Skip to main content

বিলু, বাবা ও মা

(হ-য-ব-র-ল থেকে Cross Posted)

বাবাঃ বিলু ব্যাটা দিন দিন গোল্লায় যাচ্ছে। যখন দেখি, তখনই ক্রিকেট ব্যাট হাতে ধেই ধেই করছে। তাও যদি বুঝতাম দ্রাবিড়ের মতো টেকনিক ডেভেলপ করছে। পাঁড় আনাড়ির মতো ক্রস ব্যাটে খেলে। এদিকে পড়াশোনাও জলাঞ্জলি। ক্লাস সেভেনের অঙ্কে আর ফিজিক্সে ভদ্রলোকে ফেল করে? ব্যাটাকে এ্যারেস্ট করা উচিত। 

মাঃ কত করে বললাম, অঙ্কে একটা টিউশানিতে হবে না। বিপিনদার ছেলের তিনটে অঙ্ক মাস্টার ঘরে পড়িয়ে যান। একজন জ্যামিতি, একজন বীজগণিত, একজন পাটিগণিত। আমার কথা শুনলে না। বললে ছেলের ব্রেনে প্রেশার পড়বে। এখন সামলাও ঠ্যালা। দিদির ছেলে অঙ্কে মিনিমাম নব্বই পায় প্রত্যেকবার। আর আমার ছেলে... ছিঃ! লজ্জা! 

বাবাঃ ঠিক বলেছ। ব্যাটার পাড়ার পুজোয় নাটক করা আমি ঘুচোচ্ছি। এইসা প্যাঁদানি দেবো না...

মাঃ বাজে বোকো না। তোমার আশকারাতেই ছেলেটা বিগড়ে যাচ্ছে।

বাবাঃ হোয়াট? আমার আশকারা? বিলু আমায় কত ইয়ে করে জানো? আমার গলার আওয়াজ শুনলেই ও খটখট করে কাঁপে, সে খবর রাখো?

মাঃ কচু। 

বাবাঃ ইরেস্পন্সিব্‌ল কথা বলবে না বলে দিচ্ছি। কী রে বিলু, ভয় পাস না তুই আমাকে?

বিলুঃ তুমিই বলেছিলে না বাবা, নির্ভীক হতে। নির্ভীক ছেলের কি ভয় পেতে আছে ?

বাবাঃ পয়েন্ট। 

মাঃ পাগলদের নিয়ে আমার সংসার। 

বাবাঃ তুমি আমাদের পাগল বললে কেন? উইথড্র করো। নয়ত আজ রাত্রের ডিনার আমি, বিলু দুজনে মিলে বয়কট করব। ইমিডিয়েটলি। নাউ। 

বিলুঃ আজ রাতে লুচি-পায়েস বাবা। আজকের ডিনার আমি বয়কট করতে পারব না। 

বাবাঃ ব্যাটাচ্ছেলে হনুমান, ইজ্জতের চেয়ে লুচি পায়েস বড় হলো? এই তোর ক্যারেক্টারের তেজ? এই তোর প্রতিবাদ করার ক্ষমতা? ছিঃ বিলু! অঙ্কে ফেল তো মামুলি ব্যাপার। আজ ফেল, কাল পাশ। ওতে চাপ নেই। কিন্তু তাই বলে সামান্য লুচি-পায়েসের লোভে নিজের ইন্টেগ্রিটি বেচে দিলি বাবা? এই তুই সত্যাগ্রহী মধুময় সমাজপতির নাতি?

মাঃ আরে! এটা কী হলো। বাবা হয়ে ছেলেকে বলছ যে অঙ্কে ফেল মামুলি ব্যাপার?

বাবাঃ অফ কোর্স মামুলি। অঙ্ক যদি পেল্লায় কিছু হতো তাহলে রবীন্দ্রনাথও নিয়মিত দুপুরবেলা আঁক কষতেন। আমি বলছি, অঙ্ক মামুলি। 

মাঃ চুপ করো। যতসব প্রলাপ। 

বাবাঃ ফ্রি স্পিচের গলা টিপে ধরতে চাইছ? মানছি না, মানবো না। বেশ করেছি অঙ্ককে মামুলি বলেছি। বিলু, খবরদার যেন আর অঙ্কে পাশ না করতে দেখি। অঙ্কে পাশ করলেই ধোলাই তোর কপালে। তুই জানিস আমি রাগলে কেমন ডাইনোসর গোছের হয়ে যাই। আমার সঙ্গে নো চালাকি। 
( হ-য-ব-র-ল থেকে cross-posted)

আমায় যেন আর ফিউচারে না শুনতে হয় যে তুই অঙ্কে পাশ করেছিস...

বিলুঃ আমি তোমার কথা কখন অমান্য করি বাবা?

বাবাঃ বুকে আয় রে। আহা! আজকালকার যুগে কটা ছেলে এমন বাপভক্ত হয় বলো তো বিলুর মা? সোনার টুকরো ছেলে আমার বিলু। ওর কভার ড্রাইভগুলো দেখেছ কখনও মাঠে গিয়ে? অবিকল সৌরভ। সুপার! 

মাঃ উফফ, কী পাগলদের সঙ্গে আমার জীবন যাপন। এবার আমি পাগল হয়ে গেলে শান্তি পাই। 

বাবাঃ ঐ রবীন্দ্রসঙ্গীতটা শুনেছ? যে তোরে পাগল বলে, তারে তুই বলিস নে কিছু। আহা! গানটা কিন্তু এই সিচুয়েশনে ভারি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। 

মাঃ তোমাদের দুজনেরই আজ রাতের খাওয়া বন্ধ। এই বলে দিলাম। 

বাবাঃ প্লিজ, মাইরি। কাল থেকে বসে আছি আজ রাতে লুচি-পায়েস খাব বলে। আজকের খাওয়াটা বন্ধ কোরো না প্লিজ। প্লিজ। প্লিজ।

Comments

Atanu Dey said…
জব্বর !!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু