Skip to main content

চাউমিনার


রাস্তা ঘেঁষা চাউমিনের স্টলগুলোর সবচেয়ে বড় 'প্লাস পয়েন্ট' হলো চাউমিন রান্নাটা আগাগোড়া দেখা যায় এবং উপভোগ করা যায়। বড় রেস্তোরাঁর (বা জোম্যাটোর মাধ্যমে আনানো) চাউমিন প্রথমেই দেখা যায় প্লেটে। চাউমিনের গায়ে কী'ভাবে রং ধরল, সে'টুকু 'অবজার্ভ' করতে না পারলে তৃপ্তি হয়না৷ 

সামান্য পেঁয়াজকুচি আর অনেকটা কুচনো বাঁধাকপি (কিছু ক্ষেত্রে সামান্য রুখাশুখা গাজর কুচিও থাকে) ফায়্যার হবে চাটুর গরম তেলে। মনে রাখা দরকার- 'রাস্তার' চাউমিনে বিনস, বেলপেপার গোছের বাড়তি শখ-শৌখিনতা অদরকারি,সে'খানে চাই মারকাটারি অ্যাকশন । 

চাউমিনের চাটুর ওপর খনখনাখন্ খুন্তি নাড়ার শব্দ, আহা; এর তুলনা শুধু অমলেট বানানোর আগে স্টিলের গেলাসে চামচ দিয়ে ডিম ফেটানোর খটখটর মিঠে শব্দের তুলনা চলতে পারে৷ যা হোক৷ কথা হচ্ছিল চাউমিন নিয়ে। ভাজা পেঁয়াজ আর বাঁধাকপির মধ্যে পড়বে চাউমিন, বাড়বে চাউমিন-ভাজিয়ের ব্যস্ততা৷ পড়বে নুন, মশলা আর (যতই খুঁতখুঁত করুন না কেন) আজিনামোটোর গুঁড়ো। বাতাসে ভেসে বেড়াবে সুবাস। আর সে সুবাসে চড়চড়ে বিদ্যুৎ যোগ হবে ভিনিগার ছড়িয়ে দেওয়া মাত্র। জিভের মধ্যে সুড়ুৎ খেলে যাবে জল। এরপর যেই চাউমিন-ভাজিয়ে সোয়্যাসসের বোতলে হাত দেবেন, আমি হাঁ হাঁ করে উঠব "অল্প, একদম অল্প, কয়েক ফোঁটা মাত্র। কেমন"?

চাউমিন তখন প্রায় তৈরি। চাটুর একপাশে সে চাউমিন সরিয়ে রেখে চাটুর খালি জায়গায় ফের খানিকটা তেল ছড়িয়ে তার ওপর ফেলে দেওয়া হবে ফেটানো জোড়া-ডিম। খুন্তি দিয়ে নির্দয়ভাবে কচুকাটা করা হবে সে ডিমভাজা। বাবলর‍্যাপ ফাটানোর মতই এই চাটুর ওপর ভাজা ডিম ক্ষতবিক্ষত করাটাও অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক কাজ। যা হোক, তারপর সেই চাউমিন আর ভাজাডিম মিলে মিশে একাকার।

চাটু থেকে সে চাউমিন নামানোর আগে চাউমিন-ভাজিয়ের প্রতি নম্র আব্দার ভাসিয়ে দেওয়াটাও রুটিন; "চাউমিনের ওপর দিয়ে লঙ্কাকুচি আর সামান্য কাঁচা পেঁয়াজ ছড়িয়ে দেবেন প্লীজ৷ আর হ্যাঁ, স্যস-ট্যস দেবেন না, কেমন"?

 বুকের মধ্যে তখন কয়েক হাজার জয় গোস্বামী একসঙ্গে মন্ত্রপাঠ করে চলেছেন  
"পাগলী, তোমার সঙ্গে এগচাউমিন কাটাব জীবন"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু