Skip to main content

যুধিষ্ঠির ও কলকাতা

- অ্যাই অ্যাই অ্যাই...যুধিদা তিন ছক্কা পুট চেলেছে। গোহারা গোহারা। আমরা জিতে গেছি যুধিদা। ভদ্দরলোকের এক কথা। এ'বার তোমাদের বারো বছরের বনবাস, আমাদের ইন্দ্রপ্রস্থে ফুর্তি।

- ব্রাদার দুর্যো, বলছিলাম কী...ইয়ে...।

- না না না...আপনি ধর্মরাজ, কথার খেলাপ করলে দেবতাদের মনখারাপ হবে। নীতিকথার লিস্টি সব নতুন করে নোটারাইজ করতে হবে। সে কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না। না না না।

- আহ দুর্যো, তোমার সবেতেই বাড়াবাড়ি। কতবার বলেছি, অর্জুন ভীমের রক্তের শেষ বিন্দু খরচ না করে আমি মচকাব না। শুধু বলছিলাম কী..ডেঙ্গুর সিজন চলছে ভাই। জঙ্গলটা অ্যাভয়েড করলে হয়না? ইন্দ্রপ্রস্থ তুমিই দেখভাল করো না, আমরা বরং একটু ঘুরেই আসি। কিন্তু জঙ্গল না, জঙ্গলে উইকেন্ড শুনেছি বড্ড বোরিং। স্রেফ  মুর্গীর রোস্ট আর হরিণ কষা খেয়ে কদ্দিন থাকা যায় বলো। তাই বলছিলাম একটা অলটারনেট অপশন ভাবো দেখি, শহর ঘেঁষা কিছু একটা। এই নকুলের দিব্যি, আমি এই অপশন না মানলে নকুলকে ছারপোকায় ছারখার করবে।

- (শকুনির সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলার পর) আচ্ছা বেশ। বলছেন যখন, ছোট ভাই হয়ে এই রিকুয়েস্ট নাকচ করি কী করে। বনবাস ক্যান্সেল।

- ক্যান্সেল দুর্যো? মাইরি?

- রিয়েলি। শুধু তাই নয়, বারো বছরটাও বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছিল। এক বছর থাকলেই হবে। তারপরেই ইন্দ্রপ্রস্থ ওয়াপিস আপনার।

- অনলি বারো মাস? শুনলি ভাই সহদেব? শুনলি? দুর্যো বড্ড মাইডিয়ার। ভীমটা মাথামোটা তাই অকারণ গালমন্দ করে। তা ব্রাদার দুর্যো, এই একবছর কোথায় থাকতে হবে?

- শহরেই।

- শহর? বুকে আয় ভাই।

- কলকাতায়। যে কোনো ফ্লাইওভারের নীচে। একটি বছর। ও কী যুধিদাদা, শরীর আনচান করছে নাকি? গা গুলোচ্ছে?

- না মানে, যদি তলিয়ে দেখিস দুর্যো; বনজঙ্গল ব্যাপারটা নেহাত মন্দ নয়। ইনফ্যাক্ট কবিই তো বলেছেন; দাও ফিরে সে অরণ্য লহ এ ফ্লাইওভার। আর জঙ্গল গেলে কি এক বছরের মধ্যে ফিরতে ইচ্ছে করবে ভাই? অমন অক্সিজেনের গুদাম ছেড়ে আসতে কার ভালো লাগে বলো। ডেঙ্গু হলে হবে, আমাদের ওই বারো বছরের বনবাসই ভালো। কী বলো পাঞ্চালী?

- সরি যুধোদা। বারো বছরের বনবাসের অপশন ক্যান্সেল। একবছর ফ্লাইওভারের তলে থাকো। তা'লেই হবে।

- আহ্ দুর্যো, তোমার এখনও ছেলেমানুষের মত জেদ। বেশ। শোন, বারো বছরের বনবাস শুধু নয়, তারপর এক বছর অজ্ঞাতবাসেও থাকব। তোর জন্য বোনাস অফার৷ কিন্তু ভাইটি, কলকাতার ফ্লাইওভারের নীচে থাকতে বোলো না। প্লীজ। প্লীজ।

- দাদার কথা ফেলি কী করে। বেশ। তাই হোক।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু