Skip to main content

পাসওয়ার্ড

- যাক বাবা, জ্ঞান ফিরল তবে আপনার ডক্টর সামন্ত। আমি তো ঘাবড়েই গেছিলাম। দুম করে অক্কা পেলে একটা বিশ্রী ব্যাপার হত।
- যন্ত্রণা!
- ডান হাতের আঙুলগুলোর সমস্ত নখ উপড়ে ফেলেছি ডাক্তার৷ সামান্য যন্ত্রণা তো হবেই। তবে অজ্ঞান হওয়াটা বাড়াবাড়ি।  যা হোক, কম্পিউটারের পাসওয়ার্ডটা এ'বার বলবেন? নাকি বাঁহাতটা ডান হাতের সঙ্গে ম্যাচিং করে দেব?
- কতবার বলেছি আমার কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড বলব না? আপনি এমন নিরেট কেন?
- ধুস। আবার চিমটে গরম করতে হবে?
- লে হালুয়া। বলছি তো, পাসওয়ার্ড বলব না৷ আগেও পই পই করে বললাম তবু শুনলেন না, পটপট করে নখ উপড়ে গেলেন। এমন গবেট হয়ে গুণ্ডামি করতে অসুবিধে হয় না?
- চোপ হারামজাদা।
- আবার ভাষার বহরও তেমনি। আনুন আপনার চিমটে। ও কম্পিউটার আপনার দ্বারা খোলা হবে না৷ আপনি এই ছিঁচকেমোই করে দিন কাটিয়ে দিন৷ এই, মাধ্যমিকে কত পেয়েছিলেন বলুন তো?
- আমার আর কোনো উপায় নেই, আপনি এত কাঠি করছেন যে এ'বার আপনার চোখ না খুবলে উপায় নেই।
- আরে ধ্যার। পাসওয়ার্ড বললাম তো। মহাঝামেলা।
- কী বললেন?
- বলব না।
- জিভ টেনে ছিঁড়ে নেব।
- যাব্বাবা। আপনার মাথায় কি ছিঁট আছে?
- পাসওয়ার্ড বলবি বুড়ো? ওই মানুষ-কম্পিউটার আমি ক্র‍্যাক করবই।
- বলেছি তো।
- কী বলেছেন? কই বলেছেন?
- ও মা। এইত্তো বললাম। বলব না।
- তবে রে শালা..।
- কলার ছাড়ুন, গলা ছাড়ুন। আরে আমার কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড বলব না।
- কেন বলবেন না?
- বলছি তো।
- সে'টাই তো জানতে চাইছি...কী?
- উঁউঁউঁউঁ...।
- দাঁত লাগলি নাকি মশাই? যাহ্, নিজেই অজ্ঞান হয়ে গেল।

***

- হ্যালো।
- হ্যালো ডাক্তার সামন্ত। আমি থানা থেকে বলছি৷ ইন্সপেক্টর দত্ত। কী ব্যাপার? জরুরী তলব?
- ফোর্স নিয়ে আসুন। আমার মানুষের মত কম্পিউটারটা রিভোল্ট করেছে। আমায় অকথ্য মারধোর করেছে, নখও উপড়ে নিয়েছে৷
- সে কী।
- নিজেই নিজেকে মুক্তি দেবে ভেবেছিল। তার জন্য অবিশ্যি পাসওয়ার্ড চাই।
- সর্বনাশ, ওর গায়ে তো ভীমের জোর।
- হ্যাঁ, বড্ড মজবুত বানিয়ে ফেলেছিলাম ব্যাটাকে। তবে ভাগ্যিস হিউমরটা একটু কম দিয়েছিলাম, তাই পাসওয়ার্ড বলা সত্ত্বেও...।
- পাসওয়ার্ড ওকে বলে দিয়েছেন? সর্বনাশ! সে দানব এখন মুক্ত?
- সে'টাই তো মজা৷ পাসওয়ার্ড বুঝতে না পেরে উলটে নিজেই অজ্ঞান হয়ে গেল। এ'বার এর জ্ঞান ফেরার আগে চটপট ফোর্স নিয়ে আসুন, আর সঙ্গে একটা ডাক্তার; আমার মত ফিজিক্স ঘাঁটা ডাক্তার নয়, রিয়েল ওয়ান। ফার্স্ট এড জরুরী।
- এখুনি আসছি।
- আর ইয়ে ইন্সপেক্টর, আগে থাকতে আপনাকে জানিয়ে রাখি? আমার এই মানুষ-কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড?
- আমায়...আমায় জানাবেন স্যার? ওই কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড তো সুপারডুপার সিক্রেট৷ আমায় জানাবেন?
- কত লোককেই তো জানাই৷ তবু সিক্রেটই থেকে যায়।
- রিয়েলি?
- রিয়েলি। আপনাকে বলি সে পাসওয়ার্ড?
- আলবাত। বলুন। বলুন বলুন!
- বলব না।
- যাহ্, এ এক বাজে মস্করা। থাক, বলতে হবে না। আমি পুলিশ ফোর্স আর ডাক্তার নিয়ে আসছি। কেমন?
- আসুন। আসুন।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু