Skip to main content

সে

প্রথম পর্ব

সিদ্ধার্থ জানলা খুলে অবাক হয়ে গেলেন। আচমকা এত মেঘ এলো কোথা থেকে ? পাহাড়ি এলাকায় অবিশ্যি এটাই মজা। রিসেপশনে ফোন করে আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিতেই হল।

দ্বিতীয় পর্ব

-   সিদ্ধার্থর লাশটা অন্তত...
-   না মানসবাবু, পাওয়া গেল না...গোটা সিকিম প্রায় চষে ফেলা হল।
-   ইন্সপেক্টর দাসগুপ্ত, ব্যাপারটা তো নাও ঘটে থাকতে পারে ?
-   সুইসাইড নোট এর আগে বহু কেসে ফাঁপা বেরিয়েছে। সেটা বিশেষ অ্যানন্যাচুরাল নয়। ইনফ্যাক্ট, আপনি সিদ্ধার্থবাবুর দাদা হিসেবে ওর চারিত্রিক ব্যাপারগুলো হয়তো বেশি আঁচ করতে পারবেন।তবে মাস খানেকেও যখন কোনও খবর পাননি...
-   ও আর যাই হোক, সুইসাইডের দিকে ঝুঁকবে এটা বিশ্বাস হয় না। এনিওয়ে, আপনি যা করলেন, আপনার প্রতি এই মিত্র পরিবার চিরকৃতজ্ঞ থাকবে ইন্সপেক্টর দাসগুপ্ত।
-   কিছু আর করতে পারলাম কই মানসবাবু।
-   সিক্রেটটা যেন...
-   আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন...
-   তবু যদি পজিটিভ কোনও খবর পান...
-   যে কোনও খবর পেলেই আপনাকে জানাবো মানসবাবু, নিশ্চিন্ত থাকুন।   

তৃতীয় পর্ব

সিদ্ধার্থ কবিতা-টবিতা ঘেঁষা মানুষ না হতে পারেন, কিন্তু রোমান্টিসিজম তার মধ্যে নেই এটা বলা চলে না। বেনারসকে ভালোবেসে ফেলেছেন শুধু এই গঙ্গার হাওয়া মাখা বিকেলগুলোর স্নেহতেই। একবার সিদ্ধার্থ ভাবলেন দাদার শ্রাদ্ধটা এখানেই সেরে যাবেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ পাবেন কোথায় সিদ্ধার্থ।

শেষ পর্ব

-   তুই তাহলে এমন ভাবেই ফেউ ফেউ করে ঘুরে বেড়াবি ?
-   দাদা, তুমি তো জানো এ ব্যাপারে আমার মতামত কি।
-   শাট আপ। তুই জানিস সোসাইটিতে আমাদের কি অবস্থা ?
-   দাদা তুমি আমায় এভাবে জোর করতে পার না।
-   তুই সুইসাইড করবি না ?
-   না:
-   এই ভাবেই ফ্যাঁ ফ্যাঁ করে বেড়াবি ?
-   হ্যাঁ, কারণ আমার মধ্যে এখনও তাজা রক্ত আছে, এখনও আমি ঘাসের গন্ধ পাই। ভোগ কেন করব না ?
-   কারণ মানুষের যুগ আর নেই সিদ্ধার্থ। আর নেই। প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। ভুতের সমাজে তুই এমন পাপের মত পালিয়ে পালিয়ে আর কদিন বাঁচবি ? তোকে আমরা আর কদিন ভূত সাজিয়ে রাখবো ? বছরের পর বছর যখন তোর লাশ অন্যদের নজরে পড়বে না, তখন তোর আইডেন্টিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। উঠবেই। আমরা কাউকে মুখ দেখাতে পারবো ?
-   দাদা! ছত্রিশের নিউক্লিয়ার হলকাস্টে পৃথিবী থেকে তোরা প্রত্যেকে সাবাড় হয়ে গেলি, একা আমি কিভাবে যেন রয়ে গেলাম। এই আমার দোষ ?  ভূ-ভারতে একমাত্র আমি বেঁচে রইলাম বলে আমার সে বেঁচে থাকাটা অপরাধ হতে পারেনা। মানুষ শেষ হয়ে গেলেও প্রকৃতি শেষ হয়নি দাদা। সমস্তটাই ধু-ধু হয়ে যায়নি। সিকিমে এখনও মেঘ জমে, ঘাস গজায়, বেনারসে গঙ্গার শেষ স্রোত এখনও টিকে আছে। আমার চামড়ায় এখনও অনুভূতি আছে দাদা। জিভে স্বাদ আছে। আমি তোদের সাজানো ভুতের পুলিশ, ভুতের সরকার, ভুতের রেস্তোরাঁ, ভুতের সমাজ গায়ে মেখে নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে পারি না। দাদা, পৃথিবীতে একটা মানুষ এখনও বেঁচে আছে। সমস্ত শেষ হয় নি।
-   তুই বদ্ধ পাগল হয়ে গেছিস সিদ্ধার্থ।
-   পাগল হয়েছি দাদা, ভূত তো হইনি।
-   একদিন তো হতেই হবে, তবে শুধু শুধু পরিবারকে বদনামের ভাগীদার কেন করছিস ? বাকিরা কি ভাববে ? আমরা একজন মানুষকে আশ্রয়ে রেখেছি ? আমাদের কি দোষ বল ? জবরদস্তি তোর মানুষত্ব ঘুচিয়ে তোকে আমাদের মত করে নিচ্ছি না, এই আমাদের দোষ ? আমাদের স্নেহের এই দাম তোর কাছে ? তুই কোন সাহসে সুইসাইড নোট রেখে গিয়ে আমাদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে ছেলেখেলা করিস ? উই হোপ্‌ড সো মাচ যে এবার দেখলে তোর ভূতকে দেখবো রে সিধু। কেন এমন বিট্রে করছিস তুই...কেন বুঝছিস না যে তুই একা সারভাইভ করতে পারবি না বেশি দিন...
-   দাদা প্লিজ। তোমরা যদি আমায় মেরে ফেল; আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু আমি সুইসাইড করব না। তোমরা যে স্বর্গে আছ সেটা মূর্খের। পৃথিবীটা মানুষের। আমার। তোমাদের নয়।  তোমাদের ভুতের পার্লামেন্ট মিথ্যে, এই ভুতের ট্রেন মিথ্যে, ভুতের কারখানাগুলো মিথ্যে, তোমাদের জিডিপি মিথ্যে, তোমাদের পার্কের প্রেমিক-প্রেমিকাগুলো মিথ্যে। এবং তোমাদের এই মিথ্যেগুলো খালি আমি দেখতে পারি। দাদা আর কদিন তো, আমায় একটু মানুষ হয়ে থাকতে দাও না দাদা, তারপর তো তোমাদের মাঝে মিশে যেতে হবেই...
-   সিদ্ধার্থ, তুই যখন রাজি হলি না, আই মাস্ট টেল ইউ দ্য ট্রুথ। ইন্সপেক্টর দাসগুপ্ত বিট্রে করেছে। মেয়র কে জানিয়ে দিয়েছে তোর কথা। এই কিছুক্ষণ আগে সে ফোন করেছে। প্রেসের কাছে খবর রটে যাওয়ার আগে সরকার স্টেপ নেবে। এত বড় সোশ্যাল থ্রেট ছড়িয়ে পড়বার আগে নাকি সরকার ঝাঁপিয়ে পড়বেই...
-   ভুতের সোশ্যাল থ্রেট ? দাদা তোমরা ভূত থেকে কি এবার উন্মাদ হয়ে গেলে ? একটা মানুষ বেঁচে আছে আর তাকে তোমরা...
-   রেডি থাক সিধু, ওরা আসছে...তোকে নিয়ে যেতে...
-   তোমরা উন্মাদ...দাদা আমায় প্লিজ বাঁচাও,বাঁচতে দাও। দাদা তুমি  হয়তো ভুলে গেছ, বাঁচতে খুব ভালো লাগে গো...দাদা প্লিজ...তোমার ছোট ভাই আমি...
-   পালাবার চেষ্টাও করিস না,ওরা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। ভোরের আগে তোকে ক্যাঁওড়াতলা নিয়ে যাবে সিধু। অমন কাঁদিসনে ভাই, এ জগতটা মন্দ নয় রে। মন্দ নয় রে ভাই। মন্দ নয়।
     



                

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু