Skip to main content

পাবলিক, কবি ও কবিতা

( okolkata থেকে cross-posted)
পাবলিক :
কি ? কবিতার বই কিনবো ? সে কি ? কিনলেই হলো নাকি? পড়বো কি করে ? গাইড বই কই ?ভূষণবাবুর টীকা-আলোচনা কই ? সুনীল-শ্রীজাত ব্লাফ মেরে গছিয়ে দেবেন তারপর কি সে সব মাল সাজিয়ে রাখবো? এই সেদিন ড্রয়িঙ রুমের শো-কেস’টাও দিলাম বেচে, আসলে বিপিন ভালো একটা অফার দিলে,এমনিতেই ঘুণ পড়বে মনে হচ্ছিলো ;দিলাম চালান করে আর কি। কাজেই ওই কাব্যির কেতাব যে সাজিয়ে রাখবো তারও উপায় নেই।
আরে মশাই, ছেলেবেলা থেকে দেখছি মাস্টার মশাই কবিতা পড়ে যান, শিরোনামের মানে খোলসা করে দেন,ভাব বুঝিয়ে দেন, বিশেষ লাইনগুলো আন্ডারলাইন করতে বলেন; এত কিছু করে তবে গিয়ে কবিতা’তে কি কাগের ঠ্যাং-বগের ঠ্যাং গপ্প আছে তা মালুম চলে। এরপরেও ছিলো সহায়িকা। এভাবেই তো কবিতা পড়তে শিখেছি, আউড়াতে শিখেছি। এ বয়সে এসে যদি বলেন এসব পদ্য পড়লেই বুঝে ফেলবো’ উঈদাউট মানবেন্দ্রবাবু বা দীপেনবাবু’স ক্লাস, তো আপনি খেপেছেন। আনন্দলোক দিন চলবে; চেতন ভগতের বাংলা অনুবাদ দিন চলবে, এমনকি সুনীল-শীর্ষেন্দুর প্রেমের গপ্প-গদ্যও চলবে, কিন্তু কবিতায় ইনভেষ্ট করতে বলবেন না প্লিজ।
তবে হ্যাঁ, ওই যে কি যেন নাম, ভারিক্কি গলায় গান-টান গায়, ওই কি যেন, ও হ্যাঁ, লোপামুদ্রা, ও যে কবিতায় একটু সুর-টুর বসিয়ে কি একটা গানের ক্যাসেট বের করলে, সেইটে কিন্তু কানে বেশ ভালোই লেগেছে বুঝলেন? তবে এই শুধু সূখা কবিতার বই কেনার চেয়ে মঞ্জিনিস’য়ের কেক-প্যাটিস কিনে বাড়ি ফেরা ভালো।
কবি :
আমার কবিতা কি অতই মাগনা যে রাম-শ্যাম-যদু-মদু সবাই লুঙ্গি গুটিয়ে পড়বে ? দেরিদা-শক্তি চোবানো,হাঙ্গ্রী-এংগ্রী মাখানো কবিতা পড়বে ফাইল-পেষা বাবু, তাইলেই হয়েছে।
এইতো সেদিন, আমরা গোল্লা-দশকের সমস্ত কবি একত্রিত হলাম, এক সাথে কেমন জমাটি কবিতা পাঠ হলো।ওইখেনে ছিলো এটমসফিয়ার; মোটা চশমা, ফতুয়া, এপিগ্লট্টিস, গালে হাত রাখা অবকাশ। গোল্লা-দশকের অবিসংবাদিত নায়ক অমৃতেন্দুদা কেমন দরাজ গলায় বলে গেলেন “এই বেশ ভালো; মিথেনের আলো আর থার্মোকলের খেল”, ভাবলেই এখনো গায়ে কাঁটা দেয়। সাত দিন পরেও লাইনটার গভীরতা আমায় ভাবায়,চোখ ছলছল করে ওঠে বিশ্বাস করুন। সেদিন আমিও পড়লাম, আমরা সবাই নিজেদের লেখা পড়লাম। একে অপরেরটা ভালো লাগলো, পিঠ চাপড়ে দিলাম। কিছু হিংসুটে নব্য-কবিরা অবশ্য নিজেদের পিঠ ভালো করে চাপড়ে নিলে কিন্তু অন্যের পিঠ চাপড়ানি দেওয়ার বেলায় হাতের তালুর প্রেশার কমিয়ে দিলেন। সে যাক,মরুকগে হারামজাদাদের দল। আমাদের কবিতা আলোচিত হবে এমন সব কবি-সম্মেলনে, গ্রহণ করে নেবেন কবিতা-লিখিয়ে-সমঝিয়ে কাব্য-রসিকের দল। কুরসাওয়া-সত্যজিত আস্বাদন করেছেন বা গড়গড় কড়ে শক্তি-বিনয় মুখস্থ বলতে পারেন; তাদের ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের কবিতা পড়ানো মানে কবিতা কে ইনসাল্ট করা।
পাবলিক-পাবলিক করে দ্যাখনাই অত্যন্ত বেয়াড়া ব্যাপার। নিজে লিখবো, নিজের ছাপাবো, নিজেরা পড়বো।বাণিজ্য-বুদ্ধি ঢুকিয়ে কবিতাকে বেশ্যা বানাবো ভেবেছেন ?
রবীন্দ্রনাথ :
“হাসতে হাসতে মরে গেলুম : ROFL ব্যাপার-স্যাপার”

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু