Skip to main content

সুবিনয়বাবু আর মনু


- আরে। মনু না?

- মনু? 

- তুই মনুই তো? প্রেসিডেন্সি? বারুইপুর বুলেটসের সেন্টার ফরওয়ার্ড? ফুচকা চ্যাম্পিয়ন? 

- জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ছেলেবেলা থেকে ক্রনিক হাঁপানি, তাই ফুটবল জীবনে খেলিনি।  বারুইপুরের ছোটপিসি থাকে বটে তবে ও'দিকে  বড় একটা যাওয়া হয়না। আর ক্লাস সেভেন থেকে গ্যাস্ট্রিক আলসারে জেরবার, একবারে ম্যাক্সিমাম তিনটে ফুচকা খেতে পারি, আলু আর টক জল ছাড়া।

- তা'হলে তো মনুর সঙ্গে মিলছে না। কিন্তু চেহারায় কোথায় যেন একটা স্ট্রাইকিং ইয়ে আছে। 

- স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার হল,আপনকে দেখেও আমার ঠিক তেমনই একটা ইয়ে বোধ হয়েছিল। চেহারায় ঠিক কোথায় যেন..।

- আপনি শিওর আপনি মনু নন?

- সেন্ট পার্সেন্ট৷ মানিব্যাগে আধার কার্ড আছে৷ চাইলে দেখতে পারেন।  আমি সুবিনয় দত্ত৷। কিন্তু ব্যাপারটা খুব ইন্ট্রিগিং, এই আপনার চেহারা দেখেও আমার এমন এই ইয়ে হওয়াটা৷ চেনা চেনা যেন। যাক গে, ভেরি সরি ভায়া৷ আমি মনু নই। খুব আশা করেছিলেন নিশ্চয়ই..পুরনো চেনামুখের সঙ্গে দেখা হল ভেবে। 

- কী আর করা যাবে বলুন।

- তা আপনার নামটা তো জানা হল না।

- আমার নাম? মনু। 

- এক্সকিউজ মি?

- মনু।

- আপনিই মনু? 

- প্রেসিডেন্সি। বারুইপুর বুলেটস। ফুচকা চ্যাম্পিয়ন৷ 

- কিন্তু তবে যে এই..।

***

গড়িয়াহাটের মোড়ে হঠাৎ দেখা৷ আর সামান্য গোলমেলে কথাবার্তার পর ভদ্রলোক যেন স্রেফ উবে গেলেন৷ এই মিস্টরিয়াস মনুকে নিয়ে সুবিনয়বাবুর মনে এক বিশ্রী অস্বস্তি তৈরি হল। সে অস্বস্তি কাটাতে সুবিনয়বাবু গিয়ে দাঁড়ালেন  দাস কেবিনের সামনে। গায়ে পড়ে এমন ফাজিল আলাপ করার কোনও মানে হয়?

দোকানের ভিতর থেকে স্পেশ্যাল মোগলাইয়ে সুবাস নাকে আসতেই সুবিনয়বাবুর ব্রেনে লাগল হাইভোল্টেজ স্পার্ক। তাই তো! মনু তো অচেনা নয়৷ বছর কুড়ি আগে, কলেজে পড়ার সময় নিজের ডায়েরীতে একটা উপন্যাস লিখতে শুরু করেছিলেন। দেড়শো পাতা পর্যন্ত তরতর করে সে'উপন্যাস এগিয়েওছিল। কিন্তু আর পাঁচটা ছেলেমানুষি ঝোঁকের মত সে লেখাটাও অসম্পূর্ণই রয়ে গেছিল। সেই অসম্পূর্ণ উপন্যাসের নায়ক মানবেন্দ্র ওরফে মনু চেহারায় ও স্বভাবে সুবিনয়েরই মত। কিন্তু সুবিনয়ের দুর্বলতাগুলো মনুর মধ্যে আদৌ নেই৷ মনু যেমন স্মার্ট, তেমনি সাহসী, তেমনি রোম্যান্টিক আর তেমনি চাবুক তার স্বাস্থ্য। 

 নিশ্চয়ই কোনও ব্যাটা সে ডায়েরী হাতিয়ে সে লেখা পড়েছে। আর তারপর আজ এসে গায়ে পড়ে সুবিনয়বাবুর ওপর এমন একটা বিচ্ছিরি প্র‍্যাক্টিকাল জোক চাপিয়ে সরে পড়ল। একটা তেতো স্বাদ সুবিনয়বাবুর গোটা মুখে ছড়িয়ে পড়ল। দাস কেবিনের মোগলাই সুবাসও তার মনের চনমন ফেরাতে পারল না। কিন্তু ট্রাঙ্কে রাখা পুরনো ডায়েরী খুলে পড়ল কে? সর্ষের মধ্যে এমন ঘোড়েল ভূত এলো কী করে? প্রথমেই সন্দেহটা গিয়ে পড়ল নিজের ফিচেল শ্যালকটির প্রতি৷ 

যা হোক, মিনিবাসের বদলে ট্যাক্সি ধরে সোজা বাড়ি ছুটলেন সুবিনয়বাবু। 

**

ট্রাঙ্কের তালা ভাঙতে হল। সেই সাতপুরনো বহুবছরের জং পড়া তালার চাবি অনেক আগেই হারিয়েছে। কাজেই ডায়েরীটা বেহাত হওয়ার কথা নয়। ডায়েরী খুলতেই সুবিনয়ের চক্ষু চড়কগাছ।  উপন্যাসের জন্য লেখা দেড়শো পাতা লেখা গায়েব৷ পাতা গায়েব নয়, শুধু লেখা গায়েব। অথচ প্রথম পাতায় নিজের নাম দেখে বুঝতে অসুবিধে হয়না এ ডায়েরী সে ডায়েরীই।

তার বদলে পড়ে রয়েছে বিটকেল দু'লাইন। নিজের জঘন্য হাতের লেখা নিয়ে সুবিনয়বাবুর লজ্জার সীমা নেই৷ কিন্তু এই দু'লাইন লেখা রয়েছে মুক্তোর মত হাতের লেখায়৷ 

"সরকারী চাকরী, সংসার, হাঁপানি আর গ্যাস্ট্রিকে সুবিনয় বন্দী থাকতে পারে। কিন্তু ট্রাঙ্কের তালায় বা ডায়েরীর পাতায় এ শর্মাকে আটকে রাখা যাবে না।

- ইতি মনু"।

Comments

chayan pahari said…
দারুন লাগলো। শুভ বিজয়া। চালিয়ে যাও ওস্তাদ।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু