Skip to main content

বিকেলের গল্প।

- দীপকদা, বড়সাহেব ডাকছেন।

- আমায়?

- নয়তো খামোখা আপনাকে বলতে যাবো কেন বলুন?

- রেনবো ওয়েল্ডার্সের ফাইল নিয়ে কিছু কি?

- ওঁর পেটে কী আছে তার হদিস আমার মত হরিদাস পালের কাছে থাকবে কী করে দীপুদা? আর্জেন্ট। তাড়াতাড়ি যাও।

***

- দীপু! ক্যুইক!

- কী হল রে?

- মান্তুদা ডেকেছে। রেলেরমাঠে। ক্যুইক।

- এই ভরদুপুরে!

- রেলকলোনির ছেলেদের চ্যালেঞ্জ করেছে মান্তুদা। আজ পালটা ম্যাচ।

- ও। তা আমায় ডেকেছে কেন? গত ম্যাচের পর তো বলল আমার মুখদর্শন করবে না আর।

- আহ্। তুই অমন লোপ্পা ক্যাচ ফেললি বলে..।

- মান্তুদা নিজে রানআউট মিস করেনি?

- মাঠে গিয়ে ঝগড়া করিস ভাই। এখন চ'।

- আমার টিউশনি আছে। ট্রিগোনোমেট্রি। বিভূতিবাবু এমনিতেই খাপ্পা, বাবার কাছে কমপ্লেন করেছেন। আমার হবে না।

- সে কী রে। আজ বাদে কাল মহালয়া! আর এ'দিকে তুই টিউশানি দ্যাখাচ্ছিস?

- কেটে পড়। মান্তুদাকে বলে দিস আমি আসতে পারব না..।

- মান্তুদা তোকে ওয়ান ডাউন খেলাবে বলেছে।

- ওয়ান ডাউন?

- ওয়ান ডউন।

- মান্তুদা বলেছে?

- মায়ের দিব্বি।  গা ছুঁয়ে বলতে বলেছে মান্তুদা।

- কিন্তু, বিভূতিবাবু যদি চটে যান..এ'বারে মনে হচ্ছে অঙ্কতে ডোবাবো রে...কিছুতেই কিছু ঘটে ঢুকছে না।

- রেলকলোনির ক্যাপ্টেন তোকে ক্যাচড্রপ ক্যালানে বলে ডাকছে। আমি নিজের কানে শুনেছি গতকাল।

- রেলকলোনির ক্যাপ্টেন? সৌম্যদা এ কথা বলেছে?

- রীতিমত অঙ্গভঙ্গি করে।

- সাইকেল বের করতে পারব না। আর তোর মেজমামার দেওয়া ব্যাটে খেলব।

- আমি অফ স্পিনার৷ সেভেন ডাউন। ব্যাটের মায়া আমার নেই। ও ব্যাট তুইই রাখিস। এখন চ', আমি ডাবল ক্যারি করব।

***

- সার্টিফাই করে দেব?

- দেবে।

- কিন্তু...।

- লুক দীপক, আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইওর ডিলেমা। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমাদের কিছু করার নেই। গুপ্তাদের হাতে সমস্ত কন্ট্রোল, কাজেই...।

- কিন্তু স্যাম্পেলে গলদ আছে। স্পষ্ট।

- ইউ উইল বি কম্পেনসেটেড দীপক...সে দায়িত্ব আমার। বেসিকালি, ইউ হ্যাভ নো চয়েস। আই হ্যাভ নো চয়েস ঈদার। সময় আছে অবশ্য, যা হওয়ার পুজোর পরেই হবে।

- আমি একটু ভেবে দেখি স্যার।

- ইউ হ্যাভ নো চয়েস দীপক।

***

লংঅনে দাঁড়িয়েছিল দীপক। সেপ্টেম্বরের শেষে এই বিদঘুটে গরম বেশ বেমানান। তবু, ফোকাস নষ্ট হলে চলবে না। একটাও বল গলালে মান্তুদা মার্ক্স, চাণক্য বা অমরিশ পুরি কোট করে একটা দক্ষযজ্ঞ বাঁধাবে; আর তখন ব্যাটিংয়ের আগেই মেজাজ যাবে চটকে। তিন নম্বর পোজিশন মান্তুদা বারবার দেবে না, রান করতেই হবে আজ। রেলের মাঠে বড্ড বেশি বালি, চটি পরেই ফিল্ডিং করতে হচ্ছে নয়ত পায়ে রীতিমত ছ্যাঁকা লাগছে।

ঠিক তখনই হাড়হিম করা ডাক।

- তুই বিভূতিবাবুর ক্লাসে না গিয়ে খেলতে এসেছিস?

- তোকে এ'খানে কে আসতে বলেছ!

- সে কথায় তোর কাজ কী! মান্তুদাকে বলে বেরিয়ে আয়।

- অসম্ভব। তুই যা। ওরা সবাই এ'দিকে তাকাচ্ছে! এ'দিকে বল এলেই...।

- তাকাক। তুই এখুনি বেরোবি।

- অসম্ভব।

- অসম্ভব?

- রীতিমত।

- বাপের টাকা জলে দিতে লজ্জা করে না? ওই টিউশনির টাকাটা শিবুকাকুকে দিতে বলিস না কেন? বেচারি ছেলের ওষুধ যোগাড় করতে গিয়ে কী হয়রান হয়। তোর লজ্জা করে না দীপু?

- কিচি! তুই যাবি?

- ফেল করছিস কর। এমন বেয়াদবী শুরু করেছিস কেন?

- বেশ করব। আমি ফেল করেছি। আমার বাবার টাকা। আমি বুঝব৷

- তুই আমার সঙ্গে যাবি টিউশনিতে? এখুনি?

- সৌম্যদা আমায় ক্যাচড্রপক্যালানে বলেছে। এ'টা বদলার ম্যাচ।

- সৌম্যদা তোর মত অসভ্য আর মান্তুদার মত মিথ্যুক  নয়।

- বেশ। সৌম্যদার সঙ্গেই বেরোস। মহালয়ার বিকেলে। এমনিতেও তোর সমান অ্যাপ্টিচিউডের মানুষ। স্ট্যান্ডফ্যান্ড করে।

- বেশ, তাই যাবো। তুই মর্।

ঠিক তখনই একটা উড়ে আসা বলা দীপুর মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেল, সে বড্ড দেরীতে দেখেছিল। নীল হলুদ সালোয়ার আর রাগ থমথম মুখে কিচি দাঁড়িয়ে। ডান হাত লেডিবার্ড হ্যান্ডেলে আর বাঁ হাতে হেলায় ধরা ওভারবাউন্ডারি হওয়া বল; নিখুঁত ক্যাচ।

সৌম্যদার শট৷ যতক্ষণে মান্তুদা রাগে উদ্ভ্রান্ত হয়ে "তবে রে শালা"র সুরে চটি হাতে তেড়ে এসেছিল; ততক্ষণে লেডিবার্ড হাওয়া।

***

- দীপু না?

- আরে সৌম্যদা! কেমন আছ? ব্যাঙ্গালোর থেকে কবে ফিরলে?

- দিব্যি আছি। আজই সকালে এসেছি।

- পুজোয় আছ তো?

- হ্যাঁ। লম্বা ছুটি, অনেকদিন পর পেলাম। তুই কলকাতায় চাকরী করছিস তো? পুজোর ছুটি?

- হ্যাঁ। আমিও লম্বা ছুটিতেই এসেছি।

- তা বেপাড়ার মাঠে বিকেলে বসে?

- এই রেলের মাঠে ছোটবেলায় কত খেলেছি বলো তো।

- হ্যাঁ রে, মান্তুটা কি আগের মতই পাগলাটে আছে?

- সর্ষের তেলের ব্যবসা। ব্যস্ত বড় আজকাল। পাগলামির সময় কই?

- আর তোর ফিল্ডিং কি আগের মতই কাঁচা রয়েছে?

- হেহ্।

- বসি তোর পাশে খানিকক্ষণ। কদ্দিন এ মাঠে বিকেলবেলা চটি পেতে বসি না। মহালয়াটা পরশু, তাই না রে?

- হুঁ।

- হ্যাঁ রে। কিচির খবর কী?

- জানি না। বহুদিন যোগাযোগ নেই। তোমার মনে আছে? এক মহালয়ায় তোমরা ঘুরতে বেরিয়েছিলে?

- আমি আর কিচি? ঘুরতে বেরিয়েছিলাম?

- ঘাটের দিকে তোমাদের দেখেছিলাম তো। ইয়ে, একটু দূর থেকে।

- ওহহো। তুই ওকে পাঠিয়েছিলিস ব্যাটা, তাই না?

- মানে? আমি ওকে পাঠাব কেন?

- মানে আবার কী! আমায় গোপনে সে খবর পাঠালো, মহালয়ার সকালে দেখা করবে। আমার মনে কী আনচান। ও মা! মহালয়ার সকালে দেখা করে বললে সে জানতে এসেছে যে আমি তোকে সত্যিই ক্যাচড্রপক্যালানে বলেছি কিনা। কী খতরনাক রাগ মাইরি। একবার তো মনে হচ্ছিল কানটাই না মুলে দেয়। আমি কত কাকুতিমিনতি করে বললাম যে ক্যালানে গোছের শব্দ আমি ব্যবহার করি না। তারপর আমায় ন্যাকাট্যাকা অনেক কিছু বলল। আর রীতিমত শাসিয়ে গেল যে আমি বা আমার পরিচিত কেউ কখনও যদি তোর নামে উল্টোপাল্টা কিছু বলে তা'হলে সে আমার ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে নাকি। কী ডেঞ্জারাস মেয়ে মাইরি।

***

- হ্যালো, বলো দীপক। কী ব্যাপার?

- অনেক ভেবে দেখলাম স্যার। ভুল সার্টিফাই করতে আমি পারব না। মরাল স্ট্যান্ড নয়। কনফিডেন্সের অভাব। সে'টা বলতেই ফোন করলাম।

- আমি তোমার আগেও বলেছি। ইউ হ্যাভ নো চয়েস।

- উই অলওয়েস হ্যাভ আ চয়েস স্যার।

- ক্যালানের মত কথা বলো না।

- মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ স্যর। নয়ত আপনার ঠ্যাং আস্ত নাও থাকতে পারে।

- হোয়াট ডু ইউ মীন? তোমার সাহস কম নয় তো...।

- আমি বেশ ভীতু, মাইরি বলছি। ফোন রাখছি স্যর, ভালো থাকবেন।

Comments

বড় মায়াবী লেখো তুমি দাদা। একান্ত অনুরোধ, দীপু-কিচি নিয়ে একটা বড় স্ক্রিপ্ট বানাও। আর পারলে সবকটা দীপু-কিচি লেখা একটা জায়গায় করে দিও। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে ওদের কাহিনী গুলো।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু