Skip to main content

অরুর গান

- একবার গান গাইতে বসলে অরুর আর সময় জ্ঞান থাকেনা।

- তাই নাকি?

- একদম৷ এই দেখ। বিকেল পাঁচটা বেজে গেছে। সেই তিনটে নাগাদ গলা সাধতে বসেছে। 

- বটে।

- জানিস মন্টু, অরুর সুরে বড় মায়া আছে৷ অনেকটা ব্যথাও মিশে আছে অবিশ্যি। এমনিতে হাসিখুশি ছটফটে হলে কী হবে, ছেলেবয়সে মাকে হারানোর যন্ত্রণাটা কি সহজে ভোলা যায়? মিনুর না থাকার ব্যথাটা ও সর্বক্ষণ বয়ে বেড়ায়। হ্যাঁ রে মন্টু, তুই এলেই মিনু কতরকমের পদ রান্না করতে বসত..মনে আছে?

- বৌদির হাতের রান্না ভোলা অসম্ভব। 

- না হয় সে চলেই গেছে। মানছি, আমার হেঁসেল বিদ্যেয়  ডাল ডিমের অমলেটের বেশি রেঁধে খাওয়ানো সম্ভব নয়৷ তাই বলে দাদা ভাইপোর খবর নিতে মাঝেমধ্যে আসবি না? বছর দুয়েক পর তুই এ বাড়িতে এলি মন্টু।

- ফোন তো নিয়মিত করি রে দাদা।

- তা করিস। নাহ্, খোঁজখবর তুই রাখিস বটে। আমিও অরুকে তাই তো বলি, রক্তের টান ব্যাপারটা উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আর তাছাড়া..। ওহ্। আহা৷ এই যে।

- কী হল রে দাদা?

- অরু এ'বার একটা নজরুলগীতি ধরেছে৷ শুকনো পাতার নুপুর পায়ে৷ আহা। মিনু খুব গাইত। 

- দাদা, অরু গান করছে না।

- তুই শুনতে পারছিস না হয়ত। কিন্তু অরু গান গাইছে মন্টু৷ ওই যা না পাশের ঘরে, দেখ কেমন দরদ দিয়ে গাইছে।

- কিছু মনে করিসনা দাদা। তোর মাথাটা গেছে৷ আর আমার চিন্তা হচ্ছে যে তোর এই পাগলামো অরুকে আরও এফেক্ট করবে।

- কিন্তু অরু গান গাইতে বসে রে মন্টু৷ বিশ্বাস কর..।

- কারণ ওর মাথাটাও ঠিক ব্যালেন্সড নেই। আর সেই গোলমালকে তুই আরও প্রশ্রয় দিচ্ছিস।

- কী বলছিস তুই মন্টু!

- ঠিকই বলছি। অরু কথা বলতে পারেনা৷ বৌদির মারা যাওয়ার শকে হি লস্ট হিস স্পীচ। এই রিয়ালিটি থেকে পালিয়ে বেড়ালে ওর মঙ্গল হবে ভেবেছিস? বৌদির হারমোনিয়াম আঁকড়ে মাঝেমধ্যে সে পাগলামো শুরু করে আর তুই সেই পাগলামোকে তোল্লাই দিচ্ছিস এই সব করে৷ 

- না রে মন্টু। শুনতে পাই তো। বিশ্বাস কর। অনুভব করতে পারি ওর সুরের স্পর্শ। আমার চামড়ায় এসে ঠেকে সে সুর। অরু ওর মায়ের হারমোনিয়াম আঁকড়ে গান করার ভান করেনা, সে গান গায়। গতকাল সন্ধ্যেয় সে অতুলপ্রসাদ ধরেছিল। চোখে জলে এসে গেছিল মন্টু। বিশ্বাস কর।

- দ্যাখ দাদা, অরু এখন বোবা।

- মন্টু। তুই এ'বার আয়।

- দাদা! 

- আয়। আর নয়। 

**

অরুর ঘরের দরজার সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালেন বিমলেন্দু। সাদা নীল চাদরে ঢাকা বিছানার ওপর বসে অরু চোখ বুজে গাইছে, হারমোনিয়ামটা ছুঁয়ে আছে শুধু। 
শব্দ নেই, আছে শুধু সুরের শিহরণ।  

"আহা রে, খোকার মা নেই"। মিনুর ওপর মাঝেমধ্যেই বড় রাগ হয়। বদ্ধ কালাদের দুনিয়ায় অরুকে ফেলে চলে গেল সে। 

ততক্ষণে অরু রবীন্দ্রনাথে এসেছে। 

"আমার সুরের রসিক নেয়ে-
তারে ভোলাব গান গেয়ে..."।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু