Skip to main content

ইলেক্ট্রনিক্যালামিটি

যতই লজিকটজিক নিয়ে বাতেলা ঝাড়ি, ইলেকট্রনিক যন্ত্র কেনার সময় মন নরম হয় আসে। বারবার মনে হয় এ'সব জিনিস রাশিফল দেখে আর পঞ্জিকা কনসাল্ট করে কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দু'টো জিনিস ঘটছে; এক, আত্মবিশ্বাসটিশ্বাস কমে টাকা-টু-ডলারে এসে ঠেকেছে আসে আর দুই, ইলেক্ট্রনিকের ভাগ্য ক্রমশ ফিক্সডিপোজিটের ইন্টারেস্ট হয়ে উঠছে।

ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় বাবা ফিলিপ্সের স্টিরিও টেপ রেকর্ডার কিনেছিলেন। সে'টার ব্যবহার তদ্দিন চলেছে যদ্দিন না ক্যাসেট ব্যাপারটা বাজার থেকে গায়েব হয়েছে। আর অন্যদিকে আমি। শৌখিন ইলেকট্রনিক কিছু কেনামাত্রই মনে হয় টাকার গায়ে চুন-খয়ের-চমনবাহার লাগিয়ে জলে দিলাম। আকাশে মেঘ দেখলে পলিথিনের প্যাকেট জোগাড় করে মোবাইল মুড়ে রাখি। ইয়ারফোন কানে কম থাকে, বেশির ভাগ সময় কাটে তারের জট ছাড়িয়ে। ঢাকুরিয়ায় মেঘ ডাকলে বেহালায় বৌকে ফোন করি টিভির প্লাগ খুলে ফেলতে।

কিন্তু তবু অতর্কিতে ঘটে যায় গোলমাল। রিভিউয়াররা বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর আনবক্সিং করে থাকেন, আর আমি খুঁজে বের করি আউট অফ দ্য বক্স যত সমস্যা। সাধারণত মোবাইল ফোনের স্ক্রিনট্রিন ভাঙে, আমার অতিসাবধানে রাখা ফোন বিতিকিচ্ছিরি ভাবে বেঁকে যায়৷ এই এখন যেমন বেঁকে যাওয়া ফোন থেকে টাইপ করছি। কেউ বাঁকা চোখে তাকালে খিচখিচ করে উঠি; শাওমি এক্সট্রা কার্ভড ফোন বের করেছে; লিমিটেড এডিশন, শুধু চীনের জন্য, আমি আমি  স্মাগল করিয়ে আনিয়েছি। ইয়ারফোন থেকে মাঝেমধ্যে অদ্ভুত রকমের গা শিরশিরে শব্দ বেরিয়ে আসে; এক বন্ধুর ধারণা এলিয়েনরা যোগাযোগ করতে চায়। একটা ওজন মাপার যন্ত্র কিনেছিলাম, দু'মাসের মাথায় স্ট্রেট অক্কা। বাড়ির লোকজন এমন ভাবে তাকায় যেন কোনো অসহায় শ্রমিকের ঘাড়ে নিজের পাপী ওজন চাপিয়ে হত্যা করেছি।

আর সবচেয়ে খতরনাক ব্যাপার হল ওয়ারেন্টি। আজকাল হাসপাতালের চেয়ে ইলেক্ট্রনিক সার্ভিস সেন্টারে গেলে বেশি বুক কাঁপে। কাস্টোমার কেয়ার দাদা দিদিদের সামনে মনেমনে নতজানু হয়ে পড়ি। বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের ওয়ারেন্টি আর নেতাদের ভোটের আগের বাতেলা; এ'সব শুনে শুনে যে কত রোম ধ্বংস হয়৷ আমি বলি 'দেখুন তো, মনে হচ্ছে মোবাইলের জ্বর হয়েছে'। বরফ ঠাণ্ডা কণ্ঠে কাস্টোমারকেয়ার দাদা-দিদি বলেন 'আই অ্যাম সরি মিস্টার মুখার্জি। বড্ড দেরী করে ফেলেছেন। পেশেন্টের দু'টো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন কিডনি লাগবে'।
ব্যাস, হাতে কাচভাঙা হ্যারিকেন, মুখে পোড়া ছাই, কানে গলানো মোম আর জানে গরম কয়লা।

বছরভর যত ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের রিভিউ দেখি বা পড়ি, ততটা পরিমাণে ভালো বই পড়লে এবং সিনেমা দেখলে বছরখানেকের মধ্যে টিভি চ্যানেলের প্যানেলে প্যানেলে ঘুরে বিভিন্ন বিদগ্ধজনের মনপ্রাণ দগ্ধ করে ফেলতে পারতাম। সবাই অনুরাগ কশ্যপ থেকে মুরাকামি নিয়ে আলোচনা করে, আমি মনে মনে গীকিরঞ্জিত আর এনডিটিভি গ্যাজেটস আউড়ে চলি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু