Skip to main content

লক্ষ্মী

- কে? বিমল?

- হ্যাঁ ভজাদা।

- বাইরে দাঁড়িয়ে কেন। ভেতরে আয়।

- না, মানে..ঠিক বলেকয়ে আসার সুযোগ পাইনি তো।  তুমি মক্কেলদের নিয়ে ব্যস্ত আছ কিনা এই ভেবে একটু হেসিটেট করছিলাম আর কী।

- কাতলা আর ওয়াসাবি দিয়েএকটা এক্সপেরিমেন্টাল রেসিপি ফ্রেম করছিলাম।  সে'দিক থেকে বলতে গেলে ব্যস্ত তো বটেই। আয়, বস। এ, কী। ভিজে কাক অবস্থা যে।

- অসময়ের বৃষ্টি। আর এমন ঝমঝমিয়ে নামল। ট্যাক্সি থেকে নেমে গিয়ে গলির ভিতর দৌড়ে আসতে গিয়েই..।

- উকিলের চেম্বারে ব্যাকআপ শার্ট  এক্সপেক্ট করিস না, গামছাও নেই। তুই বরং শার্টটা খুলে টেবিল ফ্যানের সামনের ওই চেয়ারটায় মেলে দিয়ে বস। আর আমি কফি বানাই গিয়ে। ফ্লাস্কের নয়, টাটকা। সে'সরঞ্জাম আজকাল অফিসেই রাখছি। তবে ব্ল্যাককফি।

- না না। অত ব্যস্ত হয়ো না। আমি এখুনি বেরোব। গলির মুখে ট্যাক্সিটাকে দাঁড় করিয়ে এসেছি।

- সে কী৷ এমন শশব্যস্ত হয়ে এ'খানে এলি? আমি ভাবলাম ওই ইউসুয়াল তাস আর আড্ডার টানে এসেছিস। তা, কোনও আইনি ফাঁপরে পড়লি নাকি?

- না ভজাদা। 

- তবে?

- ব্যাপারটা খুবই পাতি..।

- বলেই ফেল না বিমল। ভেজা গায়ে অত ভূমিকা ফাঁদার কোনও দরকার নেই।

- আজ সন্ধ্যেবেলা একবার আমার ফ্ল্যাটে ঢুঁ মেরে যেও৷ যদি খুব ব্যাস্ত না থাকো।

- সে কী৷ উইকেন্ড গুলজার? স্কচটচ এনে রেখেছিস নাকি? তা ফোনে বলে দিলেই তো হত..।

- তা হত। তবু, এ'দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম তাই..। তবে ইয়ে, আসরটা ঠিক স্কচ ফিশফ্রাইয়ের নয় কিন্তু।

- ব্যাপারটা কী বল তো?

- আজ লক্ষ্মীপুজো। জানো তো?

- আমি তো জানি। কিন্তু সে'খবরে তোর কী কাজ কে জানে। 

- সকালের দিকে একটা একটা মূর্তি এনেছি জানো। সঙ্গে ধুপ, ধুনো, ফুল আর সামান্য ফল। এই এখন ফিরে গিয়ে খিচুড়ি আর লাবড়া রাঁধব। সময় পেলে লুচি আর পায়েসও।

- প্রবল নাস্তিক শ্রীমান বিমল হালদারের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো? অথচ আমি কতদিন বলেছি চ' একবার আমার বেনারসের গুরুজির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। ফ্যাসিনেটিং ক্যারেক্টার আর ব্রিজ চ্যাম্পিয়ন। সে'বেলা যত বইপড়া বাতেলা।  

- ব্যাপারটা ঠিক তা নয়৷ পুরুতঠাকুর কেউ আসছে না৷ সে অর্থে পুজোও হবে না।  তবে আমি পাঁচালি পড়ব। তুমি আসবে ভজাদা? আর কাউকে ডাকতে ঠিক সাহস পাচ্ছিনা।

- তোর শরীর ঠিক আছে? তুই পাঁচালি পড়বি? আমার গুরুজির চেয়েও হাইক্লাস কারুর পাল্লায় পড়লি নাকি?আর তাছাড়া হঠাৎ এই পুজো..।

- খুব মায়ের কথা মনে পড়ছিল ভজাদা। খুব। 

- আই সী।

- এই পুজোর দিনটায় মা উপোস করত। নির্জলা। গোটাদিন কেটে যেত ভোগ রান্না আর পুজোর জোগাড়যন্ত্রে৷ সন্ধ্যেবেলা পুরুতমশাই এলে শুরু হত লক্ষ্মীপুজো। তারপর মায়ের পাঁচালী পড়া। দুলে, দুলে। সে কী অপূর্ব রিদম ভজাদা। ভোগের ভুনো খিচুড়ি, বেগুনভাজা, সুজির হালুয়া, লুচি, পায়েসের পাশাপাশি ধুপ, ধুনো, ফুলফুলের গন্ধ মিশে যে কী মনভালো করা একটা ব্যাপার হত। তবে সমস্ত সুগন্ধ ছাপিয়ে যে'টা মনে লেগে থাকত সে'টা হল মায়ের সুবাস। মায়ের সুবাস অবশ্য রিক্রিয়েট করা সম্ভব নয়৷ কিন্তু বাকি গন্ধগুলোর জন্য হঠাৎ কেমন করে উঠল। ঈশ্বর বিশ্বাস নয়..। 

- তোরও বুঝি নির্জলা উপোস আজ? তাই কফি রিফিউজ করলি? বেশ, আমি বরং একটু আগেই যাব। পায়েসটা আমিই চাপাব'খন৷ আমার তাসের পার্টনার রতন মল্লিক গেলে কোনও অসুবিধে নেইতো? পুরুত সে নয়। তবে বড় ভালো বাউল গায়। আজ রাতে তোকে একা রাখব না ভাবছি। তোর পাঁচালী পাঠের অডিয়েন্সও একজন বাড়বে আর রাতের আড্ডায় তোর মনখারাপ বাড়লে বাউলেরও বন্দোবস্ত থাকবে।

- শেষের কয়েকবছর লক্ষ্মীপুজোয় বাড়ি ফিরতে পারিনি জানো। কাজের চাপে। মা অবিশ্যি কোনওদিনও অভিযোগ করত না।

- অভিযোগ করলে ভালো হত, তাই না রে বিমল?

- হেহ্। হয়তো। এই লক্ষ্মীপুজোর দিনটায় এমন দড়াম করব মায়ের কথা মনে পড়ে গেল..। এমন একটা অদ্ভুত আনচান। যাকগে, এখন আসি। দশকর্মার দোকান থেকে কিছু জিনিসপত্র নিতে হবে। 

- ঈশ্বরবিশ্বাসে তোর কাজ নেই। তবে এই আনচানটুকুও আস্তিকতা। বুঝলে বিমলচন্দ্র? নাহ্, আজ আর মক্কেলের অপেক্ষায় চেম্বারে বসে থেকে লাভ নেই। চ', আমিও বরং তোর সঙ্গেই বেরিয়ে পড়ি।

Comments

Unknown said…
আপনাদের সাইটের লেখার গুণগত মান খুবই উন্নত,যা সাধারণ মানুষের জন্য অত্যান্ত উপযোগী । এভাবেই কাজ করতে থাকুন আর আমরা সমৃদ্ধ হতে থাকি।
মাস খানিক হয়েহে একটা সাইট আমার দৃষ্টিআকর্ষণ করছে। "বঙ্গীয় হরি-গুরুচাঁদ আম্বেদকর চেতনা মঞ্চ" নামে একটি সংগঠন সাইটটি পরিচালনা করছে। প্রযুক্তির দিক থেকে সাইটটি তেমন উন্নত না হলেও লেখা ও বিষয়গুলি আমাকে আকর্ষিত করছে। আপনারাও দেখে আসতে পারেন সাইটটি। নিচে সাইটের লিংক দিয়ে দিলাম। এটাকে মার্কেটিং মনে করবেন না।
https://chetanabarta.com/

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু