Sunday, September 16, 2018

ময়ূখের মাস্টারমশাই

- আরে! মাস্টারমশাই?
- কে?
- আগে প্রণামটা সেরে নিই।
- আরে এ'সব আবার কেন...। দীর্ঘজীবী হও।
- চিনতে পারেননি?
- অভ্র? স্কুলের লেফট ব্যাক?
- না, আমি অভ্রদার একবছরের জুনিয়র। ময়ূখ।
- ময়ূখ,  হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পড়েছে। তুমিই তো বরাবর কেমিস্ট্রিতে হাইয়েস্ট পেতে। আটানব্বইয়ের ব্যাচ।
- ব্যাচটা ঠিক ধরেছেন তবে কেমিস্ট্রিটা ঠিক...ইয়ে...মাস্টারমশাই আমি আপনার অযোগ্য ছাত্র৷ কোনোরকমে টেনেটুনে পাশ করতাম। আপনি বোধ হয় মৃণালের কথা বলছেন, সে বরাবর কেমিস্ট্রিতে টপ করত।
- রাইট! মৃণাল। তাই তো। আসলে বয়স বাড়লে যা হয় আর কী। স্মৃতিশক্তি মিইয়ে এসেছে৷ তা এখন আছ কোথায়?
- বম্বেতে, নিজের একটা ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেছি। পাড়ায় এলাম প্রায় বছর দশেক পর।
- বাহ্, বাহ্। এই তো চাই, নিজের মত করে কিছু একটা করছ। এ'টাই তো দরকার।
- আসলে চাকরীর যা বাজার...।
- তা ঠিক..উমম...মনে পড়েছে।
- আজ্ঞে?
- ময়ূখ সান্যাল। রাইট? অফস্পিন বল করতে? স্কুল লিগের সেমিফাইনালে শেষ ওভারে চারটে উইকেট নিয়ে জিতিয়েছিল?
- আপনার মনে আছে মাস্টারমশাই?
- সো গুড টু সী ইউ এগেইন ময়ূখ। আমার উচিৎ ছিল তোমায় আগেই চিনতে পারা৷ এমন ভুল আমার সচরাচর হয় না।
- আপনার দোষ নেই৷ এমন মেদবহুল চেহারা তো আগে ছিল না। তা, আপনি কেমন আছেন মাস্টারমশাই? আপনার বাগানের শখ এখনও আছে?
- এখন আমার বাড়িতে এলে অন্তত বাইশ রকমের গোলাপ দেখতে পারবে।
- বাহ্। দারুণ তো।
- তা এসো না একদিন, আজকেই এসো।
- নিশ্চয়ই আসব।
- তোমার বাড়ির সবাই ভালো আছেন ময়ূখ?
- বাবা আর নেই। মা আমার সঙ্গেই থাকেন।
- বিয়েথা করেছ?
- হ্যাঁ।
- ছেলেপিলে?
- ছেলে নেই। একটি পিলে। পারলে আজ তাকে আপনার বাড়ি নিয়ে যাব'খন।
- এনো, অবশ্যই এনো। ওকে তোমাদের কানমলার গল্প করব। আর তোমরা আজ বিকেলেই এসো, ওই সময় আমি আমার গোলাপ গাছগুলোর দেখভাল করি৷ রিটায়ার করেছি বেশ কিছু বছর হল, এখন ওগুলোই আমার ছাত্র। তা ময়ূখ, তোমার ব্যবসাটা কীসের?
- হুঁ?
- ওই যে বললে বিজনেসে ঢুকেছ। কী বিজনেস?
-  বড্ড বেলা হয়ে গেছে মাস্টারমশাই। আমি বরং এখন এগোই।
- বেশ। এসো কিন্তু। আমার হাতের কানমলা যতটা তেতো ছিল, আমার হাতের চা ততটাই চমৎকার। কোয়ালিটি দার্জিলিং লিভস। ওই একটা লাটসাহেবি কিছুতেই ছাড়তে পারিনি।

ফেরার সময়ই ময়ূখ ঠিক করে নিয়েছিল যে মাস্টারমশাইকে এক টিন দামী চা পাতা উপহার দেবে। মানুষটা বড্ড ভালো। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতেন ছাত্রদের জন্য, খেলাপাগলও বটে। তবে চায়ের টিন হাতে করে তাঁর বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না, পোস্টে পাঠাতে হবে। বিকেলের প্ল্যানও ক্যান্সেল। না গেলে সামান্য দুঃখ পাবেন বটে, কিন্তু ফের যদি মাস্টারমশাই 'তোমার ব্যবসাটা কীসের' জিজ্ঞেস করেন তা'হলে বড্ড ফাঁপরে পড়তে হবে। বৃদ্ধ কেমিস্ট্রির মাস্টারকে সে কী করে বোঝাবে যে তার ফুলেফেঁপে ওঠা ব্যবসাটা আদতে ইস্কুলের ব্যবসা আর ছাত্রদের আনাগোনাকে সে স্রেফ টার্নওভার বলে চেনে।

No comments: