Skip to main content

অবিচুয়ারি নয়

-      কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে আপনি হ্যাঁ বলাতে চাইছেন ?
-      ঠিক তাই।
-      বেশ। আমি রাজি।
-      রিয়েলি ?
-      সিরিয়াসলি বলছি। শুধু একটা প্রশ্ন সুখদেও বাবু। এত পোষা গুণ্ডা থাকতে, আপনি আমার মত পাতি গোয়েন্দাকে দিয়ে এই খুনটা কেন করাতে চাইছেন ?
-      কারণ, নিয়মিত ওনার কাছে যাওয়ার সুযোগ আপনার রয়েছে অনিন্দ্যবাবু।
-      ও, সে খবরও রাখেন দেখছি।
-      আলবাত। আমি জানি যে সুনেত্রা-দেবী আমার ক্লায়েন্টের ব্যাপারে খবর আদায় করতে গোয়েন্দা লাগিয়েছেন। আর এমন গোয়েন্দা লাগিয়েছেন যার সাথে অন্য কোনও ফিল্ম অ্যাক্টর বা সেলিব্রেটির বিন্দু মাত্র যোগাযোগ নেই। পুলিশ যাকে পাত্তা দেয় না। আমরা এও জানি যে উনি আর ওনার মেয়ে ছাড়া আপনার এই নতুন তদন্তের খবর কেউ জানে না। তাই আমি ঠিক করেছি, যে ওনার ফেউ গোয়েন্দা দিয়েই ওনাকে খুন করাবো।
 
-      কিন্তু আপনারা ওনাকে মার্ডার করতে চাইছেন কেন ?
-      আমার ক্লায়েন্টের ওনার সাথে পুরনো দুশমনি আছে অনিন্দ্যবাবু। ডিটেল্‌স জেনে আপনার কাজ কি ?
-      বেশ।
-      কাজটা আপনাকে এ মাসের মধ্যে করতে হবে।
-      কিন্তু ধরা পড়লে যে আমার কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে।
-      কাজটা না করলে আপনি আজকেই শেষ হয়ে যাবেন। তবে ধরা পড়বেন কেন ? ওনার জলের গেলাসে দুটো বড়ি মিশিয়ে দেওয়া। সিম্প্‌ল।
-      ওকে।
~~~

-      প্রাউড অফ ইউ অনিন্দ্যবাবু
-      টু পাইস ছাড়ুন সুখদেও বাবু। সুনেত্রা দেবীর মত একজনকে সরিয়ে দেওয়া...
-      হবে অনিন্দ্যবাবু, অফ কোর্স হবে। আমার ক্লায়েন্ট আপনাকে সোনায় মুড়ে দেবে।
-      আর সোনারপুরে ফ্ল্যাটটা ?
-      অবশ্যই।
~~~

-      বাঃ, তোমার নতুন ফ্ল্যাটটা তো চমৎকার অনিন্দ্য।
-      সবই আপনার আশীর্বাদ ম্যাডাম
-      আমার কেন ? সুখদেব সিং’য়ের বখশিশ বল। আমায় খুন করবার বখশিশ।
-      হে হে। সে যে কি ঘাবড়ে গেছিলাম। যাক, শেষ পর্যন্ত মান রক্ষা করতে পারলাম...
-      শুধু এমন একটা গোয়েন্দা যদি পঁয়ত্রিশ বছর আগে আমি পেতাম, তাহলে আমায় এমন লুকিয়ে কাটাতে হত না জীবনটা..
-      ইয়ে, আমরা কিন্তু ভাবতাম আপনি রোম্যান্স জিইয়ে রাখবার স্বার্থে...
-      ধুর,সেলুলয়েডের যত রোম্যান্স পাবলিককে ঘিরে রে বাপু। তাঁদের থেকে লুকিয়ে থেকে রোম্যান্স খুঁজবো কি ঘরের আসবাব-পত্রে ?
-       কিন্তু আপনি প্রটেকশন চান নি কেন কখনও পুলিশের কাছে ?
-      যে আমায় খুন করতে চাইতেন,তাঁর হাত ভারি লম্বা। তুমি আন্দাজও করতে পারবে না কতটা লম্বা। লোকটার কেন যে ধারণা হয়েছিল যে ওর বোনের সিনেমার কেরিয়ার আমার জন্যেই টেক অফ্‌ করতে পারেনি; তা ঈশ্বরই জানেন। ইন ফ্যাক্ট আমার ধারনা ওর আসল ইচ্ছে ছিল অ্যাসিড ছুঁড়ে আমার মুখ পুড়িয়ে দেওয়ার। আমার অজ্ঞাতবাসে তিতিবিরক্ত হয়ে শেষে খুনের প্ল্যান ফাঁদে। সিনেমার গ্ল্যামার গায়ে মাখার যে এমন নিদারুণ খেসারত দিতে হবে...
-      বুঝলাম। তবে একটা জিনিষ। আপনার এই অজ্ঞাতবাস নিয়ে কিন্তু অজস্র গপ্প-গাছা বাজারে উড়ত...
-      আমিও খবর পেতাম। আমার দুই নাতির কাছ থেকে। আনন্দবাজার থেকে।  
-      গৃহ-মন্ত্রী আপনাকে দেখতে চেয়ে নিয়মিত নার্সিং হোমে আসায় বেশ চিন্তা হয়েছিল... যদি কিছু ফিসি স্মেল করতেন ?
-      না না, ফুলু’র চেহারা আমার হয়ে প্রক্সি ভালোই দিত, আমি নিশ্চিত ছিলাম। পিসতুতো বোন হলে কি হবে, মুখের আদলে বেশ মিল। অন্তত আমাদের এই বয়সে দুজনকে দেখলে প্রায় যমজ বোন মনে হয় না ?
-      ঠিক তাই, আমি তো বেশ ঘাবড়েই গেছিলাম প্রথমবার আপনাদের পাশাপাশি দেখে।
-      দুজনে পাড়ায় যাত্রা করেছি একসাথে, ছোটবেলায়। তবে কি জানো অনিন্দ্য, অত্যন্ত খারাপ লাগছে এই ভেবে যে ওর মরণ রোগ আর ওর মৃত্যুটাকে আমি আমার নিজের স্বার্থে এমন ভাবে ব্যবহার করলাম।
-      উনি বেঁচে থাকতেও তো ওনার জন্যে আপনি কম করেননি। আপনি যদি ওকে গ্রাম থেকে তুলে এনে আশ্রয় না দিতেন, তবে তো কবেই উনি...
-      হ্যাঁ, গত তিরিশ বছরে ওই তো আমার ছায়া-সঙ্গী ছিল। আর হ্যাঁ, ডাক্তার শর্মার সাহায্য ছাড়া এসব কিছুই সম্ভব হত না।
-      তা তো বটেই।
-      আই আম গ্রেট-ফুল ফর ইওর হেল্প অনিন্দ্য।  এখন আমি মনের সুখে ঘুরে বেড়াতে পারি। অন্তত যে কটা দিন আছি। থ্যাঙ্কফুলি আমার শরীরের কল-কব্জা এই বয়সেও ঝুরঝুরে হয়ে যায়নি। আসলে এক সময় শরীরের যত্ন তো কম করিনি। আরও বছর পাঁচেক ফুর্তিতে কাটাতেই পারবো।
-      নিশ্চয়ই পারবেন সুনেত্রা ম্যাডাম।
-      আচ্ছা একটা কথা, সুখদেও বা তাঁর মক্কেল টের পেয়ে গেলে ?
-      অনিন্দ্য সান্যালকে অত কাঁচা ভাববেন না সুনেত্রা-দেবী। ইন ফ্যাক্ট, সামনের সপ্তাহে একটা সেকেন্ড মারুতি গাড়ি জুটবে সুখদেও’র মক্কেলের কাছ থেকে। উপরি বখশিশ।
-      একটা মুশকিল জানো, আমি যে এখন মনের সুখে ঘুরবো বেড়াবো, তারও উপায় নেই। সঙ্গী কই ? মেয়ে বা নাতিরা, সক্কলেই তো সিনে-সেলিব্রেটি ? তুমি এই বুড়িটাকে নিয়ে বরং একটু ঘুরিয়ে আনবে মাঝে মাঝে ?
-      বেশ তো। মাঝে সাঝেই আপনার বোলপুরের নতুন আস্তানায় হানা দেওয়া যাবে। কেমন ?
-      দারুণ!  

Comments

আমি তোর মত মাথা খুব কম দেখেছি।
sd said…
কুচক্রী সেপটিক মন।। তবে ইয়ে ম্ ন্দ নুয়
Anonymous said…
taanke eibhabe goyenda goppe niye asha..

lekhok tomay selam

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু