Skip to main content

স্পা

শুভ্রশঙ্খ মাস শুরু করে স্পা দিয়ে। শরীর মন ঝরঝরে হয়ে যায়। শিউলি বছরভর শহরে না থাক, অন্তত সে সুবাস মনের মধ্যে হুহু করে। জ্যান্ত লাফানো কইয়ের মত স্ফুর্তি থাকে বুকে।

আসল বিউটি ট্রিটমেন্ট তো মনকে মালিশ করেই শুরু, আর সে থিওরি মেনেই মাসের প্রথম রোববার সকাল সকাল নিউ সানফ্লাওয়ার সেলুনের বেঞ্চিতে এসে বসে সে।

স্পা স্রেফ ফেল কড়ি মাখো তেল কিস্সা নয়। হুড়মুড়ে মেজাজে অফিসটাইমে মিনিবাস ধরা যায়, স্পাতে তা চলে না।

সানফ্লাওয়ার সেলুনের বেঞ্চিতে বসার আগেই মনোকে ইশারায় নিজের উপস্থিতি জানান দেয় শুভ্রশঙ্খ। মনো, মানে মনোরঞ্জন মাইতি। কাঁচির কাইজার, মালিশ মারাঠা ইত্যাদি নানা উপাধি মনোরঞ্জনের পাওনা বলে শুভ্রশঙ্খর বিশ্বাস। কিন্তু বাঙালি যোগ্যতার দাম দিতে শেখেনি, তাই আজও মনোকে পুজোর বখশিশ চাইতে হয়।

বেঞ্চির সামনে রাখা নিচু কাঠের টেবিলে স্তুপ করে রাখা আনন্দলোক। আনন্দলোক হচ্ছে প্রি-স্পা রিল্যাক্সেশন টূল, শুভ্রশঙ্খ সে সম্বন্ধে অবগত। টুকরো টলিউডি গসিপ, ক্লাসিকাল যুগের উত্তম যোগ ব্যায়াম করছেন গোছের কিছু ছবি, কিছু চটুলরচনা, কিছু মনোগ্রাহী ছবি; এ'সবে নার্ভ আরামদায়ক ভাবে শীতল হয়ে আসে।

খান চারেক আনন্দলোকের পাতা ফরফরিয়ে উলটে যেতে না যেতেই মনের চিনচিন কমে আসে। অন্যদিকে এমপি থ্রি প্লেয়ারে কুমার শানুর গান একটানা বেজে চলে, আনন্দলোককে যোগ্য সঙ্গত দেয় সে'সব গান।

"তু পেয়ার হ্যায় কিসি অউর কা, তুঝে চাহতা কোই অউর হ্যায়,
তু পসন্দ হ্যায় কিসি অউর কি, তুঝে মাঙ্গতা কোই অউর হ্যায়"।

রিল্যাক্সিং মেলোডি।

হাঁটুতে তাল ঠুকে চলে শুভ্রশঙ্খ। মিনিট কুড়ির মাথায় মনোর ডাক আসে। "আসুন"!

চেয়ারে বসে শুভ্রশঙ্খ চোখ বুজে ফেলার মানে মনো জানে। দাড়ি, চুল কাটা নয়, মাথা মাসাজ। শুভ্রবাবু অবশ্য বলেন "হেড স্পা"।

মনোর স্ট্রেন্থ হলো যে যে তালুতে কম আর আঙুলে বেশি খেলে। ব্রুট স্টেন্থ নয়, শুভ্রশঙ্খ জানে যে ফিনেসটাই এ যুগে কোয়ালিটি আউউটপুটের মূলমন্ত্র।

"কত যে সাগর নদী"তে কুমারশানু ডুব দেওয়ার সাথে সাথে মনোর হাতের দুপদুপে অবশ হয়ে আসে শুভ্রশঙ্খ। নবরত্নের দু'টো ছোট পাউচ  কেটে মাথাময় বরফ
নির্বাণ ছড়িয়ে দেয় মনো। সে আরামে স্বয়ং ঈশ্বরও মনোযোগী হয়ে ওঠেন।

হেড-স্পা করানোর পর দিন তিনেক আনন্দবাজার বা নিউজচ্যানেলগুলোকে এড়িয়ে চলে শুভ্রশঙ্খ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু