। তাই বলে।
- তবু খেলি কেন?
- সয় না বলে।
- ও।
- ঢাকে কাঠি পড়লে কানে আঙুল দিস। তবু গোটা দিন মণ্ডপে পড়ে থাকিস কেন?
- ওই। ধুপুরধাপুর। সয় না। বাবা রে! উফফ!
- সয় না বলে পড়ে থাকিস? কিচি?
- মেজমামা বলেছে। স্কচ মিঠে সরবত হলে তার কদর রইত না।
- বেশ।
- দীপু।
- হুঁ।
- কলেজ গিয়ে খুব লায়েক হয়েছিস, না?
- হুঁ?
- চিঠি লিখিস না।
- হুঁ।
- চিঠি বুঝি সয়ে এসেছে? তাই লিখতে মন সরে না?
- ধুস।
- আমি সয়ে এসেছি?
- ধুস।
- তুই নিধিরাম সর্দার হলে তোর এই ধুস হলো তোর ঢাল-তলোয়ার।
- ঝিমঝিম করছে। দুলছে।
- দিব্যি, তাই না?
- ভাসছে। দ্যাখ। ছাদটা। ওই বাতিটা।
- বাবু।
- হুঁ।
- কাঁপছে কিচি।
- কেন খাস?
- সয় না যে। তাই।
- শরীর কেমন করছে?
- জিভের তলাটা শুকনো। কাঠ। জানিস। আর বুকের ভিতরে...।
- ভিতরে?
- দিদার মাথায় জবাকুশুম তেল, তাতে সিঁদুর থ্যাবড়ানো সিঁথি। আঁচল কী ঘুচিমুচি নরম! সমস্ত মিলে একটা দলা পাকানো গন্ধ। বুকের ভিতরে। দিদার সেই গন্ধটা। গুলি পাকিয়ে ঘুরছে। ঘুরছে। দ্যাখ। ওই ডিশ অ্যান্টেনাটা দ্যাখ। ওই খানে ভূতের ভয়।
- এ নিয়ে তিন নম্বর পুজো।
- দিদা ছাড়া। করেক্ট। তুই মনে রাখিস।
- ঘরে চ' বাবু।
- পরে।
- কান ধরব?
- হিঁড়হিঁড় করে টেনে নামাবি?
- শরীর খারাপ লাগছে?
- নামাবি? হিঁড়হিঁড় করে?
- কী হয়েছে?
- তোর পায়ে রক্ত বাবু।
- আলতা।
- রক্ত।
- বেশ। তো?
- ভয় কিচি। ভয়! সয়ে আসবে কী করে?
- ভয়? শুধু ভয়? ছেলেবেলা থেকে হোমিওপাতি ওষুধে বড় হয়ে উঠলে খোকারা এমনই নেদু হয়।
- কিচি।
- হুঁ?
- অর্জুনদা বড় ভালো।
- বড্ড পেকেছিস।
- আইআইটি কিচি। আইআইটি। কোথায় আইআইটি আর কোথায় মোতিঝিল। কাকুর অর্জুনদার সাথে ইন্টারেস্টিং সব সাব্জেক্টে কথা হয়, ফিজিক্সের নোবেল, গড পার্টিকল কত কী! আর আমার সাথে বছরে একবার কথা "পড়াশোনায় অষ্টরম্ভা আর এদিকে চাঁদা চাইতে আসা হয়েছে"। এবারেই দ্যাখ। বিল কাটলাম আড়াইশো। মাধ্যমিকের নম্বর নিয়ে খোঁটা দিয়ে রফা করলেন পঁচিশ টাকায়। তাও পাঁচটাকার খুচরো ছিল না তাই ডিউ স্লিপ রেখে দিয়ে যেতে বললেন।
- তো?
- অর্জুনদা চাঁদা চাইতে বেরোয় না।
- বড্ড বাতেলাবাজ। অত ধুপুরধাপুর কথা সহ্য হয় না।
- ঢাকও তো তোর সহ্য হয় না। তবু মণ্ডপে পড়ে থাকিস। ওর বাতেলাও সয়ে যাবে।
- কবিরাজি তোর নাকি সইত না। কলেজ কেটে, পাড়ার ক্রিকেট ম্যাচ কামাই করে তিন্নির সাথে গিয়ে ফিশ কবিরাজি তো দিব্যি গিলে যাচ্ছিস। দিনের পর দিন।
- দু'দিন।
- পিঠের চামড়া তুলে নেব।
- পাঁচ দিন।
- পাঁচ?
- কিচি! হাত ছাড়!
- জুডোওয়ালির সাথে বাওয়ালি?
- আট দিন।
- গুণধর।
- অর্জুনদা তোকে কথোপকথনের পুরো সেট দিয়েছে।
- তাই? তাই আমি সয়ে এসেছি? কিন্তু তিন্নির সাথে বাবুঘাট সয়নি?
- হাত। কিচি! ছাড়!
- নুন হলুদ লাগাতে পারবে? তিন্নি?
- অর্জুনদার ওয়ালেটে তোর ফটো!
- মিথ্যে কথা।
- এই দেখ।
- এ'টা কী!
- অর্জুনদার মানিব্যাগ।
- তুই পকেট কেটেছিস?
- মণ্ডপে তোর ছবি মানিব্যাগ থেকে নিজের বন্ধুদের দেখাচ্ছিল। রাস্কেল। ভাসানের ভিড়ে পকেট থেকে ঝেড়ে পালিয়ে এসেছি।
- ও আইআইটি, তুই মোতিঝিল। ওর মানিব্যাগ আর তোর পকেট কাটা। ছিঃ বাবু।
- মর তুই।
- কত আছে?
- কী কত?
- ন্যেকু। মানিব্যাগে। কত টাকা?
- রহিস। দেড়!
- আমাদের ছয় মাসের কাটলেট আর বাবুঘাট। তিন্নি বাদ, কেমন? বাবু?
- মরে যাস না কেন?
- তোর সিদ্ধি সয় না, তাও খাস। আমার মতিঝিলওলাদের সহ্য হয় না, তবু তোকে ধরে রাখতে হয়। মরে যাব কই?
- ও। হুঁ।
- বাবু, ঠোঁট সয়?
- বদ মেয়ে।
- সয়?
- না।
- শুভ বিজয়া।
- আমি তোর চেয়ে দু'দিনের বড় কিচি। প্রণাম কর।

Comments

Anonymous said…
এমন সাহিত্য পড়ার পর মুখের দাত দিয়ে ছয়গুটি নামক গ্রাম্য খেলাটা খেলতেছি -_-

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু