Skip to main content

যত্তসব

-   জমিদার মশাই...

-   তুমি বড় কথা বল নায়েব

-   আজ্ঞে গোস্তাখি মাফ কত্তা

-   ফের কথা বললে ?

-   ক্ষমা-ঘেন্না করেন কত্তা।

-   ফের কথা বলে! তুমি শালা শুয়োরের বাচ্চা একটা। তা চুপ করে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছ কেন ? বল, অমন নেচে নেচে এলে কি বলতে ? উফ, দু দণ্ড দেশের কল্যাণের কথা ভাববো তার উপায় নেই।

-   আজ্ঞে বলবো জমিদারমশাই ?

-   কি মাকাল রে বাপ, এই তোমায় আমি পয়সা দিয়ে পুষি ? বলবে না তো কি নেত্য করবে ? তুরন্ত বল নয়তো লাটসাহেব কে বলে তোমায় জেলে দেব।

-   আজ্ঞে কত্তা, একটা ছেলে এসেছিল।

-   ব্যাস, অমনি তোমায় আমি রাজচক্কোত্তি উপাধি দিয়ে দিই আর কি।


-   না মানে...

-   ছেলেটা কে ? কি চায় ?

-   আজ্ঞে হরেন। আপনার প্রজা। বিশু কুমোরের ছেলে।

-   বিশু ? যে হারামজাদা গত বছর অক্কা পেলে ?

-   যে আজ্ঞে।

-   তার সাহস কি করে হয় সে জমিদারের কাজের সময় এসে ব্যাঘাত ঘটায় ? এ যে রাজকর্মে বাঁধা; কত দেশসেবার কথা ভাবছিলাম। এই বেশ্যার পো এসে দিলে সব ভেস্তে...

-   আজ্ঞে বিশেষ অভিযোগ নিয়ে এসেছে...

-   এই এদের রোগ। অভিযোগ। টাকা নেই, খাওয়ার নেই, পাছায় ফোঁড়ার ওষুধ নেই। হারামজাদাগুলোর পাল্লায় পড়ে আর দশের উপকার করা হয়ে ওঠেনা। এই সেদিন ভাবলাম পুকুরপাড় বাঁধিয়ে সেখানে দোলনা বসাবো, তা না! গাধাগুলো বলে কি না ‘ জমিদার মশায়, ক্ষেতে জল নাই, খাল খুঁড়ে দেন”। আহাম্মকের দল। যে ভাবে কোম্পানিকে ট্যাক্সো দিতে হচ্ছে, অমন সখের কাজ করলে আমার চলে ? তার ওপর আবার আমার ছোট মেয়ে বায়না ধরেছে চড়কে মেলা বসাতে হবে – সেও মেলা খরচার ব্যাপার। তা এ ছেলে চায় কি ?

-   আজ্ঞে, ভারি নিদারুণ অভিযোগ।

-   কে বলেছে নিদারুণ ?
-   আজ্ঞে না মানে...আমি বললাম মানে...

-   চোপড়াও, আমি তোমায় বলতে বলেছি দারুণ না নিদারুণ ?

-   গোস্তাখি মাফ হুজুর।

-   ছেলেটা চায় কি ?

-   বিচার!

-   বিচার চায় মানে ? আমি কি অবিচার করেছি যে বিচার চাইবে ? ওর এত সাহস হয় কি করে ?

-   আজ্ঞে, গতকাল ওর দিদিকে নাকি জমিদার বাড়ির দুই লেঠেল মিলে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করে তারা নাকি সে মেয়েকে খুন করেছে...

-   কি বলে সে বেশ্যার ছেলে ? আমার লেঠেল তার দিদিকে ধর্ষণ করেছে ? খুন করেছে ? আমার লেঠেলের নামে বলেছে মানে তো আমার নামেই খিস্তি করেছে। শালাদের জন্যে এত করি আর শালা আমাকেই হুড়কো দেবে ?

-   আজ্ঞে না হুজুর, আপনার কাছে তো সে বিচার চাইতে এসেছে।

-   কিসের বিচার হে ? ওসব ছোটলোকের মেয়ের ছোটলোকামির মধ্যে আমায় জড়ানো ? হারামজাদা! জমিদার কে নিচু করবে ? আমার লেঠেলে তার দিদিকে মেরেছে ? মিথ্যে কথা। বল নায়েব, ছেলেটা মিথ্যুক কি না ?

-   আজ্ঞে একবার যদি ওর কথাটা...

-   তুমি কি শালা বিদ্রোহ করছো নায়েবের বাচ্চা ? তোমার পেটে পেটে এই ? দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষছি আমি ?

-   আজ্ঞে মাফ করুন কত্তা। ছোট মুখে বড় কথা বলে ফেলেছি।

-    তোমার এ মাসের মাইনে থেকে দেড় টাকা কাটা গেল। অকাজের লোক আমি সহ্য করতে পারিনা।

-   আপনার শাস্তি শিরোধার্য কত্তা।

-   শোন, এসব অভিযোগ জমিদারের কাছে আসা ভালো নয়। এসব জমিদারের নামে কলঙ্ক লেপার চেষ্টা। হারামজাদা প্রজাগুলোর অভ্যাসই এমন, যে পাতে খাবে সে পাতেই হাগবে। কোনও কিছুতে এরা খুশি নয়, খেতে দিলে বলবে, বিছানা দাও। বিছানা দিলে বলবে মেয়েদের সম্মান বাঁচাও। এদের হাজার বায়নাক্কা। আবার এই মুখ্যুগুলোর পিঠে দু ঘা চাবুক পড়লেই বাপধনরা বাপ বাপ বলে বলে স্বীকার করে নেবে যে আমার জমিদারীতে তারা কত সুখে আছে। কি নায়েব, তাই না ?

-   আজ্ঞে জমিদার মশাইয়ের জমিদারী যে রামরাজ্য। লোকে যে আপনাকে ধন্য ধন্য করে।

-   লাটসাহেব আমায় রায় চৌধুরী উপাধি দিলেন বলে। আরে বাবা রাজ্য পরিচালনা কি চাট্টিখানি কথা।

-   ঠিক বলেছেন কত্তা মশায়।

-   আর এই ছেলে বলে কি না আমার পেয়াদায় তার দিদিকে...ছিঃছিঃছিঃ। নোংরা মায়ের পো কোথাকার। জমিদারের নামে খেউর না করতে পারলে এদের পেটের ভাত হজম হয় না।

-   আজ্ঞে যথার্থ বলেছেন। তা ছেলেটাকে বিদেয় করি তবে ?

-   শোনো নায়েব। ছেলেটাকে দু টাকা দিয়ে বল ফুর্তি করতে। আর সেই টাকা লেঠেলদের মাইনে থেকে কেটে নাও। দু টাকাতেও যদি হারামজাদার দিদির শোক না ঘোচে, তো ওকে জমিদারবাড়িতে চুরি করতে ঢোকার অভিযোগে লাঠি পেটা কর।

-   আজ্ঞে ?

-   হাঁ করে দাঁড়িয়ে মুখ দেখছো কি ? যা বললাম তাড়াতাড়ি কর। আমায় একটু শান্তিতে দেশের উপকারের কথা ভাবতে দাও দেখি। দেশের অভাগাগুলোর চিন্তায় আমার রাতের ঘুম গোল্লায় গেছে আর এরা এলেন এদের যত খুচরো পাপ নিয়ে। যত্তসব! 

Comments

IshitaUnblogged said…
Bhishon bhalo laglo... tobe shob shomoy tomar lekha porte bhaloi laglo. Keep excercising your 'Bong pen' - it's mightier than the Bong adda :)
Anonymous said…
Bhalo laglo boli ki kore bolo to.... tobe SABASH boltei hoy

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু