Skip to main content

প্রজাপতি

কলকাতা সরগরম।
ফুটপাত জমজমাট।
সন্ধ্যের হইহট্টগোল, ট্রামের ঘরঘর, 
বাসের হর্ন আর অটোর হুড়মুড়। 
ভীড়। ঠেলাঠিল। 
"আরে দাদা, একটু দেখে পা ফেলবেন তো" গোছের খোঁটা।

ব্যস্ততার স্রোত বয়ে যায়, সন্ধ্যের এই সময়টা শ্বাস ফেলার ফুরসৎটুকু পায় না কলকাতা। আহা, মানুষের দল বাড়ি ফিরছে। শহরের গায়ে যে কী অবিশ্বাস্য গতি লেগে থাকে এই সময়।

সেও ছুটছিল। 
অবিশ্বাস্য গতিতে। 
তবে কলকাতার উল্টো দিকে। 

কলকাতা ডাইনে ছুটলে, সে এগোচ্ছে বাঁয়ে। 
কলকাতা ছড়া কাটলে, সে ধরছে খোলতাই টপ্পা।
কলকাতা ধুরন্ধর চালে কিস্তিমাত করতে চাইলে, সে চালছে দু'ছক্কা পাঁচ।
কলকাতার কভার ড্রাইভের জবাবে তার বাইসাইকেল কিক।
কলকাতা উত্তম হাসি হাসলে, সে ভাসিয়ে দিচ্ছে তুলসী চক্কোত্তি মার্কা 'বাপ রে বাপ রে বাপ'।

মোদ্দা কথা হল কলকাতার বয়ে চলা অগ্রাহ্য করে সম্পূর্ণ উল্টো খাতে বইছিল সে। গোটা শহরটাকে এক অন্য ডাইমেনশনে ফেলে রেখে অন্য জগতে এসে পড়েছিল সে।

সে ছুটছিল। 
একহাতে কাগজের ঠোঙায় ডিমপাউরুটি৷ পাউরুটি, ডিম আর সর্ষের তেলে ভেজা কাগজের গন্ধ মিলেমিশে তার নাকেবুকে নহবত বসিয়েছিল যেন। অন্য হাতে একজোড়া প্রজাপতি বিস্কুট। 

ডিমরুটির নরম আর প্রজাপতি বিস্কুটের মিঠে মুচমুচ ব্যালেন্স করে সিকি মাইল ছুটে গিয়েছিল সে। শার্টে ঘাম, বুকে ধুকুরপুকুর, আর আলো আলো মুখ। সে ছুটে যাওয়াটা কলকাতার দৃষ্টিগোচর হয়নি। 

তার ছুটে আসা যে দেখেছিল একজোড়া ঝাপসা চোখ। 

- এই যে।

- এ'গুলো কী?

- দু'দিনের জন্য শহরে ঘুরতে আসো। পিটারক্যাটফিটারক্যাট মার্কা লারেলাপ্পাতে কাটিয়ে ওয়াপিস চলে যাও । তাই এই ডিমপাউরুটি। আর চায়ের দোকানের বয়াম থেকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া বিস্কুট। দ্যাট ট্যু প্রজাপতি। কলকাতা মেড-ইজি ফর ইউ।

- তুমি ছুটে আনতে গেলে?

- ডিমপাউরুটির উষ্ণতাটা রিটেন করার জন্য। তাছাড়া, তোমার সময় কম। ছুটলে দু'মিনিট বাঁচে। 

ঝাপসা-চোখজোড়ার শাড়ির আঁচল টেনে ধুকুরপুকুর-বুক নিজের কপালের ঘাম মুছতে চেয়েছিল।
সাহসে কুলোয়নি।

সে সাহসের অভাবটুকুও কলকাতার দৃষ্টিগোচর হয়নি।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু