Skip to main content

শুভ ২৬ জানুয়ারি

                       প্রথম ও শেষ দৃশ্য
  
-   দাদা,  আমার পিছনে টিকটিকি তুই লাগিয়েছিস ?

-   সে জবাব কি আমি তোকে দিতে যাব ?

-   আমার পিছনে টিকটিকি লাগাবি তুই, আর জবাব দেবে কি আমাদের বাবা ?

-   নিজেকে আর নিজের সংসারকে বাঁচানো তো আমারই দায়িত্ব পিকু। তুই নিজে বখে ক্ষান্ত হলি না, এখন আমার সর্বনাশ করতে চাস ?

-   তোকে কাঠি করতে আমার বয়ে গেছে। উত্তরপাড়ার জমিটা আমায় লিখে দে, ল্যাঠা চুকে যাক।

-   বাবার উইল’য়ে যে হিসেব স্পষ্ট আছে, তা নিয়ে আমায় উত্ত্যক্ত করার কি মানে পিকু ?
-   শাট আপ।

-   মুখ সামলে, আমি তোর চেয়ে বয়সে বড়।

-   তাই বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস? বাপের পা চেটে ওই উত্তরপাড়ার জমি তুই অন্যায় ভাবে বাগিয়েছিস।

-   বাপটা একা আমার ছিল না পিকু।

-   উইলটা পড়বার আগে অন্তত আমারও তাই ধারনা ছিল রে দাদা। হাউ কুড আওয়ার ফাদার ডু দিস টু মি ?

-   বাবার অমতে বাড়ি ছেড়ে ফোঁপর দালালি করবার সময় মনে ছিল না ?

-   বাড়ি না ছেড়ে আমার কোনও উপায় ছিল না দাদা। এ বাড়িতে থেকে থিয়াটারের কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল। তুই জানিস না সেটা ?

-   নন-সেন্স। আমি নিজে তোকে আগলে রাখতাম। বাবা রাগ করতেন, কিন্তু আমি ঠিক সামলে নিতে পারতাম। আর তুই ইডিয়ট শুধু নিজেই বাড়ি ছাড়লি তা নয়, বিনি’টাকেও ফুঁসলে নিয়ে গেলি।

-   বিনি স্বেচ্ছায় আমার সাথে গেছিল দাদা। ও বরাবরই ছোড়দা ছোড়দা বলে পাগল হত। অ্যান্ড বিনি কুড সি যে আমার সঙ্গে তুই আর বাবা অন্যায় করছিস।

-   তাহলে বিনির ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করেছিলি কেন তুই ? নেহাত আমি ইন্টারফেয়ার করে বিনিকে তোর কবল থেকে বের করে এনে একটা ভালো বিয়ে না দিলে; এতদিনে  ভেসে যেত মেয়েটা।

-   বিনি নিজেই বিয়েটা করেছিল দাদা। তাছাড়া বিনিকে তুইও আমার বিরুদ্ধে ইন্সটিগেট করেছিলিস। থাক সে সব পুরনো কথা। সে ভারি টানাপড়েনের সময় ছিল। নিজের ফ্রাসট্রেশন ওর ওপর চাপাতে গিয়ে আমি ভুল করেছিলাম; সেটা তো আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু দাদা বিশ্বাস কর, আমি দগ্ধে মরি অপরাধ বোধে। ও তো আমারও ছোটবোন।

-   তোর সেন্টিমেন্ট তোর কাছেই রাখ। আর হ্যাঁ, আমি তোর পিছনে টিকটিকি লাগিয়েছি। বাধ্য হয়েছি লাগাতে কারণ তুই আমার পিছনে গুণ্ডা লাগিয়েছিস।

-   মিথ্যে কথা।

-   মিথ্যে ? উত্তরপাড়ার জমিটার খালের দিকে হুলো মস্তান এসে ঘাঁটি গেঁড়ে রয়েছে। হুলো মস্তান যে তোর খাস লোক সেটা আমি জানিনা ? ওই তিন বিঘৎ জমির আশা তো আমি ছেড়েই দিয়েছি। তবে মন দিয়ে শুনে রাখ পিকু, তুই আর হুলো মিলে যতই ষড়যন্ত্র করিস, আর এক ইঞ্চি জমিও আমি ছাড়বো না। প্রয়োজনে রাইটার্স’য়ে যাব। কিন্তু তোর বাড়াবাড়ি আমি ঘুচিয়ে ছাড়বো।

-   প্রথমত, বেশ করছি হুলোকে লাগিয়েছি। ও জমি আমার হকের। উত্তরপাড়ার জমির এক ইঞ্চি তোর পাওয়ার কথা নয়। মা যাওয়ার আগে বার বার বলে গেছিলেন যেন ওই জমি আমি পাই। আর দ্বিতীয়ত, ওই গোটা জমি আমি হাতড়ে ছাড়বো। তুই যত খুশি টিকটিকি লাগা, রাইটার্সে গিয়ে হত্যে দিয়ে থাক। ও জমি আমি নিয়ে ছাড়বো।

-   এসব করে তুই কি পাস পিকু ? আমি সব খবর পাই। তোর নিজের এত অনটন চলছে। ছেলেটার পড়াশোনার খরচ ঠিক করে যোগাতে পারছিস না। এসব ছেলেমানুষি এখন ছাড় না ভাই ?

-   শোন দাদা, তোমার এই নাক গলানো অভ্যাসটা এখন অন্তত ছাড়। আমার অনটন, আমার ছেলের পড়াশোনার খরচ নিয়ে ভেবে তোর গলা শুকোতে হবে না। দিনে দিনে তোমার স্নবারি বেড়ে চলেছে।

-   তোকে কিছু বোঝাতে যাওয়াই বৃথা।তুই যা খুশি করার কর, আমি যা খুশি করার করবো।

-   যদি আর একদিন তোমার টিকটিকিকে আমার পিছনে ঘুরঘুর করতে দেখেছি...
-   কি করবি ? হুলোকে লাগিয়ে খুন করবি ?

-   প্রয়োজনে করবো। তুমি আমায় খুন করছো না ? প্রতি নিয়ত ? অন্যায় ভাবে আমায় বঞ্চিত করে, আমার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে...

-   গুণ্ডা লাগালি তুই, আর অন্যায় করলাম আমি ? বাবার উইলটা একটু মন দিয়ে পড়ে দেখ না...

-   উফ, উইল উইল। তুই থাক তোর উইল নিয়ে। আমি যা করবার করবো।

আমি চললাম। আই উইল টেক কেয়ার অফ ইওর টিকটিকি। আর ইয়ে, এই বাক্সটা তোর জন্যে এনেছিলাম, রেখে গেলাম...

-   মিষ্টির বাক্স ? কি ব্যাপার ?

-   ভয় নেই। মিষ্টিতে বিষ নেই। বিষের চেয়ে গুণ্ডা ভালো।

-   হঠাৎ মিষ্টি ?

-   আজ। মানে ছাব্বিশে জানুয়ারি।। তোর, ইয়ে মানে তোদের, মানে তোর আর বৌদির, আজ বিবাহবার্ষিকী না ? তাই আর কি। আমি চললাম।

-   পিকু...

-   কি ?

-   খুব বুড়িয়ে যাচ্ছিস রে। চেহারাও কাঠ হয়ে যাচ্ছে তোর। তোর অ্যানিমিয়ার প্রবলেমটার যথেষ্ট কেয়ার নিচ্ছিস তো ? তোর বউদি বলছিল নিয়মিত কুলেখাড়ার রস খেলে নাকি...

-   চললাম।

-   আয়।


---সমাপ্ত---

বড় দাদার ভূমিকায়         – ভারতবর্ষ
ছোট ভাইয়ের (পিকু) ভূমিকায় - পাকিস্তান
ছোটবোনয়ের (বিনি) ভূমিকায় - বাংলাদেশ

Comments

Anonymous said…
Besh Valo laglo Dada !
Anonymous said…
রূপকটা বেশ লাগল।
Alankrita nandy said…
Onoboddo! Sobai jdi ato sohoj kahini ta sohoj bhabe bujhte parto bhai boner somporkota tikototae bhore thakto na.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু