Skip to main content

সমর্থক

- এই যে, মন্টুদা! একটা জরুরী কথা ছিল।
- আরে তপেন যে৷ সব ভালো তো?
- ওই জরুরী ব্যাপারগুলো আপনাকে জানিয়েই...।
- শোনো, এখুনি আমায় একটা জরুরী মিটিংয়ে বসতে হবে যে৷ পার্টিঅফিস থেকে লোকজন এসে বসে আছে আমার চেম্বারে। সবে ইলেকশন জিতেছি, তাও এমন একটা ডিফিকাল্ট সীটে৷ বুঝতেই পারছ...হে হে হে!
- বেশ। মিটিং সেরে নিন৷ আমি বাইরের ঘরে বসছি৷
- না না তপেন৷ তুমি বরং সামনের শনিবার এসো৷ তোমার কথাও শোনা হবে, একসঙ্গে বসে চাও খাওয়া যাবে৷ কেমন?
- চায়ের ব্যাপারটা শনিবার হলে ক্ষতি নেই৷ কিন্তু জরুরী ব্যাপারগুলো নিয়ে আজ আলোচনা না করলেই নয়।
- আজ হবে না৷
- বললাম তো মন্টুদা৷ আমার অপেক্ষা করতে কোনও অসুবিধে নেই।
- জেদ? বটে? বাড়াবাড়ি হচ্ছে তপেন৷
- উপায় নেই মন্টুদা।
- যা বলার আমার সেক্রেটারিকে গিয়ে বলো।
- আপনার সেক্রেটারিকে তো ভোট দিইনি মন্টুদা৷
- তোমার সাহস তো কম নয়? পার্টির একজন সমর্থক বলে তোমায় এদ্দিন জানতাম৷
- সমর্থক শব্দটা বড় গোলমেলে মন্টুদা৷ আমি ভোটার৷ আর ভোট দিয়ে যখন জিতিয়েছি, তখন কাজকর্মের হিসেবনিকেশ তো আমাকেই বুঝে নিতে হবে।
- ভোট দিয়েছ বলে কি মাথা কিনে নিয়েছ নাকি?
- ডেমোক্রেসির যুগে মানুষ কিনে নেওয়ার কথা শুধু নেতারাই ভাবতে পারেন৷ ভোটার হিসেবে আমার কাজ শুধু কৈফিয়ৎ আদায় করা৷ পার্টি অফিসের ছেলেছোকরারা এসেছে, মজলিস বসবে আপনার চেম্বারে; সে'সব তো ভালো কথা৷ কিন্তু আমার প্রয়োজনের কথাগুলো না শুনে পার পাবেন না।
- ওই বিশু দত্ত এমএলএ হলে বুঝতে কত ধানে কত চাল৷ এত বড় বড় বোলচাল তার সামনে হাঁকলে বিশুর পোষা গুণ্ডারা পেঁদিয়ে তক্তা করে দিত৷
- বিশু দত্ত আর তার পোষা গুণ্ডাদের হিসেব আমরা নিজের মত করে বুঝে নিয়েছি দত্তদা৷ তাকে আমরা ভোট দিয়ে জেতাইনি, কাজেই তাকে নিয়ে এ মুহূর্তে কোনও মাথাব্যথাও নেই৷ কিন্তু আপনাকেও যে এই বেলা মেপে নিতে হবে মন্টুদা।
- তুমি আমায় থ্রেট দিচ্ছ তপেন? তুমি জানো আমি কী করতে পারি?
- অনেক কিছুই পারেন৷ গুণধর স্যাঙাৎসব আপনার পাশেও ঘুরঘুর করে, তাও জানি৷ কিন্তু আমি খুব ত্যাঁদড় ভোটার মন্টুদা৷ নিজের ভোটের হিসেব সুদেআসলে আদায় না করতে পারলে আমার স্বস্তি হয়না৷ বিশ্বাস না হলে বিশু দত্তকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন; গত ভোটে তাকেই সাপোর্ট করেছিলাম কিনা!
- তোমার মত সমর্থক যে কোনও পার্টির জন্য আপদ৷
- যাক, এ সত্য যদি ঠাহর করে থাকতে পারেন, তা'হলে দেশের অন্তত অমঙ্গলের সম্ভাবনা আর নেই৷ আমি অপেক্ষা করছি মন্টুদা৷ এই দেখুন, পাড়ার যাবতীয় সমস্যার লম্বা ফর্দ বানিয়ে এনেছি৷ আজ পয়েন্ট বাই পয়েন্ট বুঝিয়ে যাব৷ আর প্রতি শানিবার এসে কদ্দূর কী এগোল সে হিসেব নিয়ে যাব৷ তা, ইয়ে! শনিবারের চায়ের অফারটা কি জলে গেল মন্টুদা?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু