Skip to main content

থালাময়

একটা ঝকঝকে স্টিলের থালা। যাকে বলে ঝকঝকে তকতকে। থালার এক কোনে এক চিমটে নুনের উঁকি। সেই নুনের সীমানা ঘেঁষে এক বোঁটা-ভাঙ্গা সুডৌল কাঁচা লংকা; আহ তার কি সবুজ!
থালার সেন্টার থেকে একটু নিচে, থালার রেডিয়াসের তিন ভাগের এক ভাগ রেডিয়াসের বাটির মাপে বসানো ভাত ; ঝিরিঝিরি দুধের সর চাল। ভাতের টিলার মাথাটি আলতো করে ভাঙা; সেখান থেকে চুইয়ে পড়ছে আদুরে-সুবাস-মাখা ঝর্ণা ঘি। ভাতের টিলার গা-লেপটে অলস বিলাসিনীর মত পড়ে রয়েছে এক খাবলা আলু সেদ্ধ; ভাজা শুকনো লংকা ও কাঁচা সর্ষের তেলে সযত্নে মাখা।সেই ভাতের টিলার ভেতর থেকে ঘি-ময় ধোঁয়া বেরিয়ে এসে; আলু সেদ্ধ ছুঁয়ে; ঘর-ময় ম-ম শব্দে ছুটে চলেছে।
থালার পাশে স্টিলের গেলাস ভর্তি ঠাণ্ডা জল। ঠাণ্ডা কিন্তু কনকনে নয়; ফ্রিজের জল নয়; নির্ঘাত মাটির কুঁজোর। থালা-গেলাসটি রাখা শ্বেত পাথরের ঠাণ্ডা মেঝের ওপর। তার পাশে বসবার জন্যে ঘরে বোনা উলের আসন; কাপড়ের ফ্রিল দেওয়া।     
বিপিনবাবুর বুকে দমাস-দমাস শব্দ হচ্ছিল। পাকস্থলীতে প্রেমের কান্না গেরিলা যোদ্ধার মত বন্দুক হাতে উবু হয়ে বসে লোকগীতি গাইছিল। জিভের ডগার কেমন সুড়ুত-সুড়ুত লালার দল জড় হয়ে কোঁদল করছিল।  বিপিনবাবুর পেটে যারা ছুটছে তারা ছুঁচো নয়; এমনকি তারা ছুটছে বলাও ভুল; তারা চিতার দলের মত দৃপ্ত নেশায় সাবলীল ভঙ্গিতে চলা ফেরা করছে। বিপিনবাবু বাবু হয়ে বসে স্নেহ-ভারি দৃষ্টিতে মেপে নিচ্ছিলেন গরম ঘি ভাত-আলু সেদ্ধর মা-ময় হাতছানি।

--
-হে ভিপিন, ডোন্ট ডোজ্‌ অফ ম্যান! জাস্ট টু পেগ্‌স অফ স্কচ ইজ গুড এনাফ টু কিক ইয়োর বং-বাট ইট সিম্‌স। ডিনার ইজ রেডি। কাম অন, ডোন্ট বি লেজি!। উই অল আর ওয়েটিং ফর ইউ।
সহকর্মী স্যামের হ্যাঁচড়ানিতে বিপিনবাবুর পার্টি-ঘুমটি গেল চটকে, হুইস্কি আর সটীক সবে মগজে থিতু হচ্ছিল তখন স্যামের এই ঘুম ভাঙ্গানিয়া টান। বিপিনবাবুর এপিগ্লট্টীস ছুঁয়ে বেরিয়ে এলো “ধুর বা...”
-   “ হোয়াট ডিড ইউ সে ভিপিন ? ধুর ইউ সেড ? ধুর হোয়াট ? হোয়াট ডাজ দ্যাট মিন ?”
-   “ইট্‌স জাস্ট আ বেঙ্গলি এক্সপ্রেশন স্যাম”, বিপিনবাবু বেহাল হাসিতে ফের সোফায় ভাসলেন, “ ইট মিন্‌স, থ্যাংকস ফর ওয়েকিং মি আপ মেট”
-   “কুল! আই সি! নাউ লেট্‌স গো অ্যান্ড গ্র্যাব সামথিং টু ইট”   
  

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু