Skip to main content

অজাতশত্রু

রাজ-ডিনার বলে কথা৷ যে সে রাজা নয়, মগধ সুপ্রিমো বলে কথা। অজাতশত্রুর পাতে অন্তত বাইশ রকমের পদ যে ছিল তা অনুমান করেই নেওয়া যায়। তবু খাওয়ায় তাঁর বিশেষ মন ছিল না, থাকার কথাও নয়। বৃদ্ধ পিতা বিম্বিসারকে সেই কবে জেলে পুরেছেন। বিম্বিসারের খাওয়াদাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে, তার ওপর সমানে চলছে অকথ্য শারীরিক অত্যাচার। সোজাসুজি গুমখুন করলে ল্যাঠা চুকে যায় বটে কিন্তু তা'তে খেল গড়বড় হয়ে যেতে পারে। মগধবাসী এমনিতেই সে বুড়োর ফেউ। অজাতশত্রুর ভয়ে সবাই থরথর কিন্তু তাঁর কপালে সিংহাসনচ্যুত বিম্বিসারের মত ভালোবাসা জোটেনা। পালটা বিদ্রোহ শুরু হলে সে আর এক ঝামেলা। বন্দীদশায় পচিয়ে মেরে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

কিন্তু কী ঢ্যাঁটা প্রাণ বুড়োর, হপ্তার পর হপ্তা খেতে পেলে না, পায়ের পাতার চামড়া তুলে পালটা সেলাই করে দেওয়া হল; তবু। মরল না।

সে'সব দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে অজাতশত্রু খেয়ে চলেছেন। পাশে স্ত্রী ও মা। মায়ের মনখারাপ, বিম্বিসারের জন্য; তবে অন্তঃপুরের মনখারাপ নিয়ে পড়ে থাকলে রাজকাজ চালানো যাবে না। এমন সময় অজাতশত্রুর শিশুপুত্র তাঁর কোলে এসে বসল আর হিশি করে ফেলল। ডায়রেক্ট রাজার ভাতের থালায়। রাণী ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, খানসামার দল ছোটাছুটি শুরু করে দিল, তুড়ি বাজার আগেই চলে এলো খাবার সাজানো নতুন থালা। কিন্তু অজাতশত্রু অবিচল, তার মুখে হাসি। কোলে বসে রইল রাজপুত্র;  রাজা খাওয়া থামালেন না, থালাও পাল্টালেন না। পাছে খোকার খারাপ লাগে।

তা দেখে রাজার মা বড়রাণীমার চোখে জল।

"খোকা, জানিস! তখন তোর বয়স দুই কি তিন। তোর আঙুলের মাথায় একটা বিশ্রী ফোঁড়া হল। তোর বাবা সে'খানে চুমু খেলেই তোর মনে হত ব্যথা কমে গেছে। তেমন চুমু খাওয়ার সময় একবার সেই ফোঁড়া গেল ফেটে। অমনি সেই আঙুল তিনি নিজের মুখে পুরে ফেলেন। আর যতক্ষণ না সমস্ত পুঁজ-রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয়, ততক্ষণ তিনি মুখ থেকে সে আঙুল বের করেননি। পাছে তুই সে'সব দেখে ভয় পাস"।

সেই মুহূর্তে নাকি অজাতশত্রুর চোখের সামনে থেকে একটা পর্দা সরে যায়; তিনি ছুটে যান কারাগারের দিকে। তবে আর পাঁচটা গল্প যেমন হয় আর কী; অজাতশত্রু পৌঁছোনোর কয়েক মুহূর্ত আগে মারা যান বিম্বিসার। এরপর দাপটের সঙ্গে বহুদিন রাজপাট সামলাবেন অনুতাপে দগ্ধ সম্রাট। আর যে কোলের শিশুর হাসির জন্য অজাতশত্রু সে রাত্রে অখাদ্য খেতে দ্বিধা করেননি, ভবিষ্যতে তাঁর হাতেই অজাতশত্রু রাজ্য ও প্রাণ খোয়াবেন।

এত কিছুর মধ্যিখানেও ফোঁড়ায় চুমু আর খোকা কোলে বাবার রাতের খাওয়া সেরে নেওয়ার জ্বলজ্বলে মুহূর্তগুলো থাকবে। ইতিহাসের আড়ালে থাকা সে গল্পগুলোর জন্যেই গান, কবিতা আর পিপিএফে টাকা জমানো।

(গুগল পডকাস্টে যে কতরকমের গল্প ছড়িয়ে রয়েছে। অজাতশত্রু আর বিম্বিসারের গল্প বেশ সবিস্তারে শুনলাম কিট প্যাট্রিকের 'হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া' পডকাস্টে)।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু