পরমা ফেনায় ভেসে
যাচ্ছিল। বাথ টাবটাকে একটা সুরাপাত্র মনে হচ্ছিল। অবাক লাগে ভাবতে। কোথায় তার
ছোটবেলার স্যাঁতস্যাঁতে কসবার বাড়ির অন্ধকার বাথরুমের এলুমিনিয়ামের মগ আর শ্যাওলা
মাখা চৌবাচ্চা। আর কোথায় অর্ণবের এই তিন হাজার স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটের পেল্লায়
বাথরুম এবং সেই বাথরুমের কোনে সুসজ্জিত বাথ টাবের পাশে রাখা ওয়াইন গ্লাসে তার
চুমুকের লিপস্টিক।
আরও পাঁচ মিনিট আগে
দীপক কিছু বুঝে
উঠবার আগেই মিতা বন্দুকের নলটা নিজের মুখে ঢুকিয়ে ট্রিগার টেনে দিলে। মিতা যে সোফায়
বসেছিল তার পিছনের দেওয়ালে রক্ত আর ঘিলুর ছিটে লেগে একাকার।
আরও তিন মিনিট
আগে
“ এমন উষ্কখুষ্ক চেহারায় বসে আছ ? আধ ঘণ্টার
মধ্যে অর্ণবদের বাড়িতে পৌছতে হবে যে। কাম অন। চেঞ্জ করে নাও প্লিজ। কুইক। পরমা
তোমায় এক্সপেক্ট করে বসে আছে”, বলতে বলতে তোয়ালে হাতে দীপক বাথরুমের দিকে এগোল।
আরও পঁয়তাল্লিশ
মিনিট আগে
কলকাতার
ট্র্যাফিক ক্রমশই অসহ্য হয়ে যাচ্ছে। বাইপাসের জামে অন্তত আধ ঘণ্টা ধরে আটকে।
দীপকের একটা সিগারেট ধরাতে ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই গাড়ির এসি বন্ধ করে
জানালার কাঁচ নামিয়ে শহরের ধুলো বালি খেতে ইচ্ছে হল না।
আরও দু ঘণ্টা আগে
- দীপক, মিতা দিল্লী থেকে ফিরেছে ?
- এই গতকালই ফিরল। কেন, ককটেলটা আজকেই প্ল্যান করছিস নাকি ?
- অলকেশটা এমন ভাবে ধরেছে। তা ছাড়া ভাস্কর ইজ লিভিং ফর স্টেট্স
টুমরো। কাজেই...
- বেশ তো, উই উইল বি দেয়ার বাই নাইন।
- প্লিজ একটু আগে আয়। পরমা ইনসিস্ট করছে। মিতা একটু আগে এলে হেল্প করতেও
পারবে...
- ঔকে। উই উইল বি আর্লি। আর অর্ণব, কমা স্কচগুলো সৌম্যদের জন্যেই রাখিস প্লিজ। নট ফর
টুডে।
- সারটেনলি নট।
আরও পাঁচ মিনিট
আগে
এই নতুন
পারফিউমটা কেমন আচ্ছন্ন করে রাখে। মিতার ভারি ভালো লাগে। আলগোছে মাঝেমধ্যেই নিজের
ঘাড়ে গলায় স্প্রে করে নেয় সে। আমেজটা অনুভব করে। আজ সন্ধেবেলা যদি পরমা-অর্ণবদের
ওখানে না যেতে হয়, তবে দীপক কে বলবে একটা সিনেমা দেখাতে। অথবা কোনও একটা পাব।
অনেকদিন বেরোনো হয় না।
আরও দেড় ঘণ্টা
আগে
- ডায়েরিটা পেয়েছ ?
- না! কোথাও নেই। তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি।
- আর ইউ শিওর ?
- ইয়েস। একদম।
- মিতা পেয়ে যায়নি তো
?
- মনে হয় না। ওর হাব-ভাব তো একেবারে নর্মাল।
- তাহলে গেল কোথায় ডায়েরীটা ?
আরও এক দিন আগে
- একটা ভীষণ গণ্ডগোল হয়ে গেছে।
- কি হল ?
- আই থিংক আমার ডায়েরিটা তোমার বেডরুমে রয়ে গেছে।
- যেখানে আমি তোমায় কবিতা লিখে দি ?
- আর কোন ডায়েরির কথা আমি বলতে পারি দীপক ?
- ড্যাম ইট পরমা। আর তুমি এখন আমায় জানাচ্ছ ?
- ডোন্ট বি রুড টু মি। মদ, শরীর; আমাদের দুজনের কারোর মাথার
ঠিক ছিল সেদিন ? হাউ ক্যান ইউ ব্লেম মি ?
আচমকা আমার হ্যান্ড-ব্যাগ খুলে দেখি ডায়েরিটা নেই...
- দ্যাট ডায়েরি ওয়াজ অলওয়েজ গোয়িং টু বি ট্রাব্লসাম। কেন যে তোমার
মাথায় ওই সিলি জার্নালটা রাখার কথা মনে এলো।আর কেন যে আমি রাজি হলাম।শিট! হাউ হরিব্ল। আমাদের নিজের অ্যাডাল্টারির
জার্নাল!
- মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ দীপক। ইট ওয়াজ রোম্যান্টিক।
- লিস্ন। আজ মিতা সবে দিল্লী থেকে এসেছে। আর এদিকে আমি
অফিসে। তোমার মনে আছে কোথায় থাকতে পারে ডায়েরিটা ?
- তোমার বিছানার পাশের টেবিলের ওপরে বা টেবিলের ড্রয়ারে!
- ওহ মাই গড! তুমি এমন একটা ভুল করতে পারলে কি করে ?
- উইল ইউ স্টপ ব্লেমিং মি ? দীপক উই আর বোথ ইনটু ইট! ভুলে যেও
না।
আরও সতেরো বছর
আগে
মিতা দেখতে এত
সুন্দর কেন ? এত মখমলে কেন ? এত ভালো লাগে কেন ওকে ? মিতা এত আদুরে কেন ? মাঝে মাঝে পরমা পাগল হয়ে যায়; মিতাকে সে জাপটে
ধরলে মিতা এত ঘাবড়ে যায় কেন ? কেন সে মিতাকে পেতে পারবে না ? পরমা মেয়ে বলে ?
মিতাকে কেন শান্তনু বা দীপকই অন্ধকারে ডেকে নিয়ে জড়িয়ে ধরবে ? কেন কেন কেন ? মাঝে
মাঝে পরমার মনে হয় সে মিতাকে জ্বালিয়ে ছাই করে দেবে, শেষ করে দেবে, প্রয়োজনে খুন
করে দেবে। মিতা তার না হলে অন্য কারোর কেন হবে ?
Comments