Skip to main content

ময়ূখের মাস্টারমশাই

- আরে! মাস্টারমশাই?
- কে?
- আগে প্রণামটা সেরে নিই।
- আরে এ'সব আবার কেন...। দীর্ঘজীবী হও।
- চিনতে পারেননি?
- অভ্র? স্কুলের লেফট ব্যাক?
- না, আমি অভ্রদার একবছরের জুনিয়র। ময়ূখ।
- ময়ূখ,  হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পড়েছে। তুমিই তো বরাবর কেমিস্ট্রিতে হাইয়েস্ট পেতে। আটানব্বইয়ের ব্যাচ।
- ব্যাচটা ঠিক ধরেছেন তবে কেমিস্ট্রিটা ঠিক...ইয়ে...মাস্টারমশাই আমি আপনার অযোগ্য ছাত্র৷ কোনোরকমে টেনেটুনে পাশ করতাম। আপনি বোধ হয় মৃণালের কথা বলছেন, সে বরাবর কেমিস্ট্রিতে টপ করত।
- রাইট! মৃণাল। তাই তো। আসলে বয়স বাড়লে যা হয় আর কী। স্মৃতিশক্তি মিইয়ে এসেছে৷ তা এখন আছ কোথায়?
- বম্বেতে, নিজের একটা ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেছি। পাড়ায় এলাম প্রায় বছর দশেক পর।
- বাহ্, বাহ্। এই তো চাই, নিজের মত করে কিছু একটা করছ। এ'টাই তো দরকার।
- আসলে চাকরীর যা বাজার...।
- তা ঠিক..উমম...মনে পড়েছে।
- আজ্ঞে?
- ময়ূখ সান্যাল। রাইট? অফস্পিন বল করতে? স্কুল লিগের সেমিফাইনালে শেষ ওভারে চারটে উইকেট নিয়ে জিতিয়েছিল?
- আপনার মনে আছে মাস্টারমশাই?
- সো গুড টু সী ইউ এগেইন ময়ূখ। আমার উচিৎ ছিল তোমায় আগেই চিনতে পারা৷ এমন ভুল আমার সচরাচর হয় না।
- আপনার দোষ নেই৷ এমন মেদবহুল চেহারা তো আগে ছিল না। তা, আপনি কেমন আছেন মাস্টারমশাই? আপনার বাগানের শখ এখনও আছে?
- এখন আমার বাড়িতে এলে অন্তত বাইশ রকমের গোলাপ দেখতে পারবে।
- বাহ্। দারুণ তো।
- তা এসো না একদিন, আজকেই এসো।
- নিশ্চয়ই আসব।
- তোমার বাড়ির সবাই ভালো আছেন ময়ূখ?
- বাবা আর নেই। মা আমার সঙ্গেই থাকেন।
- বিয়েথা করেছ?
- হ্যাঁ।
- ছেলেপিলে?
- ছেলে নেই। একটি পিলে। পারলে আজ তাকে আপনার বাড়ি নিয়ে যাব'খন।
- এনো, অবশ্যই এনো। ওকে তোমাদের কানমলার গল্প করব। আর তোমরা আজ বিকেলেই এসো, ওই সময় আমি আমার গোলাপ গাছগুলোর দেখভাল করি৷ রিটায়ার করেছি বেশ কিছু বছর হল, এখন ওগুলোই আমার ছাত্র। তা ময়ূখ, তোমার ব্যবসাটা কীসের?
- হুঁ?
- ওই যে বললে বিজনেসে ঢুকেছ। কী বিজনেস?
-  বড্ড বেলা হয়ে গেছে মাস্টারমশাই। আমি বরং এখন এগোই।
- বেশ। এসো কিন্তু। আমার হাতের কানমলা যতটা তেতো ছিল, আমার হাতের চা ততটাই চমৎকার। কোয়ালিটি দার্জিলিং লিভস। ওই একটা লাটসাহেবি কিছুতেই ছাড়তে পারিনি।

ফেরার সময়ই ময়ূখ ঠিক করে নিয়েছিল যে মাস্টারমশাইকে এক টিন দামী চা পাতা উপহার দেবে। মানুষটা বড্ড ভালো। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতেন ছাত্রদের জন্য, খেলাপাগলও বটে। তবে চায়ের টিন হাতে করে তাঁর বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না, পোস্টে পাঠাতে হবে। বিকেলের প্ল্যানও ক্যান্সেল। না গেলে সামান্য দুঃখ পাবেন বটে, কিন্তু ফের যদি মাস্টারমশাই 'তোমার ব্যবসাটা কীসের' জিজ্ঞেস করেন তা'হলে বড্ড ফাঁপরে পড়তে হবে। বৃদ্ধ কেমিস্ট্রির মাস্টারকে সে কী করে বোঝাবে যে তার ফুলেফেঁপে ওঠা ব্যবসাটা আদতে ইস্কুলের ব্যবসা আর ছাত্রদের আনাগোনাকে সে স্রেফ টার্নওভার বলে চেনে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু