Skip to main content

বিখ্যাত

- নমস্কার।

- হুঁ। নমস্কার। উঁহ্।

- বিরক্ত মনে হচ্ছে আপনাকে?

- বিরক্তি। বোরডম। হাড়জ্বলুনি।

- উম...এমন ভাবে বোধহয় আপনাকে প্রায়ই ডেকে নেওয়া হয়, তাই না?

- প্রতি হপ্তায় অন্তত বারদুয়েক। গত আশ্বিনে এক হপ্তায় সাতবার ডাক পড়েছিল। এ হপ্তায় অবশ্য আপনিই প্রথম।

- এত প্ল্যানচেট করার মানুষ আছে?

- আছেই তো। আর অর্ধেকের বেশি তো গাধাগবেটের দল। ডাকতে চায় একজনকে আর টেনে নামায় অন্য কাউকে। আরে মশাই প্ল্যানচেট কি আর যেমনতেমন ব্যাপার? ধৈর্য লাগে, অধ্যাবসায় লাগে,  ফোকাস লাগে। প্যারিসের এক বৃদ্ধের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বছর সতেরো আগে; কী জ্ঞানের পরিধি,  কী বিনয়। তার প্ল্যানচেটে নামতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছিলাম।

- খুব ভালো লাগল আপনার সঙ্গে আলাপ করে।

- উম। সেই। বোরিং, বুঝলেন। কিছু মনে করবেন না যেন।

- আচ্ছা, এখন শুধু আপনার কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি; তা, আকার ধারণ করতে পারবেন কি?

- নির্ভর করছে আপনার প্ল্যানচেট স্কিলের ওপর৷ ধুরন্ধর ভূত-ট্র‍্যাপাররা অনেকসময় রীতিমত অবয়ব সৃষ্টি করতে পারেন। আপনিও বোধ হয় পারবেন। আর একটু কনসেন্ট্রেট করুন।

- কেমন আছেন আপনি বিমলবাবু?

- যাক, আমায় তা'হলে আনতাবড়ি নামিয়ে ফেলেননি৷ ইম্প্রেসিভ। কলকাতায় ভালো প্ল্যানচেট করিয়ে তো আজকাল বড় একটা দেখিনা।

- অকাল্ট ব্যাপারটা আমাকে বরাবরই খুব টানে...।

- তা'বলে বেশি সময় আমার নেই৷ বড় দুর্বল লাগে ফিরে গিয়ে জানেন, প্রতিবারই। কাজেই, যা প্রশ্ন করার চটপট করে ফেলুন।

- আচ্ছা বিমলবাবু, আছেন কেমন?

- মানে, এই অবস্থায়?

- হুঁ।

- দিব্যি। ফুরফুরে। ভূত ডেফিনিশনে খারাপ থাকার এলিমেন্টটা ইনক্লুডেড নেই।

- বাহ্। ইয়ে, একটা বিশ্রী প্রশ্ন করতে বড্ড সংকোচ হচ্ছে...।

- আমি কী ভাবে অক্কা পেয়েছি, সে'টা জানতে চাইছেন তো?

- হ্যাঁ।

- স্বাভাবিক প্রশ্ন। এত হেসিটেট করছেন কেন। আজ থেকে ঠিক বত্রিশ বছর আগে ব্যাপারটা ঘটে। সাতাশে সেপ্টেম্বর। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ বোধ হয়। দ্য গ্রেটেস্ট মার্ডার মিস্ট্রি অফ দিস সেঞ্চুরি। লালবাজার হন্যে হয়েও কিছু উদ্ধার করতে পারেনি৷ ইনফ্যাক্ট, অমন ভাবে মরেছি বলেই আমার ফেমাস হওয়া। যে কারণে বহু মানুষ আজও আমায় প্ল্যানচেটে নামায়, সে রহস্যভেদ করতে। কে আমায় গলার টুটি টিপে খুন করেছিল। কে? ঘরের দরজা জানালা বন্ধ, ঘরে বাড়তি কোনো পায়ের ছাপ নেই, গলায় আঙুলের দাগ নেই; অথচ খুন হওয়া লাশটা আছে।

- ইনক্রেডিবল বিমলবাবু।

- অবিশ্বাস্য তো বটেই৷ গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট বছর পাঁচেক আদাজল খেয়ে তদন্ত করেছিল। কিস্যুটি জানতে পারেনি। কাজেই, ব্রড স্ট্রীটের বিমল দত্ত হত্যারহস্য চিরঅন্ধকারেই রয়ে গেছে। কিন্তু, আপনাকে একটা কথা জানিয়ে রাখা দরকার প্ল্যানচেটবাবু, এর আগে বহু মানুষ আমায় প্ল্যানচেটে নামিয়ে জানতে চেয়েছেন আমার হত্যারহস্যের ব্যাপারে। তাদের সকলকেই সোজাসুজি বলেছি যে আমি জানি খুনি কে কিন্তু খোলসা আমি করব না। বিমল দত্ত হত্যারহস্য এনিগমা হয়েই থাকুক চিরকাল। পস্থুমাস সেলেব্রিটি হয়ে আছি, মন্দ কী।

- বিমলবাবু, আপনাকে সামান্য হতাশ করতে বাধ্য হচ্ছি।

- কী'রকম?

- আপনার হত্যারহস্যের সমাধান আমার হাতের মুঠোয়।

- কে আমার শার্লক বক্সী এলেন হে! সমাধান হাতের মুঠোয়! যত বাতেলা।

- ভূত হয়ে এমন বিশ্রী মেজাজ? মানাচ্ছে না যে।

- যত বাজে কথা।

- অকারণ উত্তেজিত হচ্ছেন।

- বটে? আপনি জানেন আমার খুনি কে?

- আপনি খুন হননি বিমলবাবু। আর খুন না হলে খুনি আসবে কোথা থেকে?

- মা...মানে...ইয়ে...কী বলছেন আপনি...।

- বিখ্যাত হওয়ার নেশা যে কী ক্ষতিকারক তার উজ্জ্বলতম উদাহরণ আপনি বিমলবাবু। খেলাধুলো থেকে সিনেমা; চেষ্টা কম করেননি। অথচ কোনো জায়গাতেই তেমন সুবিধে করতে পারলেন না। এ'দিকে বিখ্যাত হতেই হবে। কাজেই আপনি বাধ্য হলেন আঙুল বাঁকা করতে...।

- আসলে হয়েছে কী...।

- প্ল্যানচেটের মাধ্যমে আত্মারা যে টাইম ট্র‍্যাভেল করতে পারে সে'টা জানা মাত্রই আপনি ছক কষে ফেললেন। নিখুঁত খুনের প্ল্যান। খুন, অথচ খুন নয়। আত্মহত্যা,  যে'খানে সমস্ত চিহ্ন খুনের দিকে, অথচ খুনির পরিচিতি কেউ কোনোদিন জানতেই পারবে না।

- আপনি? আপনি কে বলুন তো?

- অনেকদিনের আগের ব্যাপার তো। বত্রিশ বছর। মনে হচ্ছে এই কথোপকথনটা আপনি ভুলে গেছেন বিমলবাবু।

- আপনি কে?

- এখনও নিজের জ্যান্ত চেহারাটা চিনতে পারলেন না বিমল দত্ত মহাশয়? আমিই যে বিমল দত্ত, আমিই জ্যান্ত আপনি। আর আজই সাতাশে সেপ্টেম্বর বিমলবাবু। আপনি বত্রিশ বছর পিছিয়ে এসেছেন। আমিই ডেকে এনেছি।   বিমলবাবু শুনুন, আপনার অবয়ব এতক্ষণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাত এগারোটা চল্লিশ বাজে। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাকে কাজ সেরে ফেলতে হবে। কেমন? এ'বার আসুন এ'দিকে। ক্যুইক।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু